শীতকালীন শাক ও সবজির স্বাস্থ্য উপকারিতা।

শীতকাল মানেই নানান স্বাদ ও রঙের সবজির সমাহার। যেমন- ফুলকপি, পাতাকপি, ওলকপি, গাজর, লাল শাক, শিম ইত্যাদি আরও কতকি। যেন শীত আসলেই শাক ও সবজির মেলা বসে যায়।

নিচে শীতকালীন শাক ও সবজির ছবিসহ স্বাস্থ্য উপকারিতা দেওয়া হলো –

ফুলকপি (Cauliflower)

cauliflower post
ফুলকপি হল cruciferous (ক্রুসিফেরাস) উদ্ভিদ যা প্রাকৃতিকভাবে ফাইবার এবং বি-ভিটামিনে পূর্ণ। ফুলকপি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

এতে ওজন হ্রাস এবং হজমশক্তি, কোলাইন যা স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যান্য অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

ওলকপি (Kohlrabi)

Olkopi
শীতকালের সুস্বাধু ও মজাদার একটি সবজি ওলকপি। এছাড়াও ওলকপি থেকে ডায়েটারি ফাইবার এবং ফাইটোকেমিকেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ বিভিন্ন ক্যারোটিন পাওয়া যায়।

ওলকপি ভিটামিন “সি” এর একটি দুর্দান্ত উৎস। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা আমাদের শরীরকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

এছাড়া কোলাজেন সংশ্লেষণ এবং আয়রন শোষণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এটি পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস যা হার্টের যা হার্টের জন্য ভালো। ডায়েট্রি ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

শীতকালীন শিম (Lablab bean)

fresh beans final
সুস্বাদু, হালকা মিষ্টি স্বাদের শীতকালীন শিম (Lablab bean) খুবই পুষ্টিকর। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের অসাধারন গুণ আছে। এছাড়াও যারা চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য শিম বেশ উপকারী।

এই শিম কপারের ভালো উৎস। কপার আমাদের ব্রেইনের জন্য খুবই কার্যকরী। এটা আমাদের কাজের ফোকাস কে ঠিক রাখে এবং আমাদের মনকে চাঙ্গা রাখে।

শরীরে কপারের অভাব হলে ক্ষুধা কম লাগে, কাজের প্রতি ফোকাস থাকে না। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম প্রতিরোধে সহায়তা করে।

গাজর (carrot)

Carrots

শীতকালের অন্যতম আকর্ষণ হল গাজর। গাজর খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। গাজর অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। এতে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন “এ”, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।

তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়াও আছে আরও অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা। এতে উপস্থিত ভিটামিন “সি”, ভিটামিন বি6 রয়েছে।

এছাড়া আলফা ক্যারোটিন আর Lutein এগুলো সবই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান গুলো হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

মুলা (Radish)

Radish
অনেকেই মুলা খেতে চান না। কিন্তু মুলায় রয়েছে ভিটামিন “সি” জিংক পটাশিয়াম, ফসফরাস এর মতো পুষ্টি উপাদান। ফাইবারও রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে।

মুলার ভিটামিন “সি” দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বাঁধাকপি (cabbage)

greencabbage
অনেক পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ অনেক মরণঘাতী রোগের হাত থেকে দূরে থাকতে বাঁধাকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন “বি-6” এবং ফোলেট উভয়ই শরীরে শক্তি এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়াসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।

বাঁধাকপির মধ্যে ভিটামিন “সি” বেশি থাকে, এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। লাল বাঁধাকপিতে এন্থোক্যানিনস (Anthocyanins) নামে শক্তিশালী যৌগিক থাকে। এন্থোক্যানিনস (Anthocyanins) বাধাঁকপিকে বেগুনি রঙ দেয়।

এন্থোক্যানিনস (Anthocyanins) হল উদ্ভিদ রঙ্গক যা ফ্ল্যাভোনয়েড পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, রঙ্গক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কম।

৯৩,৬০০ জন মহিলার উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, এন্থোক্যানিনস সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কম ছিল।

বীট (beet)


বীট হলো একটি মিষ্টি মূলজাতীয় সবজি। বীট আইরনের চমৎকার উৎস, উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও Dementia অর্থাৎ স্মৃতিভ্র্রশ বা বুদ্ধিবৈকল্য দূর করে। বীট হলো নাইট্রেটের দারুন উৎস। নাইট্রেটস এমন যৌগ যা দেহে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়।

নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীগুলি খুলে দেয় যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।

