সাধ খাওয়া কী? সাধ খাওয়া উৎসব কখন পালন করা হয়? এই উৎসব কিভাবে পালন করা হয়?

বাঙালিদের অনেক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান রয়েছে। সাধ খাওয়া তেমনি এক অনুষ্ঠান। যেহেতু এর অর্থবহ বা কল্যাণকর দিক রয়েছে সেহেতু এর প্রচলন বা প্রথা বা custom-হিসাবে এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির অভাব, বাচ্চার ওজন কম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এছাড়া বাচ্চার ওজন বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মায়ের শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য বাড়তি যত্ন না পাওয়ায় অনেক মা এই সময়ে মানসিক বিষাদেও ভুগে থাকেন।

এই অবস্থায় বিভিন্ন খাবার বা তার পছন্দের খাবার খাইয়ে তাকে আশীর্বাদ করা, নতুন শাড়ি বা তার পছন্দের জিনিসপত্র উপহার হিসাবে প্রদান করা শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে অনেক হিতকর।

সাধ খাওয়া কী?

‘সাধ খাওয়া’ হচ্ছে বাঙালীদের ঐতিহ্যবাহী একটি অনুষ্ঠান। ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও কমবেশি এর প্রচলন রয়েছে। বাঙালী ঐতিহ্য অনুসারে ‘সাধ ভক্ষণ বা খাওয়া’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, গর্ভবতী নারীর আকাঙ্খা অনুযায়ী খাবারের উসব বা অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে নানারকম খাবারের পাশাপাশি উপহার সামগ্রী দিয়েও হবু মায়ের কোল পূর্ণ করা হয়।

সাধ খাওয়া উৎসব কখন পালন করা হয়?

অঞ্চলভেদে একটু পরিবর্তন হলেও গর্ভবতী কোন নারী যখন তার গর্ভাবস্থার সাত মাস পূর্ণ করেন, মায়ের জঠরে সন্তানের অবস্থানও যখন সুদৃঢ় এবং নিরাপদ হয়ে উঠে, তখনই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

অর্থাৎ সাত মাসের শেষের দিকে অথবা আট মাসের শুরুতে পরিবারের অনাগত ছোট্ট মানুষটিকে স্বাগত জানাতে আয়োজন করা হয় এই ‘সাধ খাওয়া’ অনুষ্ঠানের। এসময় নতুন পোশাক, উপহার এবং ফলমূল দিয়ে ভরে দেওয়া হয় ভাবী মায়ের কোল। মূলত মাতৃত্বের অপার আনন্দ দেওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।

এই উৎসব কিভাবে পালন করা হয়?

দেশের নানা অংশে পালিত ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানে বিভিন্নতা দেখা গেলেও মূল উসব একই থাকে। আর তা হচ্ছে গর্ভবতী নারীকে একজন মা হিসাবে নতুন পরিচয়ে প্রবেশের আগে উপহার সামগ্রী, ফলমূল এবং নানান স্বাদের খাবারে আপ্যায়িত করা।

কখনও কখনও অলংকার দিয়ে সাজানো হয় হবু মাকে, হাতে চুড়ি পরানো হয়, কোল ভরিয়ে দেওয়া হয় নানান উপহারে, আর সামনে সাজিয়ে দেওয়া হয় উপাদেয় সব খাবার। অনেক স্থানে এই অনুষ্ঠানে নাচ-গানেরও আয়োজন করা হয়। অনেক নারীর ক্ষেত্রে দিনটিকে হাসি-ঠাট্টা আর হাসি-মশকরা দিয়েও বিশেষভাবে সাজানো হয়।

খেলাগুলো অনেকটা এরকম, অনাগত সন্তানটি ছেলে হবে, নাকি মেয়ে হবে, পেটের আকৃতি অনুযায়ী তা অনুমান করতে কিছু খেলার আয়োজন করা হয়। কিছু পরিবারে পায়েসের মধ্যে কিছু লম্বাকৃতি এবং কিছু গোলাকৃতি পিঠা বানিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়। লম্বা আকৃতির পিঠাগুলো হচ্ছে ছেলে সন্তানের প্রতীক, আর গোলাকৃতিগুলো মেয়ে। হবু মা হাত দিয়ে যে পিঠাটি তুলবেন, ধারণা করা হয়, সেই সন্তানটিই হবে তার।

মূলত এটি খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে হবু মাকে এসময় এমন অনেক উপহার দেওয়া হয়, যা দিয়ে তিনি তার হবু সন্তানের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। এর মধ্যে আছে, শিশুর ব্যবহারের জন্য কাপড়-চোপড়, সোনা-রূপার চুড়ি এবং নগদ টাকা। আসলে পুরো পরিবারের একসাথে মিলিত হওয়া এবং অনাগত সন্তানের আগমন উপলক্ষে উ সবে মেতে উঠার জন্য এই দিনটি হচ্ছে অনন্য। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাতে মানসিকভাবে হবু মায়ের পাশে দাঁড়ানোও এর অন্যতম উপলক্ষ।

একটি আনন্দমুখর ‘সাধ খাওয়া’ অনুষ্ঠানের জন্য কিছু টিপস:

অত্যধিক গরমের মধ্যে এই অনুষ্ঠান পড়লে গর্ভবতীর দিকে বিশেষ খেয়াল নিন। নইলে ভালো করতে যেয়ে মন্দ হতে পারে। অনুষ্ঠানের ধকল যেনো তার উপর না পড়ে।  আবহাওয়া বুঝে কী পরবেন, অর্থাৎ শাড়ি অথবা সালোয়ার- কামিজ আগে থেকেই পছন্দ করে রাখতে পারেন।

অত্যধিক গরমে জমকালো বা ভারী কোন পোশাকে গরম লাগতে পারে, আরামও লাগবে না। অনুষ্ঠানের দিন কে, কী উপহার আপনাকে দিচ্ছে সে সম্পর্কে আপনি একটা চিহ্ন রেখে দিতে পারেন, যাতে করে পরে তাদের ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানানো যায়।

সাধ খাওয়া অনুষ্ঠানে গর্ভবতী মায়ের জন্য যেহেতু অনেক খাবারের আয়োজন করা হয় তাই আপনাকে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে খেতে হবে। একটু সময় নিয়ে আস্তে আস্তে। তাহলে সব পদ খেতে পারবেন, শরীরেরও কাজে লাগবে। একবারে বা একবেলায় সব কিছু বেশি বেশি খেতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।

করোনা মহামারী বা পারিবারিক কোনো সমস্যা থাকলে অনেকে ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠান করে থাকেন। তারপরও সাধ খাওয়ার অনুষ্ঠানে কাছের বন্ধু এবং আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করা হয়।  অনেকে পাড়া-প্রতিবেশীদেরও নিমন্ত্রণ করে থাকেন।

এটা ভালো। নিজের আত্নীয়, প্রতিবেশী অনেক সময় ডেলিভারির সময় রক্ত দিয়ে বা আরো অন্য কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারেন। এই অনুষ্ঠানে কাছে পাওয়া যাই, তাই আগে থেকে বলে রাখলাম, পরে কাজে দিবে।