ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি শারীরিক সমস্যা হয়?

ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া হার্ট এবং অন্যান্য পেশী সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ক্যালসিয়ামেরও প্রয়োজন।

যে শিশুরা শৈশবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পায় না তাদের উচ্চতায় খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না। হাইপোক্যালসেমিয়া, যা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রোগ নামেও পরিচিত, যখন রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকে।

মানবদেহে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়ামের অভাবে দেখা দিতে পারে জটিল সব রোগ। আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে আমাদের শরীরের হাড়ে ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়াম থাকে এবং কিছু থাকে আমাদের দাঁতে। তাই আমাদের হাড় মজবুতভাবে গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার প্রয়োজন।

শিশু এবং কিশোরদের জন্য, প্রতিদিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন তা নিচে দেওয়া হলো –

  • ৯-১৮ বছরের শিশুদের জন্য ১,৩০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন
  • ৪-৮ বছরের শিশুদের জন্য ১,০০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন
  • ১-৩ বছরের শিশুদের জন্য ৭০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন
  • ৭-১২ মাস বয়সের শিশুদের জন্য ২৬০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন
  • ০-৬ মাস বয়সের শিশুদের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন-

  • ৭১ বছর বয়সি মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,২০০ মিলিগ্রাম
  • ৫১-৭০ বছর বয়সি মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,২০০ মিলিগ্রাম
  • ৩১-৫০ বছর বয়সি মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,০০০ মিলিগ্রাম
  • ১৯-৩০ বছর বয়সি মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,০০০ মিলিগ্রাম
  • ৭১ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,২০০ মিলিগ্রাম
  • ৫১-৭০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,০০০ মিলিগ্রাম
  • ৩১-৫০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,০০০ মিলিগ্রাম
  • ১৯-৩০ বছর বয়সি পুরুষদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন ১,০০০ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি শারীরিক সমস্যা হয়

ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলো-

অস্টিওপোরোসিস রোগ হয়:

ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওপোরোসিস রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের ফলে হাড় নরম এবং দুর্বল হয়ে। হাড় ক্যালসিয়াম সঞ্চয় করে, কিন্তু হাড় শক্তিশালী থাকার জন্য বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। সময়ের সাথে সাথে ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব হ্রাস পায় যার ফলে হাড়গুলি পাতলা হয়ে যায় এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

হাড়ে ফ্র্যাকচার:

মানবদেহে ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়ে থাকে। যাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব আছে তারা  হাড়ের ফ্র্যাকচারের সমস্যায় ভোগেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বয়ঃসন্ধির সময় অবশ্যই সবার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

হাড় ক্ষয় রোগ:

আমাদের ক্যালসিয়ামের অভাবে প্রবীণ বয়সে হাড় ক্ষয় রোগ হতে পারে। এছাড়া বংশ পরমপরায়ও এই রোগ হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাব, ভিটামিন ডিয়ের অভাব এবং মদ্যপান ও ধূমপানের জন্য এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই রোগ প্রতিকারের জন্য চিকিৎসকরা সাধারণত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হাড়ের গঠন দুর্বল হওয়া:

মানবদেহে ক্যালসিয়াম বেশির ভাগ কাজে লাগে হাড়ের গঠনে এবং শক্তি বর্ধনে। যদি আমাদের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না থাকে তাহলে আমাদের হাড়ের গঠন দুর্বল হয়ে যায় এবং শক্তি কমে যায়।

পেশীর সমস্যা:

ক্যালসিয়ামের অভাবে পেশী ব্যথা, খিঁচুনি এবং হাঁটা চলা করার সময় উরুতে ব্যথা হয়। পাশাপাশি মুখের চারপাশে অসাড়তা অনুভব হতে পারে।

নখ এবং ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়:

আমরা সবাই মনে করি ক্যালসিয়ামের অভাব মানেই হাড়ের সমস্যা। কিন্তু ক্যালসিয়ামের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে নখ ভেঙ্গে যেতে পারে। হাত পায়ের নখ ভেঙ্গে যাচ্ছে, ত্বক শুকিয়ে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী ক্যালসিয়ামের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, নখ শুকনো বা ভঙ্গুর হয়।

দাঁতের সমস্যা হয়:

যখন শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়, তখন দাঁতের সমস্যা হতে পারে। যেমন দাঁতের ক্ষয়, দাঁত ভেঙে যাওয়া, মাড়ির সমস্যা, দাঁতের শিকড় দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

রেফারেন্স: