হেলেঞ্চা শাক উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।

বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চেলের একটি অতি পরিচিত শাক হচ্ছে হেলেঞ্চা। এই শাকটি সাধারণত কাদা পানিতে জন্মায়। এই শাকের স্বাদ কিছুটা তিতা। হেলেঞ্চা শাক ভাজি করে এবং এর ঝোল রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া ডাল মিশিয়ে বড়া বানিয়েও এটি খাওয়া হয়। হেলেঞ্চাকে ভারতে কেউ কেউ হিমমোচিকাও বলে।

বাংলাদেশের খালবিলে, নদনদী, পুকুরে সর্বত্র জন্মে। তবে নোনাপানিতে হেলেঞ্চা হয় না। হেলেঞ্চোর ইংরেজি নাম: Common Enhydra, Buffalo spinach, Helancha এবং বৈজ্ঞানিক নাম Enhydra fluctuans যা Asteraceae পরিবারভুক্ত।

হেলেঞ্চা, হিঞ্চা, হিঞ্চে, হিংচা, হাড়হাচ, হেলচী, হিমলোচিকা (সংস্কৃত ভাষায়), তিতির ডগা, তিতির শাক, তিতির ডাটা, তিতা ডাটা এক ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

এর বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি দেখতে কিছুটা মালঞ্চ শাকের মত হলেও এর পাতার কিনারা খাঁজকাটা এবং স্বাদ খানিকটা তেত। হেলেঞ্চা কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, স্নায়ুরোগ, বাতের ব্যথা, ঘামাচি, হাত-পা জ্বালা ইত্যাদি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, ব্যথানাশক, জীবাণুনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কবিরাজরা চর্মরোগ নিরাময়ে এই শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে।

মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। এছাড়া হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে। হেলেঞ্চাতে ২.৯ শতাংশ আমিষ, ০.২ শতাংশ চর্বি, ৫.৫ শতাংশ শর্করা, এবং ২.২ শতাংশ লবণ আছে। এছাড়া এতে ৬৩% ভিটামিন “এ”, ৭১% ভিটামিন “সি” এবং ৪১ মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৩৩০ মি.গ্রা. পটাশিয়াম আছে।

নিচে হেলেঞ্চা শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা দেওয়া হল-

ফাইবার উচ্চ:

হেলেঞ্চা দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ। ডায়েটে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার আমাদের ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং হার্টের রোগকে কমিয়ে দেয়। হেলেঞ্চাতে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি থাকে, উভয়ই ক্ষুধা কমাতে এবং ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ:

এই শাক ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ। এগুলি বিটা ক্যারোটিন, জেক্সানথিন এবং লুটিনের মতো ফ্ল্যাভোনয়েড পলিফেনলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতেও পূর্ণ যা ফ্রি র‌্যাডিকালগুলির কারণে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক স্তর সরবরাহ করে। স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং সঠিক দৃষ্টিশক্তির জন্যও ভিটামিন “এ” প্রয়োজন হয়।

জ্বালাপোড়া কমায়:

অনেকেই আছেন যাদের প্রায় সময় হাত, পা এবং চোখ জ্বালা করে। এক্ষেত্রে কিন্তু হেলেঞ্চা উদ্ভিদ দারূন উপকার করতে পারে। হেলেঞ্চা পাতার ২ চামচ পরিমাণ রস কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও রাতে খেলে জ্বালা-পোড়া ভাব কমে যায়। এছাড়াও গরমে ঘামাচি ও শীতকালে শীতকাঁটা হলে হেলেঞ্চা পাতা বেটে গায়ে মাখলে এ সমস্যা সেরে যায়।

ঘামাচি ও ফুসকুড়ি:

গায়ে কাঁটা বা ঘামাচি, প্রথমটি শীতে এবং দ্বিতীয়টি গরমকালে মানুষের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এ উভয়বিধ রোগের জন্য হেলেঞ্চা পাতা সামান্য পানি দিয়ে বেটে তার রস সারা শরীরে মাখলে খুব শিঘ্রই উপকার পাওয়া যায়।

জিভ পরিষ্কার রাখে:

অনেক সময় আমাদের জিব্বার উপর সাদা রঙের একটা স্তর পড়ে। এর ফলে আমাদের জিভ ভারী হয়ে আসে, খাবারের প্রতি রুচি কমে যায় এবং মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ সমস্যা দূর করতে হেলেঞ্চা পাতা বেশ কার্যকরী। এজন্য হেলেঞ্চা পাতার রস করে হালকা গরম করে দিনে দুই বেলা করে কয়েকদিন খেলে জিবের উপর থেকে এই সাদা স্তর একদম সরে যায়।

কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:

হেলেঞ্চা শাকের উপকারিতার কথা বলতে গেলে প্রথমে যে কথাটি বলতে হয় সেটি হলো এতে বিদ্যমান ফাইবার বা খাদ্যআঁশ। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য হেলেঞ্চা সবথেকে সেরা খাবার। পাইলস প্রতিরোধেও এটি বেশ সহায়ক।

খোস পাচঁড়া হলে:

খোস পাচঁড়া এবং ঘায়ের ক্ষত সারাতে হেলেঞ্চা প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। এজন্য হেলেঞ্চার কচি ডাঁটা এবং পাতা একসাথে রস করে খোস পাচড়ায় এবং ঘায়ে এই রস দিনে দুইবার করে নিয়মিত ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ক্ষত ভালো হয় যায়।

যকৃৎ দুর্বল হলে:

যকৃৎ অর্থাৎ লিভার দুর্বল হলে শরীরে নানা ধরনের রোগ দেয়া দেয়। সেক্ষেত্রে, ১০০ গ্রাম হেলেঞ্চা শাক ছোট ছোট করে কেটে, ১৫০ মিলিলিটার পানিতে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে এক কাপ পরিমাণ হলে পাত্রটি আচ থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে। ঠান্ডা হলে ভাত খাবার আগে ৪/৬ ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

কোমরের যন্ত্রণা:

কোমরের ঠিক নীচে ব্যথা বা যন্ত্রণা, পায়ের পেশীতে রাতের দিকে টান ধরে, এসব ক্ষেত্রে ৩ চামচ হেলেঞ্চার শাকের রস, হাল্কা গরম করে সকালের দিকে খালিপেটে খেলে ভাল হয়ে যায়। নিয়মিত বেশ কিছুদিন খেলে আরও ভাল।

রক্ত দূষিত হলে:

২০ মিলিলিটার হেলেঞ্চার শাকের পাতা ও ডাঁটা বাটা রস, এক চামচ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে একবার করে খেলে দূষিত রক্ত পরিষ্কার হয়ে যায়।