উলটকম্বল ডায়াবেটিস, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও স্ত্রীরোগে দারুণ কার্যকর।

প্রাকৃতিক গাইনি ডাক্তার। অনেক প্রকারের স্ত্রীরোগে এটি ব্যবহৃত হয় বলে একে প্রাকৃতিক গাইনি ডাক্তার বলা হয়। বলুনতো, উদ্ভিদটির নাম কি? হ্যাঁ, অনেকেই  পেরেছেন। Malvaceae পরিবারের চিরসবুজ এই উদ্ভিদটির নাম উলটকম্বল বা ওলটকম্বল।

আমাদের দেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে উলটকম্বল বেশ পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়। বিভিন্ন বনজঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই এটি জন্মে। এর অনেক ঔষধি গুণ থাকায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ জন্য বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে।

ইংরেজি নাম: Devil’s Cotton. এর বৈজ্ঞানিক নাম: Abroma augustum. হিন্দিতে: Ulatkambal or Ulat kambal. বাংলা এবং ইউনানী: উলটকম্বল। Sanskrit Name: ULAT KAMBAL . Ayurvedic Name:ULAT KAMBAL.

উলটকম্বল স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি বহুবর্ষজীবী গাছ যা পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায়।

উলটকম্বল মূলত গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে পাওয়া যায়। এই গাছের পাতা ও কাণ্ডে নরম চুল থাকে যা স্পর্শ করলে চুলকানির কারণ হয়।

গাছ খুব বেশি মোটা হয় না। এর কাঠ নরম ও ধূসর বর্ণের হয়। গাছের ছালে পাটের আঁশের মতো আঁশ থাকে, এ জন্য ইংরেজিতে এই গাছকে বলা হয় – Devil’s Cotton। এর ফুল গাঢ় মেরুন রঙের হয়ে থাকে।

ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে ধূসর বর্ণের হয়, আর এটি পাঁচ কোনাবিশিষ্ট হয়। ফলের ভেতরে কম্বলের মতো লোমশ পাঁচটি প্রকোষ্ঠে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ সাজানো থাকে।

প্রাচীনকাল থেকেই আয়ূর্বেদিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে উলটকম্বল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইউনানির চেয়ে আয়ূর্বেদিক শাস্ত্রে এর ব্যবহার অনেক বেশি। উলটকম্বলের প্রধান ব্যবহার স্ত্রীরোগে।

উলটকম্বলের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

উলটকম্বলের শিকড় এবং মূলের বাকল গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি অংশ। উলটকম্বলের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো:

অনিয়মিত মাসিক:

উলটকম্বলের শিকড় বা ছাল শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এর মূলের ছাল মাসিক ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ডিম্বাশয়কে উদ্দীপিত করে এবং হরমোনকে প্রভাবিত করে যার দ্বারা এটি পিরিয়ড শুরু করতে সহায়তা করে।

পিরিয়ড শুরু বা নিয়মিত করার জন্য উলটকম্বলের-এর মূলের বাকলের গুঁড়া (1 থেকে 3 গ্রাম) এবং গোলমরিচ গুঁড়ো (125 থেকে 500 মিলিগ্রাম) আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।

গনোরিয়া রোগে:

Gonorrhea রোগটি নিসেরিয়া গনোরিয়া (Neisseria gonorrhoeae) জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট একটি যৌন সংক্রমণ। এই রোগে উলটকম্বল গাছের পাতা ভালো কাজ করে। গাছের পাতা ও ডাল চূর্ণ করে প্রতিদিন হাফ চা চামচ সেবন করুন।

জরায়ূর দুর্বলতা ও যোনিপ্রদাহ:

উলটকম্বলের মূলের বাকল শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। জরায়ুর দুর্বলতা ও যোনিপ্রদাহ কমাতে এটি ভালো কাজ করে। মূলের বাকলের গুঁড়োর সাথে নিম্নলিখিত উপাদানগুলোও মিশিয়ে সেবন করতে পারেন।

শুকনো বাকলের গুঁড়ো ১০ গ্রাম এর সাথে আশোকছাল-১০ গ্রাম, মুন্ডিফুল -৫ গ্রাম, মেহেদি পাতা-২ গ্রাম, আধা চূর্ণ করে প্রতিবার ২৫০ মি.লি. পানিতে জ্বাল দিয়ে পানির পরিমাণ অর্ধেক হলে ছেঁকে সকাল ও বিকেলে সেব্য। এভাবে এক মাস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো:

উলটকম্বল ডায়াবেটিস নিরাময়ে সহায়তা করে। শুকনো শিকড় (গুঁড়ো) এবং পাতার নির্যাস প্রায় আট সপ্তাহের জন্য নিয়মিত সরবরাহ করা উচিত। ভারতে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য এটি আয়ুর্বেদিক ওষুধে ব্যবহৃত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, devils cotton বা উলটকম্বলের পাতার নির্যাস টাইপ-2 ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য:

উলটকম্বলের পাতাগুলি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া:

উলটকম্বলের পাতার ডাঁটা নিন। তিন-চারটি ডাঁটা ছেঁচে ২৫০ মি.লি. পানিতে কচলিয়ে প্রয়োজনে সামান্য চিনি মিশিয়ে সকাল -বিকাল খালি পেটে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।

পুরুষদের শুক্রক্ষয় ও শুক্রস্বল্পতা:

তাজা পাতার ডাঁটা নিন। তিন-চারটি ডাঁটা ছেঁচে ২০০ মি.লি. পানিতে কচলিয়ে এককাপ দুধ ও সামান্য চিনি মিশিয়ে সকাল-বিকেল খালি পেটে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।

বার্ধক্যজনিত রোগ মূলের চূর্ণ ২০০ মি. গ্রাম চূর্ণের সাথে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানিসহ দিনে দুইবার সেব্য।

সতর্কতা:

গর্ভকালীন সময়ে ওলটকম্বল ব্যবহার নিরাপদ নয়। অধিক সেবনে এলার্জি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও মাথাঘোরা, বুক জ্বালাপোড়া, পেটে ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তস্রাব দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের এটি এড়ানো উচিত কারণ এটি রক্তপাত এবং বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ায়।

সূত্রঃ healthbenefitstimes.com, herbpathy, ayurtimes.com