খাসির মাংস আমিষের চাহিদা পূরণে, রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে এবং হাড় ও দাঁতের গঠনে কার্যকরী

ছাগলের মাংস বা Goat Meat অর্থাৎ খাসির মাংস বা পাঁঠার মাংস বা mutton-যেটাই খান এবং যেখানে যে নামে পরিচিত হোক না কেনো এটি বিশ্বের সবথেকে বেশি ব্যবহৃত লাল মাংস। এর অনন্য স্বাদ ছাড়াও এই মাংসের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

একটা জরিপ করা হয়। কোন মাংসের জনপ্রিয়তা বা ভক্তসংখ্যা বেশি। রেকর্ড সংখ্যক ভক্তসংখ্যার ভোটে Goat meat বা ছাগলের মাংস বা খাসির মাংস বা mutton সবার উপরে। শুকরের মাংস কোনো এক ধর্মের লোকে খায় না। গরুর মাংস কোনো এক ধর্মের লোকে খায় না। কিন্তু মাটন সকল ধর্মের সকল মানুষের পছন্দের।

খাসির বিরিয়ানি (mutton বিরিয়ানি), খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, খাসির রেজালা, মাটন কোর্মা, মাটন কারি-নাম শুনলেই যেনো জিভে জল চলে আসে, খিদে বেড়ে যায়। মাটন রোল, মাটন কাবাব, মাটন চপ, মাটন কিমা কোনটা রেখে কোনটা বলি। আমিষ ভোজীদের জন্য একটি ভালো দিক হলো এটি প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজের দুর্দান্ত এক উৎস।

একটু বয়স হলে বা যার ওজন বেশি এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেশি তাদের mutton-সহ অন্যান্য লাল মাংসকে খেতে নিষেধ করা হয় কারণ লাল মাংস হলেই সকলে ধরে নেয় যে, এতে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। তবে, এটি পুরোপুরি সত্য নয়।

এখানে কিছু বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে।  ছাগল (পাঠা বা খাসির মাংসে) ভেড়ার মাংস ও গরুর মাংস থেকে কোলেস্টেরোল ও ফ্যাট কম থাকে।

লাল মাংস অস্বাস্থ্যকর তখন, যখন এগুলি আপনি প্রায়শঃ খাবেন এবং পরিমাণে বেশি গ্রহণ করবেন। খাসি বা পাঁঠার মাংসের একটা আলাদা স্বাদ আছে যা অন্য কোন মাংসে নেই। খাসির মাংস নরম হয় এবং চর্বি কম থাকে। খাসির মাংসে পর্যাপ্ত পরিমানে আঁশ ও প্রোটিন পাওয়া যায়।

খাসির মাংস বা পাঁঠার মাংস বা মাটনের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা:

এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, খাসির মাংস বা পাঁটার মাংস খেলে শরীরে একাধিক পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৬, আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, নিয়াসিন প্রভৃতি। এই সবকটি উপাদানই শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তবে চলুন খাসির মাংসের উপকারীতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

আমিষের চাহিদা পূরণ করে:

ছাগলের মাংস বা খাসির মাংস বা পাঁঠার মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস যা পেশী স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। খাসির মাংস আমিষের চাহিদা পূরণে দারুণ কাজ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাসির মাংস থেকে ১২২ ক্যালরি, ২৩ গ্রাম প্রোটিন ও ২.৫৮ গ্রাম চর্বি পাওয়া যায়।

রক্তাল্পতা দূর করে:

সকল ধরণের লাল মাংসে উচ্চ মাত্রার মায়োগ্লোবিন থাকে, যা তাদের লাল রঙ এবং এর সাথে কিছু স্বাস্থ্য উপকারের জন্য দায়ী। এছাড়া রয়েছে উচ্চমাত্রার লৌহ, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

ত্বক ভালো রাখে:

ভিটামিন বি১২-এর উচ্চ উপাদানের কারণে ছাগলের মাংস আপনাকে স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে সহায়তা করে।

