জোয়ান পানি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন কমায় ও সর্দি কাশি থেকে আরাম দেয়।

আজওয়াইনকে (Ajwain) বা জোয়ানকে বলা হয় এশীয় মহাদেশের অধিবাসী। অনেকেই আমরা খাওয়ার পরে জোয়ান মুখে দিয়ে থাকি৷ কারণ মুখশুদ্ধি হিসেবে জোয়ানের প্রচলন রয়েছে৷

জোয়ান অ্যাপিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বর্ষজীবি উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা ধনে গাছের মতো। এটি জৈন, জোয়ান বা আজওয়াইন গাছ নামেও পরিচিত। এর ফুল দেখতে সাদা বর্ণ হয়। সাধারণত জোয়ান মসলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। জোয়ান খাবারের গন্ধ বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন প্রকার জটিল অসুখ নিরাময় ও ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।

আজওয়াইন বা ক্যারাম বীজ মানবজাতির জন্য সর্বকালের সেরা জিনিস, বিশেষত আমাদের মধ্যে যারা নিয়মিতভাবে হজমের সমস্যায় ভোগেন। শুধু পেট খারাপ ঠিক করা ছাড়াও অনেক উপকারিতা রয়েছে।।

অজওয়াইন বীজ বা জোয়ান প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলি কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়, এছাড়া পানি বা চায়ের সাথেও দিয়ে খাওয়া যায়। জোয়ান ইংরেজিতে: Carom Seeds (Ajwain) এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Trachyspermum ammi.

প্রতিদিন জোয়ান পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এটা ঠিক কী কী উপকারে আসে কিংবা তার সুফল কেমন করে পাওয়া যায়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, জোয়ান পানি পান করার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

জোয়ান পানি সব থেকে বড়ো গুণ হল হজমে দারুন ভাবে সাহায্য করে। এটি বদহজম এবং পেট ফাঁপা সারাতে কার্যকরী। এটি পেট পরিষ্কারক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অম্লতা কমাতে এটি ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

ওজন কমানোর জন্য:

প্রতিদিন খালি পেটে খাওয়া জোয়ান পানি শরীরের চর্বি দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে যে ১ চামচ জোয়ান খেতে পারেন তার ওজন কমবে।

সর্দি কাশি থেকে আরাম দেয়:

সর্দি কাশিতেও জোয়ান বেশ উপকারী। সর্দি-কাশির জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া প্রতিকার হল এক গ্লাস জোয়ান পানি খাওয়া। এতে কয়েকটি তুলসী পাতা যোগ করে নিলে কার্যকরীতা আরও বেরে যাবে। এছাড়া দারুচিনি সাথে জোয়ান পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়া অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক প্রতিকার। ঠান্ডা জ্বর কমানোর জন্য।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ঠান্ডা লেগে জ্বর এলে ছোট একটা কাপড়ে যদি কিছুটা জোয়ান বেঁধে মাঝে মাঝে গন্ধ নেওয়া যায় তাহলে উপকার হয়।

কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়:

জোয়ান পানি বদহজমের কারণে সৃষ্ট অন্ত্রের ব্যথা নিরাময় করে এবং লিভার এবং কিডনির ত্রুটি থেকেও মুক্তি পায়।

ব্যথা থেকে আরাম দেয়:

হাঁটু ও কোমরের ব্যথায় কার্যকরী জোয়ান। জোয়ানের তেল ব্যথার জায়গাতে মালিশ করলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায় কারণ জোয়ান বীজে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে। এছাড়া জোয়ান বীজ দাঁতের ব্যথা সারাতে প্রমাণিত হয়েছে। দাঁতে ব্যথা হলে গরম জলে একটু জোয়ান আর একটু নুন দিয়ে গারগেল করলে ব্যথা কমে যাবে।

রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে:

উচ্চ রক্তচাপ হল একটি সাধারণ অবস্থা যা হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যেগুলো রক্ত চাপের মাত্রা কমাতে পারে। তারমধ্যে একটি হল জোয়ান।

কিছু গবেষণা নির্দেশ করে যে জোয়ানে একটি উপাদান রয়েছে যা রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। তাই যাদের রক্তচাপ এর সমস্যা আছে তারা জোয়ান পানি পান করতে পারেন।

ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সাথে লড়াই করে:

জোয়ান পানিতে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এতে থাইমল (thymol) এবং কারভ্যাক্রোল (carvacrol) নামে দুটি যৌগ রয়েছে যা ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাকের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে।

শরীরকে পরিষ্কার রাখে:

এই পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে শরীরকে পরিষ্কার রাখে। এতে শরীরের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি যাদের অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের সমস্যা আছে এবং ছাড়তে পারছেন না, তারা রোজ জোয়ান খান। তাদের এই অভ্যাস থেকে মুক্তি দিতেও জোয়ান সাহায্য করে।

জোয়ান পানি তৈরির নিয়ম
শুধু ২ চামচ শুকনো ভাজা জোয়ান পানিতে দিয়ে তিন থেকে চার মিনিট ফুটান। পানির রং সোনালি হয়ে এলে চুলা বন্ধ করে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। একটি বোতলা সংরক্ষণ করে সারাদিন একটু পর পর পান করুন। এছাড়া ঠান্ডা পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।

জোয়ান কি নিরাপদ?

বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে ক্যারাম বীজ সেবন করা নিরাপদ। তবুও, গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য এটি নিরাপদ নয়। আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে জোয়ান খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। বেশি মাত্রায় জোয়ান খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব হতে পারে। এ কারণে এইগুলো অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।