বোকা কুমির ও শিয়াল পন্ডিত।

সে অনেক কাল আগের কথা। এক নদীতে বাস করতো এক কুমির। তার ছিল সাতটি ছানা। কুমির ভাবলো তার ছানা গুলোকে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এজন্য ওদের কে পাঠশালায় পাঠানো দরকার। নদীর পাড়ে ঝোঁপ ঝাঁড়ের মধ্যে থাকতো এক শেয়াল।

কুমির চিন্তা করে দেখলো যে এই এলাকার মধ্যে শিয়াল পন্ডিতই নামকরা একজন শিক্ষক। প্রথমে তার কাছে ছানাগুলো পাঠােল কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন খুব ভোরে মা কুমির তার সাতটি ছানা নিয়ে শিয়াল পন্ডিতের গর্তে হাজির হলো।

kumir chana

বলল, পন্ডিত সাহেব আমার ছানা গুলোকে আপনি ভালো করে পড়াশোনা শেখাবেন যাতে ওরা শিক্ষিত হতে পারে। শিয়াল পন্ডিততো মহাখুশি।

হেসে হেসে বলল, অবশ্যই অবশ্যই। আমি আপনার ছানা গুলোকে খুব ভালো করে পড়াবো, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমার কাছে ওদের কে আপনি নিশ্চিন্তে রেখে যেতে পারেন। এই কথা শুনে কুমির খুশি হয়ে ছানা গুলোকে শিয়াল পন্ডিতের কাছে রেখে ধন্যবাদ দিতে দিতে চলে গেলো।

এদিকে পন্ডিত মহাশয় কুমির ছানা গুলোকে বললেন, বাচ্চারা আজ থেকে তোমাদের পড়া শুরু। আমার সাথে তোমরা পড়। শিয়াল পন্ডিত ছড়া কাটতে লাগলো।

তার সাথে বাচ্চারাও বলতে লাগলো। এভাবে সবাই এক সাথে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করলো।

তারপর শিয়াল পন্ডিত বললেন, বাচ্চারা আজকের মতো তোমাদের পড়া এই পর্যন্ত। ঠিক আছে।

কুমির ছানারা জবাব দিলো আজ্ঞে মহাশয়। অন্যদিকে শিয়াল পন্ডিত ভাবলো, এবার একটা ছানা দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলি। তারপর বাকি গুলো দিয়ে দূপুর এবং রাতের খাবার হয়ে যাবে।

চকচকে দাঁত এবং লকলকে জিহ্বা বের করে শিয়াল পন্ডিত সব চাইতে মোটা এবং হৃষ্ট পুষ্ট ছানাটি কে বলল, সোনা তুমি আসো তো, তুমি পড়াশোনায় খুব ভালো।

kumir six

তোমাকে আমার চাইতে বড় পন্ডিতের কাছে নিয়ে যাবো। এই বলে কুমির ছানাটি কে অন্য একটা গর্তে নিয়ে শিয়াল পন্ডিত খেয়ে ফেললো। এই ভাবে এক এক করে ছয়টি ছানা সে খেয়ে ফেললো।

মা কুমিরটি ভাবলো আজ অনেক দিন হয়ে গেছে বাচ্চা গুলোকে দেখিনি। যাই ওদের পড়াশোনা কেমন চলছে একটু দেখে আসি। এই বলে কুমিরটি শিয়াল পন্ডিতের কাছে গেলো।

বলল, পন্ডিত মহাশয় আমার ছানা গুলোকে আমি এক নজর দেখতে এসেছি। ওদের কে ভালো করে পড়াচ্ছেন তো?

শিয়াল পন্ডিত গর্ত থেকে শুধু মুখ টা বের করে বলল, জি জি অবশ্যই। ওদের পড়াশো ভালোই চলছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এখন ছানা দেখানোর পালা। শিয়াল পন্ডিত ভাবলো, ছয়টি ছানাতো খেয়ে ফেলেছি এখন একটি দিয়ে ছয়টি ছানা দেখাতে হবে। না হলে কুমির আমাকে মেরে ফেলবে।

শিয়াল পন্ডিত ছানা দেখাতে লাগলো। গর্তের বাইরে থেকে মা কুমির যাতে শুধু মুখ দেখতে পায় সেভাবে একটি ছানা তোলে ধরে গুনতে লাগলো এক, দুই, তিন,
শিয়াল পন্ডিত গুনছে আর একটি ছানাকে নামিয়ে উঠিয়ে বার বার দেখাচ্ছে। সাত পর্যন্ত গুনে একটি ছানা দিয়ে মা কুমিরকে দেখিয়ে দিলো যে তার ছানারা সবাই এখানে আছে।

fox kumir baby

বোকা মা কুমির দেখলো কিন্তু শিয়াল পন্ডিতের চালাকি বুঝতে পারলো না। ঠিক আছে, ভালো করে পড়াবেন। এই বলে মা কুমিরটি বিদায় নিলো। শিয়াল পন্ডিত তার বুদ্ধি খাটিয়ে ধরা খাওয়া থেকে বেঁচে গেলো।

সবার শেষে একটি কুমির ছানা ছিলো একদিন তাকে ও শিয়াল পন্ডিত খেয়ে ফেললো। বেশ কিছু দিন পর মা কুমির তার ছানা গুলো আবার দেখতে আসলো। শিয়াল পন্ডিত টের পেয়ে কুমির আসার আগেই পালিয়ে গেলো।

কুমির গর্তের ভেতর গিয়ে দেখলো গর্তে কেউ নেই। শিয়াল পন্ডিত নেই, বাচ্চা গুলোও নেই। মা কুমিরটি তখন বুঝতে পারলো শিয়াল পন্ডিত তার বাচ্চা গুলো খেয়ে ফেলেছে। এতে সে খুব রাগ করলো এবং শিয়ালটি কে ধরার জন্য গর্তের কাছে মরার মতো শুয়ে রইলো।

কারণ শিয়াল কুমিরকে মরা ভেবে যখনই খেতে যাবে, তখনই খপ করে ওকে ধরে ফেলবে।

শিয়াল গর্তের কাছে ফিরে এসে দেখলো যে কুমিরটি শিয়ালের চালাকি বুঝতে পেরে তাকে ধরার জন্য মরার ভান করে শুয়ে আছে। শিয়াল কিন্তু খুব চালাক কুমির মৃত না জীবিত সেটা সে পরীক্ষা করবে। কুমিরের কিছুটা দূর থেকে শিয়াল বলল, “যেই মরা কান নাড়ে, আমি সেই মরা খাই”।

শিয়ালের কথা শোনে বোকা কুমির ভাবলো তাহলে কান নাড়া দিতে হবে। যেই মাত্র কান নাড়া দিলো, সেই মাত্র শিয়াল পন্ডিত দিলো এক দৌড়। এক দৌড়ে সে কুমিরের এলাকা থেকে অনেক দূরে চলে গেলো।

kumir boka

বোকা কুমির আর কি করবে, ধীরে ধীরে নদীর পানিতে নেমে পড়লো।