পালংশাক (Spinach)

spinach for strock
ভিটামিন K-তে এতটা সমৃদ্ধ শাক দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া কঠিন বা নেই বললেই চলে। এতে বিদ্যমান ১০টিরও বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

এছাড়া পালংশাকে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি” এবং ফোলেটের পাশাপাশি ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন বি-2 এর একটি ভাল উৎস।

পালংশাকে ২১% আইরন রয়েছে যা লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

টমেটো

Tomatoes
টমেটো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লাইকোপিনের অন্যতম উৎস, যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস সহ অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত।

এছাড়াও টমেটো ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন কে এর দুর্দান্ত উৎস। টমেটোতে বিদ্যমান ” লাইকোপেন ” এর কথা। লাইকোপেন হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

একটি স্বতন্ত্র ফাইটোকেমিক্যাল কম্পাউন্ড – যেটা শুধুমাত্র টমেটোতে বেশি পরিমানে পাওয়া যায় এবং এটা খুবই কার্যকারী একটি উপাদান।

টমেটো প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ফুসফুস, স্টোমাক, প্যানক্রিয়াস , কোলন , রেকটাম, ওরাল ক্যাভিটি, breast, এবং cervix ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।

টমেটোতে ভিটামিন “C ” প্রচুর পরিমানে রয়েছে। ভিটামিন “C ” কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। collagen- ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে।

মটরশুঁটি (green peas)

Peas
মটরশুঁটি আমিষের ভাল উত্‍স। এতে কার্বোহাইড্রেট, অল্প ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, ফসফরাস, ভিটামিন “কে” আছে। এতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক, তাই হজমে সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মটরশুঁটি খুব ভালো। এই সবজিটি প্রোটিনের খুবই ভালো একটি উৎস হল। প্রোটিন আমাদের শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।

সরিষা শাক

Mustard greens
সরিষা শাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন”বি”, ম্যাগনেসিয়াম এবং থায়ামিন, ফোলেট এবং ভিটামিন “বি”৩ থাকে। সরিষা শাক ফ্লাভোনয়েডস, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন এবং ভিটামিন “সি” এবং” ই” এর উৎস। তাই ডায়েটে সরিষা শাক রাখলে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এছাড়া সরিষার শাক ভিটামিন “কে” এর ভালো উৎস। প্রতি কাপে ১২০% (DV ) সরবরাহ করে। রক্ত জমাট বাঁধতে ভিটামিন ‘কে’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সরিষা শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলির মধ্যে লুটেইন এবং জেক্সানথিন রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

পেঁয়াজ কলি (Spring onion)

spring onion

পেঁয়াজ কলি ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস এবং ভিটামিন এ এর খুব ভাল উৎস। এছাড়া আঁশ, মিনারেলস ও অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।

এক কাপ কাটা পেঁয়াজের কলিতে আপনার পুরো দিনটির জন্য প্রয়োজনীয় ১০% ফাইবার থাকে।

প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে, আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।

লালশাক

lalshak
৩০ বছর বয়সের পর থেকে হাড়ের ভাঙন আটকানোর পাশাপাশি একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আয়রন থাকার কারণে লালশাক রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। এটা ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং মাঙ্গানিস এর চমৎকার উৎস।

ঘিকাঞ্চন শাক

shak
শীতের শাক সবজির মধ্যে কারো কারো কাছে প্রধান আকর্ষণ হলো ঘিকাঞ্চন শাক বা সাদা শাক। যদিও সারা বছরই পাওয়া যায়।

তারপরও শীতকালে এই শাকের যেন আলাদা একটা ঘ্রান থাকে। ঘিকাঞ্চন শাক শাক চোখের জন্য খুবই উপকারী। কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করে পাশাপাশি হার্ট সুস্থ্য রাখে।

সরিষা শাক (mustard greens)

Mustard greens

সরিষা শাক ফ্লাভোনয়েডস, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন এবং ভিটামিন “সি” এবং” ই” এর উৎস। তাই ডায়েটে সরিষা শাক রাখলে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সরিষার শাক ভিটামিন “কে” এর ভালো উৎস। প্রতি কাপে ১২০% (DV ) সরবরাহ করে। রক্ত জমাট বাঁধতে ভিটামিন ‘কে’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সরিষা শাক প্রতিদিন আমাদের শরীরে যতটা ভিটামিন “সি” প্রয়োজন তার এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি পূরণ করতে পারে। ভিটামিন “সি” রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন।