গোড়ালি বা পা ফাটা দূর করার উপায়।

শীত আসতেই আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। তখন এনিয়ে আমাদের চিন্তার আর শেষ থাকে না। তাই অসময় ত্বকের জন্য দরকার পড়ে বাড়তি যত্নের। যাদের ত্বক একটু বেশি শুষ্ক তারা এই সময় পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।

শীতকালে ফাটা গোড়ালি যেমন দেখতে খারাপ লাগে, তেমনই অনেকের ক্ষেত্রে তা যন্ত্রণাদায়কও, বেশি বাড়াবাড়ি হলে পায়ের ফেটে যাওয়া অংশ থেকে রক্তপাতও হয়।

শুধু শীতকাল নয়, অনেকেরই সারাবছর পায়ের গোড়ালি ফাটে। এর কারণ- গোড়ালির ত্বকের শুষ্কতা বা স্তরীভূত মরাকোষ। অনেক বেশি হাঁটাচলা, দিনের দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করা, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির কারণেও পা ফাটতে পারে।

দীর্ঘদিনের এই পা ফাট‍ার সমস্যা দূর করতে ছোট ছোট কিছু ব্যাপার লক্ষ্য রাখা জরুরি। তাই, শুধু পার্লারে গিয়ে পেডিকিওরই নয়। বাড়িতেও ঘরোয়া উপায়ে পায়ের যত্ন নিন সারা বছর। চলুন জেনে নেয়া যাক, সেগুলো সম্পর্কে-

গোলাপজল ও গ্লিসারিন:

পা ফাটা রোধে গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ খুব কার্যকর। গ্লিসারিন ত্বক নরম রাখে। অন্যদিকে গোলাপজলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। একটি বোতলে সমপরিমাণে গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে রেখে দিন। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে ম্যাসাজ করুন। এতে পা ফাটা দূর হবে।

পেঁয়াজ:

পায়ের গোড়ালির ফাটা দাগ দূর করতে পেঁয়াজের রস খুবই উপকারী। প্রথমে পেঁয়াজ ভালো করে পিষে রস বানিয়ে নিন। এই রসের মধ্যে এবার এক চামচ মধু মেশান। মধু না থাকলে বিকল্প হিসেবে অলিভ অয়েলও নিতে পারেন। এবার গোড়ালিতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট ম্যাসাজ করার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিন। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন ফাটা দাগ দূর হয়ে গেছে।

ভেজিটেবল অয়েল:

অলিভ অয়েল, তিলের তেল, নারকেল তেল, সরষের তেল ও বাদাম তেল পা ফাটার সবচেয়ে সহজ সমাধান। ভালো ফলাফল পেতে রাতে ঘুমানোর আগে পা পরিষ্কার করে যেকোনো ভেজিটেবল অয়েল ম্যাসাজ করে ঘুমান।

লেবু:

কুসুম গরম পানিতে লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে দশ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন পা। সপ্তাহে দুইবার এভাবে পা ডুবিয়ে রেখে পিউমিক স্টোন দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন গোড়ালি।

চালের গুঁড়া:

আধকাপ চালের গুঁড়া, এক চা-চামচ মধু ও এক চা-চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে ম্যাসাজ করুন। খুব বেশি ফাটা হলে কয়েক ফোঁটা নারকেলও তেল মেশাতে পারেন।

মধু:

ত্বককে নরম কোমল রাখতে মধুর বিকল্প নেই। শুধু কোমল নয়, পায়ের পাতাকে ফর্সা করতেও এটি সাহায্য করে। আধা কাপ মধু ও একটু গরম পানি মিশিয়ে নিন। তাতে পা ডুবিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রেখে পা হালকা ঘষুন। তারপর পা সরিয়ে নিন। এটিও রোজ রাতে করতে পারেন। এতে আপনার পা ফাটা দূর হবে তার পাশাপাশি পা নরম ও কোমল থাকবে।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরায় থাকে ভিটামিন “এ”, “সি” ও “ই”। পায়ের গোড়ালি ফাটা রোধে হালকা গরম জলে পা ধুয়ে, পা-ঘষার পাথর দিয়ে গোড়ালি ঘষে পরিষ্কার করে নিন। তারপর মোটা করে অ্যালোভেরার জেল লাগান পায়ের তলায়। এরপর মোজা পরে নিয়ে শুতে যান। সকালে উঠে হালকা গরম জলে পা ধুয়ে নিন।

এগুলো ছাড়াও পা ফাটা রোধ করতে-

  • যদি খোলা স্যান্ডেল বা জুতো পরার অভ্যাস থাকে, তাহলে ১০ দিনে অন্তত একবার পেডিকিওর করা উচিত।
  • যাদের সবসময়ই পা ফাটে তারা কখনওই পা শুষ্ক রাখবেন না। প্রতিবার ভেজানোর পর ভালোভাবে মুছে পায়ের গোড়ালি ও পুরো পাতায় ভেসলিন লাগান।
  • প্রতিদিন স্নানের সময় পিউমিক স্টোন ও ব্রাশ দিয়ে পায়ের গোড়ালি, নখ ও আঙুলের ডগা পরিষ্কার করুন। কারণ মরা কোষ জমে জমে পুরু স্তর তৈরি হয়, যার কারণে গোড়ালি শক্ত হয়ে যায় এবং পা ফাটে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানি বা পানিজাতীয় খাবার কম খেলে ত্বকের শুষ্কতা, ঠোঁট বা পা ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দৈনন্দিন পানি পানের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে আলাদা। আপনার শরীরের জন্য রোজ ঠিক কতটা পানি খাবেন তা সুযোগমতো ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।