মিষ্টি কুমড়া ওজন কমায়, হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে ও দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।

মিষ্টি কুমড়া উচ্চ বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। বিটা ক্যারোটিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। মিষ্টি কুমড়াতে থাকা বিটা ক্যারোটিন লিভারে গিয়ে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তর হয়। ভিটামিন “এ” আমাদের চোখের সমস্যা দূর করে চোখকে ভালো রাখে।

এই সুস্বাদু সবজিটিতে তুলনামূলক কম ক্যালোরি থাকে, কারণ এতে ৯৪% পানি রয়েছে। ওজন কমাতে, হার্ট সুস্থ্য রাখতে এবং ত্বককে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পেতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।

মিষ্টি কুমড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি। গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও এটি সারা বছর ধরে পাওয়া যায়। গরমে মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, আলু আর তার সাথে চিংড়ি মাছ দিয়ে তরকারির স্বাদই মনে করিয়ে দেয় এটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। মিষ্টি কুমড়া যেমন আমাদের শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ঠিক তেমনি এর বীজগুলিও স্বাস্থ্যকর।

সাধারণত মিষ্টি কুমড়া খেয়ে আমরা বীজগুলি ফেলে দেই। কারণ আমরা জানি না এটা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। মিষ্টি কুমড়ার বীজের স্বাদ বাদামের মতো হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারীতা বাদামের থেকেও বেশি। খোসা ছাড়া কুমড়োর বীজে ২৮ গ্রাম ফ্যাট, প্রোটিন থাকে এবং ক্যালোরি প্রায় ১৫১

মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টি উপাদান

এই কুমড়ার সবথেকে বড় সুবিধা হলো এর পুষ্টি উপাদান। এটিতে ভিটামিন “এ”, ফাইবার এবং শর্করা রয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু পুষ্টি উপাদান নিচে দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি: ৪৯
  • ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
  • প্রোটিন: ২ গ্রাম
  • কার্বস(শর্করা): ১২ গ্রাম
  • ফাইবার: ৩ গ্রাম
  • ভিটামিন “এ”: ২৪৫%(RDI)
  • ভিটামিন “সি”: ১৯%(RDI)
  • পটাশিয়াম: ১৬%(RDI)
  • কপার : ১১%(RDI)
  • ম্যাঙ্গানিজ: ১১%(RDI)
  • ভিটামিন “বি” 2: ১১%(RDI)
  • ভিটামিন “ই”: ১০%(RDI)
  • আয়রন: ৮%(RDI)

অল্প পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক এবং ফোলেট রয়েছে।

মিষ্টি কুমড়ার স্বাস্থ্য উপকারীতা

নিচে মিষ্টি কুমড়ার স্বাস্থ্য উপকারীতা দেওয়া হলো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

কুমড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কুমড়াতে থাকা উচ্চ পরিমাণের বিটা ক্যারোটিন, আমাদের দেহে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন “এ” আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। মিষ্টি কুমড়োতে ভিটামিন “সি”-এর পরিমাণও বেশি, যা শ্বেত রক্ত কোষের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

ওজন কমায়:

এই সবজিতে থাকা ফাইবার ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। কুমড়াতে অবিশ্বাস্যভাবে ক্যালোরি কম। প্রতি কাপ কুমড়াতে ৪৯ ক্যালরি এবং প্রায় ৯৪% পানি রয়েছে। ফাইবার এবং পানি বেশি পরিমাণে থাকে যা পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

চোখের জন্য:

বয়সের সাথে চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া এটি সাধারণ একটি বিষয়। তবে সঠিক পুষ্টি দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। বিটা ক্যারোটিন আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন “এ” সরবরাহ করে থাকে। মিষ্টি কুমড়াতে ২৪৫% (RDI) ভিটামিন “এ” রয়েছে। ভিটামিন “এ” রাতকানা রোগ দূর করে। মিষ্টি কুমড়া, লুটিন (lutein) এবং জেক্সানথিনের (zeaxanthin) অন্যতম সেরা উৎস যা বয়সের সাথে সম্পর্কিত চোখের সমস্যা এবং ছানি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে:

ক্যান্সার একটি গুরুতর অসুস্থতা যেখানে ক্যান্সারের কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ক্যান্সারের কোষ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য শরীরে ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল তৈরি করে। কুমড়াতে ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ বেশি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ১৩টি গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্যারোটিন বেশি পরিমাণে গ্রহণকারী ব্যক্তিদের পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কম ছিল। উচ্চ মাত্রায় ক্যারোটিনয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিদের গলা, অগ্ন্যাশয়, স্তন এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

সুস্বাদু এই সবজিটিতে পটাসিয়াম, ভিটামিন “সি” এবং ফাইবার রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ পটাসিয়াম গ্রহণ করা লোকেদের রক্তচাপ কম এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে। কুমড়াতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি, যা “খারাপ” কোলেস্টেরলকে অক্সজিনের সাথে বিক্রিয়া করতে বাঁধাদেয়। যা আমাদের হার্ট এটাক থেকে রক্ষা করে।

ত্বকের জন্য ভালো:

কুমড়ো পুষ্টিগুণে ভরপুর যা ত্বকের জন্য দুর্দান্ত। এটিতে বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড বেশি, যা শরীর ভিটামিন “এ” তে রূপান্তরিত করে। এক কাপ কুমড়োতে ২৪৫% ভিটামিন “এ” রয়েছে। বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড প্রাকৃতিক সানব্লক হিসাবে কাজ করে। যখন এটা খাওয়া হয় তখন ক্যারোটিনয়েড ত্বকের ভিতরে এবং শরীরের অন্যান অঙ্গগুলিতে যায়। এই ক্যারোটিনয়েড ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে। কুমড়াতে ভিটামিন-সিও বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়। আমাদের শরীরের কোলাজেন তৈরি করতে ভিটামিন “সি” প্রয়োজন। কোলাজেন একটি প্রোটিন যা ত্বককে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, কুমড়া অবিশ্বাস্যরকম স্বাস্থ্যকর। যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি ভালো। কুমড়ার স্বাস্থ্য উপকারীতার কথা বিবেচনা করে এটি আমাদের ডায়েটে রাখা উচিত।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন