মিষ্টি আলু দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে, হজমে সহায়ক ও ব্রেইনের জন্য ভালো।

নাম আলু হলেও মিষ্টি আলুর সঙ্গে গোল আলুর অনেক পার্থক্য রয়েছে। মিষ্টি আলু খুব সহজেই খাওয়া যায়। সেদ্ধ করে বা তেলে ভেঁজে অথবা বিভিন্ন সবজি বা মাছের সাথে রান্না করেও খাওয়া যায়। আগুনে সেঁকে বা পুড়িয়ে খেতেও খুব মজা লাগে।

মিষ্টি আলু বিভিন্ন ধরণের আকার এবং রঙের হয়। যেমনঃ- সাদা, লাল, বেগুনী, হলুদ এবং গোলাপী। এটি ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। মিষ্টি আলু খোসা ছাড়া কিংবা খোসাসহ দুই ভাবেই খাওয়া যায়।

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো:

বিটাক্যারোটিন নামীয় এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর মিষ্টি আলু ভিটামিন A-এর চমৎকার উৎস হিসাবে কাজ করে বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।

আমেরিকা ও কানাডার কিছু কিছু অঞ্চলে মিষ্টি আলুকে ইয়ামস (yams) বলা হয় কিন্তু ইয়ামস, মিষ্টি আলু থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রজাতির। মধ্যে এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে মিষ্টি আলুর আদি নিবাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

হালকা এসিডিক মাটি এবং যে মাটির পি এইচ-এর (PH) মাত্রা ৫.০- ৬.৫০ এর মধ্যে সেই মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য ভালো। মিষ্টি আলুর বৈজ্ঞানিক নাম: Ipomoea batatas এবং ইংরেজিতে Sweet potato. মিষ্টি আলু Convolvulaceae পরিবারের Ipomoea গণের একটি লতানো বীরুৎ।

মিষ্টি আলুর পুষ্টি উপাদান

ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ এর একটি দুর্দান্ত উৎস মিষ্টি আলু। নিচে মিষ্টি আলুর কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি:১৮০
  • কার্বহাইড্রেট: ৪১.৪গ্রাম
  • প্রোটিন:৪ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম
  • ফাইবার:৬.৬ গ্রাম
  • ভিটামিন “এ”: ৭৯৬% (DV)
  • ভিটামিন “সি”: ৬৫% (DV)
  • ম্যাঙ্গানিজ: ৫০% (DV)
  • ভিটামিন বি-6: ২৯% (DV)
  • পটাসিয়াম:
  • পেন্টোথেনিক অ্যাসিড: ১৮% (DV)
  • কপার: ১৬% (DV)

মিষ্টি আলুর উপকারীতা

খাবারের তালিকাতে মিষ্টি আলু রাখার চেষ্টা করুন। পরিমিত খাবেন। খুব বেশি খেতে হবে এমন নয়। মিষ্টি আলুর স্বাস্থ্য সুবিধা নিচে আলোচনা করা হলো —

উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

‘সুপারফুড’ হিসাবে পরিচিত মিষ্টি আলুতে (বিশেষত কমলা এবং বেগুনি জাতগুলি) প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আমাদের দেহকে ফ্রি র‌্যাডিকালগুলি থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং বার্ধক্যজনিত দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণ। তাই উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মিষ্টি আলু খাওয়া প্রয়োজনীয়।

হজম প্রক্রিয়া সুস্থ্য রাখে

অত্যাধিক পরিমানে ফাইবার (আঁশ) থাকায় মিষ্টি আলু আমাদের অন্ত্রের জন্য ভালো। মিষ্টি আলুতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর রাখে। হজমের জন্য খুবই উপকারী। এটি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হ্রাস পায়।

দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে

প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং অ্যান্টোসায়ানিন রয়েছে মিষ্টি আলুতে। এই বিটা ক্যারোটিন এবং অ্যান্টোসায়ানিন আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে এবং চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।

মস্তিষ্কের জন্য ভালো

প্রাণীদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে মিষ্টি আলু মানসিক অবক্ষয় রোধের মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মিষ্টি আলু খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে

ফাইবার সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভূত হয়। ফলে বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে। নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি কমে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। মিনারেল ম্যাঙ্গানিজও পাওয়া যায় যেটা শরীরের বৃদ্ধি, গঠন ও মেটাবলিসম-এর জন্য দরকারী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

এক কাপ পরিমান মিষ্টি আলুতে দিনের চাহিদার প্রায় অর্ধেক ভিটামিন “সি” থাকে। ভিটামিন “সি” ও ভিটামিন “এ” প্রচুর পরিমানে থাকায় মিষ্টি আলু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: