কোন খাবার গুলি আয়ু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এই সুন্দর পৃথিবীতে বেশি দিন বেঁচে থাকতে কেনা চাই। একটা কথা আছে জন্মিলেই মরিতে হবে। আমাদের একদিন না একদিন মারা যেতে হবে। এটাই বাস্তবতা এটাই জীবন। তবে মানুষের গড় আয়ু এখন আগের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) এর মতে, মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। তার মানে এই না আমরা ৭২ বছরে মারা যাব। অনেকে ৫০ বছরে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, কেউ হার্টের রোগে মারা যাচ্ছে আবার কেউ মারা যাচ্ছে ক্যান্সারে বা উচ্চ রক্তচাপে। এসবের পিছনে রয়েছে আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস।

উন্নত জীবন ও বিজ্ঞানের বদৌলতে আমাদের আয়ু বাড়ছে। কারণ মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছে। বিজ্ঞানের অবদানে আমরা পাচ্ছি উন্নত চিকিৎসা। আমরা অনেক বেশি খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হচ্ছি।

শুধু মাত্র একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আমাদের আয়ু বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের আয়ু (longer life) বৃদ্ধি করতে পারে এরকম কয়েকটি খাবার নিচে দেওয়া হলো –

অলিভ অয়েল:

জলপাই তেল পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর চর্বি। গবেষণায় প্রমাণিত যে এটি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। অলিভ অয়েল রক্তচাপ হ্রাস করে, হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজ করতে পারে।

ডার্ক চকলেট:

সকলের প্রিয় ডার্ক চকোলেটে খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। ডার্ক চকোলেট বেরি, ব্লুবেরি এবং ক্র্যানবেরি এর চেয়েও বেশি শক্তিশালী। গবেষণা পরামর্শ দেয় এটি রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে এবং ধমনী কার্যকারিতা ভালো করতে পারে।

রসুন:

প্রথমেই বলতে চাই, রসুনে থাকা যৌগ ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রসুনে থাকা ডায়ালিল সালফাইড আমাদের দেহের ক্ষতিকারক কার্সিনোজেন ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। এই কার্সিনোজেন ধ্বংস না হলে আমরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারি।

গবেষণা অনুসারে, যারা নিয়মিত রসুন খান তাদের পেটে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গুণের জন্য আয়ু বৃদ্ধিতে রসুনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রীন টি:

গ্রিন টিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। গ্রিন টিতে বিশেষত পলিফেনল নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি, যা ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

ওমেগা-3 সমৃদ্ধ খাবার:

ওমেগা-3 সমৃদ্ধ যেকোনো খাবার বার্ধক্যতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। ওমেগা-3 হার্টের রোগ, প্রদাহ এবং অন্যান্য অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। গবেষণা গুলি থেকে জানা যায় যে, যারা ওমেগা-3 সমৃদ্ধ মাছ খেয়েছে তাদের মধ্যে বয়সের ছাপ বেশ ধীরে পরিলক্ষিত হয়েছে।

শাকসবজি:

শাকসবজি অত্যন্ত পুষ্টিকর সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম। এছাড়া শাকসবজিতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও রয়েছে যা হার্টের রোগ, চোখে ছানি পড়া এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড শাকসবজির ভিতরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বেশি থাকে।

এগুলি সূর্যের বিকিরণ এবং ফ্রি রাডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। বিটা ক্যারোটিনের সেরা সবজির মধ্যে কয়েকটি হল গাজর, মিষ্টি কুমড়া এবং মিষ্টি আলু। দীর্ঘ জীবনের জন্য সবুজ শাক সবজি খাওয়ার কোন বিকল্প নাই।

ডালিম:

ডালিম স্বাস্থ্যকর ফলগুলির মধ্যে একটি। ডালিমে যে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট আছে তার কার্যকারীতা গ্রীন টি এর থেকেও বেশি। ডালিম ব্যথা কমাতে, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভালো।

টমেটো:

টমেটো উচ্চ লাইকোপিন সমৃদ্ধ। লাইকোপিন হল এক ধরণের ক্যারোটিনয়েড যা হার্টের রোগ, স্ট্রোক এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যেসব মহিলারা উচ্চ লাইকোপিন এবং উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছিলেন ১৫ সপ্তাহ পরে চামড়ার কুঁচকানো ভাব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছিল। জলপাইয়ের তেলে টমেটো রান্না করে খেলে আমাদের শরীরে লাইকোপিন শোষণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

আমরা কেউ চিরকাল বেঁচে থাকব না, কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মধ্যে দিয়ে জীবনে আরও কিছু অতিরিক্ত বছর যুক্ত করতে পারি। তাই আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় উপরের খাবার গুলো রাখার চেষ্টা করতে পারি।