পেঁয়াজু সুস্বাদু, মুখে রুচি আনে ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। পছন্দের তালিকায় সবার উপরে।

যেকোনো খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে পেঁয়াজের জুড়ি নেই। মাছ,মাংস, ভর্তা, ডিম ভাঁজি, আলু ভাঁজি, চানাচুর মাখা, মুড়ি মাখা থেকে সবার প্রিয় চটপটি ও ফুচকা এরকম শত খাবারে পেঁয়াজ ছাড়া ভাবাই যাই না। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পেঁয়াজের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে।

এবার মাংস বা অন্য কোনো প্রধান খাবারের সাথে নয়। এখন পেঁয়াজ হলো প্রধান আইটেম সাথে ডাল আর পেঁয়াজ। হ্যা বন্ধুরা, আজকে আমরা অতান্ত্য মুখরোচক ও সুস্বাদু পেঁয়াজুর উপকারীতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।

সারাদিনের রোজা শেষে ইফতারে সুস্বাদু ঠাণ্ডা শরবতের পাশাপাশি চাই মুখরোচক খাবার।এরই মধ্যে আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার হয়তো খেয়েছেন। তবে স্বাদে ভিন্নতা আনতে ইফতারে রাখতে পারেন মুখরোচক পিয়াজু।

গরম গরম পিয়াজু (piyaju) খেতে অনেক মজা। আমরা বিকেলের নাস্তা হিসেবে পিয়াজু, সিঙ্গারা, হালুয়া এই গুলো বেশি খেয়ে থাকি।

কিন্তু রোযার মাসে ইফতার রেসিপিতে সবার ঘরে ঘরে পিয়াজুর আইটেম থাকবেই। কম বেশি সবাই পিয়াজু বানাতে পারে, পেয়াজু বানানো খুবই সহজ। যে কোন ডাল দিয়ে পেয়াজু বানানো যায়।

পবিত্র রমজান মাসে ভাজাপোড়া ছাড়া ইফতার কল্পনাই করা যায় না। ইফতারে পেঁয়াজু, আলুর চপ, পেঁয়াজের পাকোড়া, সবজির পাকোড়া, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, বুন্দিয়া ছাড়াও আরও অনেক ভাজাপোড়া খাবার থাকে।

এই রমজানে ইফতারের টেবিলে সবচাইতে জনপ্রিয় খাবারটি নিঃসন্দেহে পিঁয়াজু।  তারচেয়ে বরং ঘরেই তৈরি করুন মচমচে সুস্বাদু পেঁয়াজু। আপনারা চলুন আর দেরি না করে দেখে নেই,কিভাবে এই মজাদার মসুর ডালের পেঁয়াজু রেসিপি,খুব সহজেই তৈরি করা যায়।

ইফতারিতে ছোলা মুড়ির সাথে মুচমুচে এই আইটেমটি না থাকলে যেন কোনোভাবেই চলেনা। দোকানের মতো করে পেঁয়াজু বানাতে অনেকে চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু দোকানের মতো এতো মুচমুচে হয় না।

পেঁয়াজুর প্রধান উপকরণ:পেঁয়াজ, ডাল ও তেল।

 পেঁয়াজুর উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

আপনি যদি পেঁয়াজু প্রেমিক হন তাহলে বাড়িতে পেঁয়াজু তৈরি করে খান। পেঁয়াজু বা পেঁয়াজের পাকোড়া সম্পর্কে আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য বেনিফিট, পুষ্টির তথ্য রয়েছে।

পেঁয়াজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি দুর্দান্ত উৎস। ২৫টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে পেঁয়াজে। পেঁয়াজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি রোধ করতে পারে।

পেঁয়াজ ফাইবার এবং প্রিবায়োটিক (prebiotics) সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রিবায়োটিক হল ননডাইজেস্টেবল(nondigestible) ফাইবার যা উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অন্ত্র ভেঙে যায়। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, আমাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

পেঁয়াজে দুটি ফাইটোকেমিক্যাল যৌগ (অ্যালিয়াম এবং অ্যালিল ডিসলফাইড) রয়েছে যা, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ নিরাময় করে।

 

এটিতে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এটি নির্দিষ্ট টিউমারগুলির বিকাশ এবং বিস্তারকে প্রতিরোধ এবং গতি কমিয়ে দিতে পারে।

চালের ময়দায় ক্যালসিয়াম ও দস্তা জাতীয় পুষ্টি থাকে। এটি 100% আঠালো মুক্ত।

ছোলা ময়দায় বা বেসনে উচ্চ প্রোটিন এবং ফাইবার থাকে যা এটি ওজন হ্রাসের জন্য আদর্শ করে তোলে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং ভিটামিন রয়েছে যা মহিলাদের গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর। এটিতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ রক্তাল্পতা রোধ করতে এবং বিপাক বাড়াতে সহায়তা করে।

উপকরণ:

ডাল- ১ কাপ (মটর/মসুর/খেসারি/ছোলা)

পেঁয়াজ কুঁচি- ১ কাপ

কাঁচা মরিচ- মিহি কুঁচি ২ টেবিল চামচ বা ঝাল অনুযায়ী

আদা বাটা- ১ ১/২ চা চামচ

রসুন বাটা- ১ ১/২ চা চামচ

লবণ- পরিমাণ মতো

হলুদ গুঁড়া- ১/২ চা চামচ

জিরা গুঁড়া- ১ ১/২ চা চামচ

ধনিয়া পাতা কুঁচি- ১/৪ কাপ

তেল- পরিমাণ মতো (পেঁয়াজু ভাঁজার জন্য)

প্রণালি:

১। ডাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালভাবে ধুয়ে পানি পুরোপুরি ঝরিয়ে বেটে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মসুর/খেসারি ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখার দরকার নেই। কারণ এই ডাল চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলেই হবে। তবে মটর/ছোলার ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।

২। একটি পাত্রে পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, লবণ, হলুদ, জিরা এবং ধনিয়া পাতা হাত দিয়ে মেখে নিতে হবে।

৩। এবার এই মিশ্রণের সাথে বেটে রাখা ডাল মিশিয়ে নিতে হবে।

৪। এখন আলাদা একটি পাত্রে তেল গরম গরম করতে দিতে হবে। জ্বাল মাঝারী রাখতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে ডালের মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে হাতের সাহায্যে পাতলা করে তেলে দিতে হবে।

৫। পেঁয়াজু লাল লাল করে ভেঁজে নিতে হবে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। যারা স্থূলত্ব বা অতিরিক্ত মোটা, রক্তে কলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের খাওয়াই ভালো বা খেলে একেবারে শরীরের অবস্থা বুঝে পরিমিত।