হাড়, চুল, নখ ও দাঁতের গঠনে:

ছাগলের মাংসে বা খাসির মাংসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। যদিও কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য লাল মাংস বা খাসির মাংস পরিচিত, তবে পরিমিত পরিমানে খেলে স্বাস্থ্যগত উপকার হয়।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী:

গর্ভবতী মায়েদের জন্য ছাগলের মাংস খাওয়াও ভাল কারণ এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে, হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং রক্ত ​​সঞ্চালনে সহায়তা করে।
যদিও অনেক গর্ভবতী মহিলা ছাগল বা খাসির মাংস খেতে ভয় পান তবে আসলে এটি এমনকি জন্ম ত্রুটিগুলি প্রতিরোধ করে, এর পুষ্টি উপাদানের জোরে।

ক্যালোরি কম:

১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে ক্যালোরি হলো ১২২।  অন্যদিকে মুরগির একই অংশে ১৬২ ক্যালোরি, গরুর মাংস ১৭৮ ক্যালোরি এবং শূকরের মাংসের ১৮০ ক্যালরি রয়েছে। তাই ছাগলের মাংস সেবন ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং স্থূলত্ব প্রতিরোধ করে। ছাগলের মাংস স্থূলতার সাথে জড়িত টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।

কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলির নিম্ন স্তরের:

ছাগলের মাংসের ১০০ গ্রামে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১ গ্রাম-এরও কম। অন্যান্য মাংসের থেকে আলাদা ছাগলের মাংসে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চ অসম্পৃক্ত ফ্যাটের মান থাকে। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের মতে কম কোলেস্টেরল গ্রহণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস হয় যেমন করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস। অসম্পৃক্ত ফ্যাট গ্রহণ রক্তে এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) এর মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা একটি স্বাস্থ্যকর হৃদয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।

ছাগলের মাংসে বা খাসির মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর পরিমাণ এতে থাকা মোট অসম্পৃক্ত চর্বিগুলির চেয়ে কম হয় যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে উন্নত করে, প্রদাহকে স্বাচ্ছন্দ্য দেয় এবং হৃদয়ের ছন্দকে স্থিতিশীল করে তোলে। ছাগলের মাংস এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

ছাগলের মাংসে বা পাঁঠার মাংসে ভিটামিন বি রয়েছে যা আপনার দেহে ফ্যাট পোড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও, এটি প্রোটিনের পরিমাণও বেশি, এবং গরুর মাংসের চেয়ে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। যারা ডায়েটে আছেন আপনার পক্ষে এটি ভাল।

ছাগলের মাংসে বা খাসির মাংসে সেলেনিয়াম এবং ক্লোরিন রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী। ছাগলের মাংসে সিএলএ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রদাহ কমায়।

খাসির মাংসে সোডিয়ামের এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। নিম্ন পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দরকারী, এবং স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে।

অহেতুক শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর ও শক্তি যোগান দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর পুষ্টিকর উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।  আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

যাদের রক্তে কোলেস্টরেল বেশি এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ ঝুঁকি আছে তাদের জন্য মাংস রান্নার পূর্বে চর্বি ও মাংস আলাদা করে নিন। রান্না করার সময় সবজি মিশিয়ে রান্না করুন, এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকবে। যারা খুব বেশি পরিমানে লাল মাংস খাচ্ছেন তারা কার্ডিওভাসকুলার (হার্ট ডিজিজ) রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লাল মাংস বেশি খাওয়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গরুর, মহিষের মাংসের থেকে খাসির মাংসে একটু আলাদা ঘ্রাণ থাকে এবং আলাদা স্বাদ পাওয়া যায়। গরুর মাংসের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর খাসির মাংস। খাসির মাংসে ক্যালরি, চর্বি ও কোলেস্টেরল মাত্রা কম তাই খাসির মাংস খেলে তেমন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। অতএব, আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী খাসির মাংস খেতে পারেন।

সূত্র:

timeaofindia. healthline, dovemed.com