শিশুর দাঁতের যত্নে করণীয়।

সন্তানের দাঁত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেন নাই এমন বাবা মা খুব কমই আছেন। প্রায়ই আমাদেরকে শিশুদের দুধ দাঁত নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। শিশুর মুখে প্রথম দাঁত আসে পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সে। নিচের মাড়ির সামনের দিকে দুটি দাঁত প্রথম ওঠে।

এরপর ধীরে ধীরে বাকি ১৮টি দুধ দাঁত অর্থাৎ মোট ২০টি দুধ দাঁত বা Deciduous teeth শিশুর মুখে আসে। তাছাড়া শিশুর স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশ সহ মানসিক বিকাশেও দুধদাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর তাই এসময় থেকেই শিশুদের দাঁতের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

এবার জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে আপনার ছোট্ট শিশুর দাঁতের যত্ন নেবেন-

দাঁত ব্রাশ করতে হবে:

শিশুকাল থেকেই দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মা সকালে ও রাতে শিশুর সামনেই দাঁত ব্রাশ করবেন। শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয়। তাই শিশুর হাতে দাঁত ওঠার শুরুতেই একটা ব্রাশ দেওয়া ভালো। একটু বড় হলে শিশুকে হাতে ধরিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা শিক্ষা দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখুন শিশুদের টুথ ব্রাশটি যেন নরম হয়।

যখন দাঁত উঠছে:

সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর মুখে দাঁত গজাতে শুরু করে। সে তখন যা কিছু সামনে পায় সেটাই কামড়াতে চায়। তাই এই সময় শিশুর হাতের কাছে বিষাক্ত বা ধারালো কোনো দ্রব্য, নোংরা জিনিস বা ওষুধপত্র রাখা উচিত নয়। এমন কিছু দেবেন না যা গিলে ফেললে তার গলায় আটকে যেতে পারে।

শিশুর খাদ্যাভ্যাস:

দাঁতের যত্নে শিশুর খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। চিনি, কৃত্রিম জুস, কোমল পানীয়, মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম, চিপস দাঁত ক্ষয় করে। এগুলোর পরিবর্তে তাজা মৌসুমী ফল, ফলের জুস, শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ-মাংস খাওয়াতে হবে শিশুকে।

দুধ দাঁত গুলোর যত্ন নিন:

শিশুর দুধ দাঁত কখনো কখনো ১১ বছর বয়স পর্যন্ত মুখে অবস্থান করে। অনেকের ধারণা এই দাঁত তো পড়ে যাবে, তাই এর যত্নের দরকার নেই। কিন্তু তা যদি সুস্থ ও সুরক্ষিত না থাকে পরবর্তী স্থায়ী দাঁত গুলোতেও সমস্যা হতে পারে।

দুধ দাঁতের শিকড়ে প্রদাহ অনেক দিন স্থায়ী থাকলে স্থায়ী দাঁতের ক্ষতি হয়। দুধদাঁত পড়া ও স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়ে শিশুর দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। নয়তো স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা বা অসমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

ফিডার কখনই নয়:

শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত কেবল মায়ের বুকের দুধই একমাত্র আদর্শ খাদ্য, এটা সবাই জানেন। অনেক মা শিশুকে ফিডারে কৌটার দুধ, কখনো স্বাদ বাড়ানোর জন্য চিনি মিশিয়ে দিয়ে থাকেন। এটা শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য তো খারাপই সেই সঙ্গে দাঁতের জন্যও ভীষণ খারাপ।

এতে নতুন দুধ দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া মায়ের বুকের দুধে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা শিশুর মজবুত দাঁত গড়তে সহায়ক।দাঁত না থাকলেও নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা উচিত।

বিভিন্ন ঋতুতে দাঁতের বিশেষ যত্ন:

বিভিন্ন ঋতুতে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর দাঁতে কোনো মাইক্রোস্কোপিক স্টোন জমা হয়েছে কিনা সেবিষয়ে অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। দাঁতে ব্যথা বা শিরশির অনুভূত হলে গরম পানিতে লবণ দিয়ে দিনে অন্তত ২-৩ বার কুলকুচা করতে হবে।

মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জনীয়:

অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, ক্যান্ডি, আঠালো বা দাঁতের গায়ে লেগে থাকে এমন খাবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়ানো যাবেনা এবং খাওয়ার পর তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

অনেকেই দাঁতে ব্যথা অনুভূত না হওয়া পর্যন্ত ডেন্টিস্টের কাছে যান না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দাঁতের রোগের কারণে চিকিৎসা করানো হয় কিন্তু পরবর্তীতে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করার ফলে অন্যস্থানে অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী দাঁত বা মাড়িতে পুনরায় ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত দু’বার দাঁত মাজার মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার রাখতে হবে।