জাম্বুরা ওজন কমাতে, বয়সের ছাপ দূর করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকরী।

ভিটামিন “সি” এর রাজা জাম্বুরা। শীতে কমলালেবু, বর্ষায় পেঁয়ারা আর বর্ষা কালের পর থেকে শীতের শুরুর আগ পর্যন্ত জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু। মোটামুটি সারা বছরের ভিটামিন “সি” যুক্ত খাবারের তালিকার হিসাব হয়ে গেল।

দেখতে কমলালেবুর মতো কিন্তু আকারে ও রঙের পার্থ্যক আছে। আকারে বেশ বড় এই ফলটি বাইরের রং সবুজ। সবুজ খোসা ছাড়ালেই সাদা খোসাতে ঢাকা গাঢ় গোলাপী রঙের রসে টইটুম্বুর দানাগুলি। তবে কিছু কিছু বাতাবি লেবুর ভিতরটা সাদা হয়।

জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু খেতে কিন্তু দারুন, হালকা টক-মিষ্টি। বলতে বলতে জিভে পানি চলে এলো। দুপুরের রোদে লবণ, কাঁচা মরিচ, লেবুর পাতা দিয়ে জাম্বুরা মাখা। সেইরকম মজার একটি খাবার।

জাম্বুরার ইংরেজি নাম Pomelo (pummelo বা pommelo) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrus maxima (সাইট্রাস ম্যাক্সিমা) বা Citrus grandis (সাইট্রাস গ্র্যান্ডিস)। জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু ছাড়া এর আরো কয়েকটি নাম রয়েছে যেমন- বাদামি লেবু, ছোলম, বড় লেবু ইত্যাদি।

ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর জনিত সমস্যায় জাম্বুরা খেলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। জাম্বুরাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায় এটি ক্যান্সারের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হার্টের রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

জাম্বুরাতে ভিটামিন “সি” বেশি থাকায় মুখের ভেতরে ঘা, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

জাম্বুরা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল কেন?

এই ফলটিতে সর্বোচ্চ ভিটামিন “সি” রয়েছে। এটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। যা ফ্রি র‌্যাডিকাল হাত থেকে কোষের ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে। জাম্বুরা পটাসিয়াম সহ অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজগুলিতেও সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

জাম্বুরার পুষ্টি উপাদান

জাম্বুরাতে বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। নিচে এই ফলটির কিছু দরকারী পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি:২৩১
  • প্রোটিন: ৫ গ্রাম
  • কার্বস: ৫৯ গ্রাম
  • ফাইবার: ৬ গ্রাম
  • রিবোফ্লাভিন: ১২.৬% (DV)
  • থায়ামাইন: ১৭.৩% (DV)
  • ভিটামিন “সি”: ৪১২% (DV)
  • কপার: ৩২% (DV)
  • পটাসিয়াম: ২৮% (DV)

জাম্বুরার স্বাস্থ্য উপকারিতা

নিচে জাম্বুরার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করে:

একটি জাম্বুরা বা বাতাবি লেবুতে ৬ গ্রাম ফাইবার থাকে। প্রতিদিন একজন ব্যক্তির কমপক্ষে ২৫ গ্রাম ফাইবার দরকার হয়। তাই ফলটি আপনার ফাইবারের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করতে পারে। জাম্বুরা দ্রবণীয় ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা মলের পরিমাণে বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্যতা রোধ করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও এর ফাইবার হাড়ের ঘনত্বের উন্নতি, দীর্ঘমেয়াদী ওজন রক্ষণাবেক্ষণ, অন্ত্র এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

ওজন কমাতে:

জাম্বুরাতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে। একটি খোসা ছাড়ানো জাম্বুরাতে ২৩০ ক্যালোরি থাকে। এছাড়া জাম্বুরাতে রয়েছে প্রোটিন এবং ফাইবার, উভয়ই আপনাকে পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে। সুতরাং, আপনার ক্যালোরি গ্রহণ সহজেই কমিয়ে আনার মাধ্যমে ওজন হ্রাস করতে পারেন।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:

জাম্বুরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ, এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির কারণে কোষের ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে। আমাদের দেহে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল উচ্চ স্তরের থাকলে তখন সেটা আমাদের স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হতে পারে। জাম্বুরাতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন “সি” রয়েছে।

এছাড়াও জাম্বুরাতে অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্য প্রধান হলো- নরিনজেনিন (naringenin) এবং নারিংইন (naringin)। এই ফলটিতে লাইকোপিন থাকে, একটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।

হার্টের জন্য ভালো:

জাম্বুরা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাম্বুরা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা পুরোপুরি শোষিত হতে বাধা দিয়ে রক্তের চর্বির মাত্রা হ্রাস করতে পারে।

বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে:

এর উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী থাকার কারণে, অকাল বার্ধক্যতা দূর করতে পারে। জাম্বুরায় থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন “সি” অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল প্রতিরোধ করে। এর ফলে ত্বকে বলিরেখা হতে দেয় না, বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সারের কোষের সাথে লড়াই করতে পারে:

জাম্বুরা ক্যান্সারের বিস্তার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জাম্বুরার খোসার রস টিউমার বৃদ্ধি দমন করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, জাম্বুরার অন্যতম প্রধান অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট নরিনজেনিন প্রোস্টেট এবং অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের কোষগুলি প্রতিহত করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি টেস্ট-টিউব স্টাডিতে দেখা গেছে ফুসফুসের ক্যান্সারের বিস্তারকে ধীরে করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

ভিটামিন “সি”-এর চমৎকার উৎস জাম্বুরা। একটি জাম্বুরাতে ৪১২% ভিটামিন “সি” রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে হাজার গুণ।

সতর্কতা:

জাম্বুরাতে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) রয়েছে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। খালি পেটে জাম্বুরা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। যেহেতু জাম্বুরা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে তাই গর্ভবতী মহিলাদের পরিমান মতো খেতে হবে। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: