পেঁয়াজ কলি শীতজনিত সর্দি-কাশি, ডায়াবেটিস কমাতে ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

শীতকাল মানেই লোভনীয় ও ইউনিক স্বাদ এবং বাহারি রঙের সবজির সমাহার। এসময় অনেক রকম পুষ্টিকর সবজির ভিড়ে একটি পরিচিত সবজি হলো পেঁয়াজ কলি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সবজি খেতেও ভীষণ সুস্বাদু। পেঁয়াজ কলিতে ঔষধি গুণও আছে।

পেঁয়াজ কলিতে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা পাকস্থলি, অন্ত্র এবং মূত্র প্রদাহ রোধে কাজ করে। সাধারণ সর্দি এবং দেহের দুর্গন্ধ রোধে পেঁয়াজ কলি অনেক উপকারী। ক্ষুধা বাড়ায় ও রক্তচলাচলে গতি বাড়ায়।

চীনা খাবারের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ sring onion বা পেঁয়াজ কলি – ৫০০০ বছর আগে থেকে চীনে চাষ করা হতো।

পেঁয়াজ কলি বা সবুজ পেঁয়াজ ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস এবং ভিটামিন এ এর খুব ভাল উৎস। এছাড়া আঁশ, মিনারেলস ও অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।

গাঢ় সবুজ রঙের এই সবজি ইংরেজিতে Spring onion, Scallion, Green onion, Onion sprouts ইত্যাদি নামে পরিচিত।

শীতের বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজের কালিও বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটা রান্না এবং কাঁচা দুইভাবেই খাওয়া হয়। পেঁয়াজের এই Bulb বা কন্দ নলাকার এবং ভেতরটা কিছুটা ফাঁপা।

পেঁয়াজের কলির স্বাস্থ্য উপকারিতা:

পেঁয়াজ কলিতে বেদনা উপশমকারী উপাদান থাকায় এটি দ্রুত মাথা, মাংসপেশি এবং হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। অ্যান্টি-পাইরোটিক উপাদান থাকায় খাবারে পেঁয়াজ কলি ব্যবহার করলে বা পেঁয়াজ কলির স্যুপ খেলে জ্বর দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ:

এক কাপ কাটা পেঁয়াজের কলিতে আপনার পুরো দিনটির জন্য প্রয়োজনীয় ১০% ফাইবার থাকে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আপনাকে পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করে, আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।

শীতজনিত সর্দি-কাশি ও ফ্লু কমায়:

মিষ্টি স্বাদের পেঁয়াজের কলি কাঁচা বা হালকা ভাজি করে বা মাছের ঝোলের সাথে রান্না করে খেতে পারেন।

গরম ভাতে গরম গরম পেঁয়াজের কলি ভাজি আপনার শরীরের অভ্যন্তরে গরম আভা সরবরাহ করবে যেটি বিভিন্ন ধরনের ফ্লু, সর্দি সারাতে দারুন উপকারী।

এটা সর্দি কমাতে এবং শীতজনিত ঠাণ্ডা সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস কমায়:

Allium সবজিগুলোর একটা বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। কি সেই বৈশিষ্ট্য? সেই বৈশিষ্ট্য হলো সালফারের উপস্থিতি।

পেঁয়াজ কলিতে থাকা সালফার শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপকারী।

সংক্রমণ রোধ করে:

পেঁয়াজ, রসুনের নির্যাস দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাসকে হত্যা করতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ:

পেঁয়াজ গোষ্ঠীর শাকসবজি ফাইটোনিট্রিয়েন্টসযুক্ত, সাথে কিছু রাসায়নিক যেগুলি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট নামে পরিচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আপনার শরীরকে রক্ষা করে।

ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং পলিফেনলগুলির মতো পেঁয়াজ কলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ফ্রি র‌্যাডিক্যাল প্রতিহত করে এবং ক্যান্সার, প্রদাহ এবং বয়সজনিত রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।

হজম শক্তি বাড়ায়:

রান্নায় স্বাদ বাড়াতে পেঁয়াজের কালি’র জুড়ি নেই। এতে প্রচুর পরিমানে আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে।

চোখের জন্য ভালো:

এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ- থাকে যা চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। সালাদ তৈরির সময় গাজর আর শসার সঙ্গে পেয়াজের কলি মিশিয়ে দিলে সালাদের স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনি শরীর দারুন পুষ্টিও পাবে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্র: এনডিটিভি, deccanherald.com, timesofindia