বার্লি হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
যব। বার্লিকে বাংলায় যব বলে। ইংরেজিতে Barley এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hordeum vulgare. এটি গম জাতীয় একধরনের শস্য দানা।
বর্তমানে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে শীতকালে সীমিত পরিমানে বার্লি চাষাবাদ হয়।
বার্লি (যব) ছাতু খুবই উপাদেয় খাদ্য। গম আর বার্লি উভয় একই পরিবারের। তবে স্বাদের দিক থেকে বার্লি কিছুটা নোনতা এবং উষ্ণ প্রকৃতির।
গমের স্বাদ মিষ্টি এবং ঠান্ডা। বার্লিতে রয়েছে মালটোজ, গ্লুকোজ, স্যাকারিন, লেসিথিন, এল্যানটয়েন, এমাইলেস।
বার্লি হল একপ্রকার শক্তিশালী শস্য, যা মিনারেল, আয়রন, ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, কপার, জিঙ্ক, প্রোটিন, ডায়টারি ফাইবার সমৃদ্ধ।
এছাড়া এতে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিটা-গ্লুকান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এটাকে রোজকার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন কিংবা স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পান করুন।
বার্লির পুষ্টিগুণ
বার্লি একটি পুষ্টিকর শস্য। নিচে ১০০ গ্রাম আস্ত বার্লিতে থাকে পুষ্টিগুণ দেওয়া হলো-
- ক্যালরি: ৩৫৪
- ফ্যাট: ২.৩ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ৩৩ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৭৩.৫ গ্রাম
- প্রোটিন: ১২.৫ গ্রাম
- ফোলেট: ১৯ mcg
- সোডিয়াম: ১২ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ৩.৬ মিলিগ্রাম
- ফাইবার: ১৭.৩ গ্রাম
বার্লির উপকারিতা
আস্ত শস্যদানা সমৃদ্ধ খাদ্য অর্থাৎ বার্লি স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এবার জেনে নেওয়া যাক, সুস্বাস্থ্যের জন্য বার্লি ও বার্লি ওয়াটারের উপকারিতা কি-
ইউটিআই এর জন্য ভালো:
বার্লি ওয়াটার প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ডিউরেটিক। এটা মূত্রত্যাগ বাড়িয়ে দেয়, যা টক্সিনের সাথে সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে বের করে দেয়।
এটা কিডনি পরিষ্কার করার পাশাপাশি কিডনি স্টোন, সিস্টিস ও অধিক ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার মতন সমস্যার নিরাময় করে।
তাই এসব সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে রোজ কয়েক কাপ বার্লি ওয়াটার পান করুন।
হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে:
ডায়েটে বার্লি যোগ করার মধ্যে আমরা হার্টের রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
কারণ বার্লি “খারাপ” LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি, বার্লির দ্রবণীয় ফাইবার রক্তচাপের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ LDL কোলেস্টেরল হার্টের রোগের কারণ।
কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখে:
বার্লির ভেতরে ফাইবার থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফাইবার বিটা-গ্লুকান পিত্ত অ্যাসিডের সাথে আবদ্ধ হয়ে “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল হ্রাস করতে পারে।
একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত পুরুষদের পুরো গম, বাদামী চাল বা বার্লি সমৃদ্ধ একটি ডায়েটে রাখা হয়েছিল।
পাঁচ সপ্তাহ পরে, যারা বার্লি খেয়েছিল তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্যান্য দুটি ডায়েটে অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় ৭% কম ছিল।
ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
বার্লি ওয়াটার ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা স্বাস্থ্যকর কোষের বৃদ্ধি সক্ষম করে।
তাছাড়া এটি ফোলেট, কপার, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানিজের মত পুষ্টিকর প্রয়োজনীয় উপাদানে ভরপুর।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:
বার্লি খাওয়ার পরে গ্লুকোজ শোষণ ধীরে করে দেয় এবং ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে এবং ইনসুলিন নিসরণ উন্নতি করে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করতে পারে:
বার্লির উচ্চ ফাইবার উপাদান পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে। পিত্তথলি বাইল অ্যাসিড তৈরি করে যা আপনার শরীর চর্বি হজম করতে ব্যবহার করে।
বার্লিতে যে ধরণের অদ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় তা পিত্তথলির পাথর গঠন রোধ করতে এবং পিত্তথলির অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১৬ বছরের একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছে, তাদের পিত্তথলির অপসারণের সম্ভাবনা ১৩% কম ছিল।
হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে:
বার্লি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এর উচ্চ ফাইবার সামগ্রী বিশেষ করে অদ্রবণীয় ফাইবার।
অদ্রবণীয় ফাইবার পানিতে দ্রবীভূত হয় না। পরিবর্তে, এটি মলের সাথে যোগ হয়ে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের এক চার সপ্তাহের গবেষণায় দেখা গেছে, যব বা বার্লি খেলে অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং মলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
আস্ত শস্যদানা কিছু ক্যান্সার সহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার। বার্লির উচ্চ ফাইবার সামগ্রী কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে।
বার্লিতে পাওয়া অন্যান্য যৌগ – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটিক এসিড (phytic acid), ফেনোলিক অ্যাসিড( phenolic acids) এবং স্যাপোনিন (saponins) সহ – ক্যান্সার থেকে আরও রক্ষা করতে পারে বা ক্যান্সার এর বিকাশকে ধীর করে দিতে পারে।
গর্ভবতি মহিলাদের জন্য ভালো:
এই মিশ্রণ হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সকালবেলার দুর্বলতা বা শরীর খারাপ লাগা কমায়।
জেস্টেশানাল ডায়াবেটিস এড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফাঙ্গাল সংক্রমণ ও গর্ভাবস্থার সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
এটা টক্সিন বের করে দেয় ও এডেমার নিরাময় করে, যা গর্ভাবস্থাকালীন পা ও গোড়ালি ফোলা মায়েদের পরিসেবায়, বার্লি ওয়াটার ল্যাক্টোজেনিক খাবার হিসেবে ভুমিকা পালন করে এবং এর পাশাপাশি স্তন্য দুগ্ধের উৎপাদন বাড়ায়।
ত্বক পরিষ্কার করে:
বার্লি ওয়াটার শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জেল্লাদার ত্বক উপহার দেয়।
এর মধ্যে অ্যাজেলাইক নামক যৌগ থাকে, যা হালকা থেকে মাঝারি ব্রণের নিরাময় করার সাথে ত্বক ফাটার সাথে জড়িত জ্বালা-যন্ত্রণা কমায় এবং লোমকূপের মুখ আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
এটা ফ্রি রাডিকেলেরও মোকাবিলা করে। উপকার পাবার জন্য সপ্তাহে কয়েকবার পান করুন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
বার্লি ক্ষুধা কমাতে পারে এবং অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে পারে যা সময়ের সাথে ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। আসলে বার্লি উচ্চমাত্রার ফাইবার বিটা-গ্লুকান রয়েছে যা ক্ষুধা কমায়।
৪৪ টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, দ্রবণীয় ফাইবার, যেমন বিটা-গ্লুকান, ক্ষুধা এবং খাদ্য গ্রহণ কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ফাইবার।
বার্লি ওয়াটার কীভাবে বানাবেন?
প্রথমে, বার্লি ভালোকরে ধুয়ে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ছেঁকে নেবার পরে ৩-৪ কাপ পানির মধ্যে এই ভেজানো বার্লি মেশান।
মিশ্রণটা গরম করে দানা নরম ও রান্না হওয়া অবধি অল্প আঁচে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন এবং তারপরে এটাকে ঠান্ডা হতে দিন।