শিশুর বুদ্ধির বিকাশে যেসব খাবারগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে শিশুরা।

আজ যারা শিশু তাদেরকে যদি আমরা সযত্নে, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশে বিকাশ লাভের সুযোগ করে দিই, তাহলে ভবিষতে তারা হবে এদেশের এক একজন আদর্শ, কর্মক্ষম, সুযোগ্য নাগরিক।

এজন্য শিশুর খাবারের প্রতি আমাদের অবশ্যই অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে।

সাধারণত পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় সার্বিক গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই বিশেষ করে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর খাদ্যযত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এ বিষয়টিও দেখতে হবে যে ছোট বাচ্চাদের পাকস্থলি ছোট থাকে তাই তাদের পেট অল্পতেই ভরে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অল্প পরিমাণ খাদ্য দিয়ে কীভাবে বেশি করে পুষ্টি দিতে পারেন।

শিশুর বুদ্ধি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ খাবার:

চলুন জেনে নেওয়া যাক, শিশুর বুদ্ধির বিকাশে কোন খাবারগুলো খেতে দেয়া বেশি দরকার-

ডিম

ডিমে এমন কিছু ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়।

প্রতিদিন শিশুদের একটি করে ডিম খাওয়ালে মেধা বিকাশে সহায়তা করবে।

গর্ভাবস্থা এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর মায়েদের জন্য কোলিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কোলিন প্রয়োজনীয়। ডিম কোলিনের একটি ভালো উৎস।

শাকসবজি

কিছু কিছু শাকসবজি রয়েছে যেমন বাঁধাকপি, পুদিনা, পালংশাক যেগুলো শিশুর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এসব শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

এছাড়া টমেটো মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন শিশুকে সালাদে নানাভাবে টমেটো খাওয়াতে চেষ্টা করুন।

গরুর দুধ

দুধ, দই ও পনির এতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যে শিশুর ডায়েটে চোখ বন্ধ করে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

দুধ “বি” ভিটামিনের একটি বিশেষ উৎস, বিশেষত ভিটামিন B-12 যা মস্তিষ্কের টিস্যু, নিউরোট্রান্সমিটার ও এনজাইমের গ্রোথের জন্য প্রয়োজনীয়।

এসব কিছু মস্তিষ্কের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে এসব খাবার ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ বলে এগুলো খেলে দাঁতহাড় মজবুত হবে তথা সুস্থ থাকবে।

শিশুদের বয়স অনুসারে বিভিন্ন মাত্রার ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হতে পারে। আপনার শিশুকে দুই থেকে তিন ধরনের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে চেষ্টা করুন।

বাদাম

বাদাম মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। পেস্ত বাদাম, কাজু বাদাম, চীনা বাদাম সহ সব ধরণের বাদামই শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়ক। বাদামে থাকা উপাদান মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়।

ফলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। সেই সাথে স্মৃতি শক্তির উন্নতি ঘটে।

আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গোটা শস্য

শিশুদের সকালের নাস্তায় গোটা শস্য রাখা উচিত। কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ এই খাবার মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে গ্লুকোজ ও এনার্জির যোগান দেয়।

এতে প্রচুর “বি” ভিটামিন থাকে, যা নার্ভাস সিস্টেমকে সুস্থ ও পুষ্ট রাখে। অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে, হোল গ্রেনের ব্রেকফাস্ট শর্ট-টার্ম মেমোরি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে।

অন্যদিকে সকালের নাশতা হিসেবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে এমন লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়নি।

হোলগ্রেনে উচ্চ পরিমাণে ফাইবারও রয়েছে, যা শরীরে গ্লুকোজ সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করে।

আপেল

আপেল একটি সুপারফুড যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

দিনে একটি আপেল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং আলঝাইমার রোগ এবং পার্কিনসন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।

শিমের বীজ

শিমের বীজ প্রকৃতির খাবার যা উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। এগুলো ওমেগা ৩ ফ্যাট বেশি থাকে, যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও কার্যক্রমের জন্য দরকারী।

মাছ

মাছের ভিটামিন ডি এবং ওমেগা-3 এর একটি ভাল উৎস যা মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয় এবং আপনার মানসিক রোগ এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

গবেষণাগুলি আরও প্রকাশ করে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাছ খান তাদের মস্তিষ্কের প্রধান কার্যকরী টিস্যু অনেক সক্রিয় থাকে।

মাছ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করবে যাতে এটি ফোকাসের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

কলা

কলা এমন একটি ফল, যাতে আছে প্রচুর পরিমাণে বলকারক কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।

সকালে নাস্তার কিছু সময় পর হালকা স্ন্যাক হিসেবে একটি কলা খেলে আপনার বাচ্চাটি সকালজুড়েই তার শক্তি ধরে রাখতে পারবে।

ফলে যে কোনো কাজে তার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতাও বাড়বে। তাই টুকিটাকি স্ন্যাক হিসেবে সন্তানের ব্যাগে চিপস বা বিস্কিটের প্যাকেটের বদলে একটি কলা দিয়ে দিন।

মধু

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতায় কোনো খাবার সম্ভবত মধুকে টেক্কা দিতে পারবে না। সব রোগের নিরাময় করতে মধু প্রয়োজন হয়।

এতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্যও মধু একই রকম প্রয়োজনীয়।

শুকনো ফল

যেসব ফল শুকিয়ে রাখা যায় সেগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এগুলো হল ব্যাপক শক্তির উৎস। তাই শিশুদের শুকনো ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।

তাহলে শিশুর মেধা বিকাশে অনেক প্রসারতা লাভ করবে। মায়েদের উচিত চকলেট খেতে না দিয়ে শুকনা ফল দেয়ার অভ্যাস করানো।

এতে শিশুর দাঁতও ভালো থাকবে।

ডার্ক চকোলেট

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে নিউরন তৈরি করে যা নতুন বিষয় মনে রাখতে সাহায্য করে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পাঁচ দিনের জন্য উচ্চ-ফ্ল্যাভানল যুক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া ফলে মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহকে উন্নত হয়।

বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ডার্ক চকলেটে থাকা কোকো পাউডার জ্ঞানীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করতে পারে।

জাম

জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ক্ষতির হাত থেকে হার্ট ও মস্তিষ্ককে বাঁচায়। একই সঙ্গে হার্টে রক্ত সঞ্চালনও বাড়িয়ে দেয় এ ফলটি।

তাই শিশুকে প্রতিদিন ১-২টা করে কালোজাম খেতে দিতে চেষ্টা করুন।

রেফারেন্স: