কিডনিতে টিউমার আছে কি করে বুঝবো। প্রস্রাব থেকে রক্ত পড়া মানেই কি কিডনি টিউমার?

কিডনি ক্যানসারের শুরুটা সম্পর্কে আপনি নাও জানতে পারেন। যেহেতু কিডনি আপনার শরীরের খুব গভীরে অবস্থিত, তাই রোগীরা এ ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ অনুভব করে না বললেই চলে।

বিরল ক্ষেত্রে, কোনো রোগী কিডনি ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে টিউমার অনুভব করতে পারেন, যদি এমনটা ঘটে তাহলে তিনি সম্ভবত অগ্রসর পর্যায়ে আছেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনি ক্যান্সার দেরীতে ধরা পড়ে। তাড়াতাড়ি ধরা পড়ার বিষয়টি খুব কম।

অন্য কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে এমআরআই অথবা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং স্ক্যান করতে গিয়ে এসব ক্যানসার নির্ণীত হয়।

এটি একটি ভালো বিষয়- প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকৃত ক্যানসার অধিক কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা যায়।

অল্প পার্শ্ব ব্যথা:

কখনো কখনো কোনো রোগী কিডনি ক্যানসারের একটি লক্ষণ হিসেবে পার্শ্ব ব্যথা অনুভব করতে পারেন। অনবরত পার্শ্ব ব্যথা যা দীর্ঘস্থায়ী ও সারে না তা চিকিৎসক দ্বারা মূল্যায়ন করা উচিৎ।

তবে নিজে নিজে ধারণা করবেন না যে, আপনার ক্যানসার হয়েছে, কারণ অন্যান্য কিছু মেডিক্যাল কন্ডিশনের কারণেও আপনার পেটের উভয়পাশে ব্যথা হতে পারে।

মূত্রে রক্ত:

এটি কিডনি ক্যানসারের কোনো ছোট লক্ষণ নয়, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি ভীতিকর।

কিন্তু আপনি জানেন না যে, এটি কতটা মারাত্মক বা বিপজ্জনক, কারণ অন্যান্য কিছু সমস্যার (যেমন- মূত্রনালীর সংক্রমণ) কারণেও মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে।

অথবা হয়তো এটি রক্ত নয়, আপনি হয়তো মূত্র লাল করতে পারে এমন খাবার বেশি খেয়েছেন।

কিন্তু যদি কিডনি ক্যানসারের কারণে মূত্রে রক্তের উপস্থিতি হয়, তাহলে আপনার ক্যানসার সম্ভবত অধিক অগ্রসর পর্যায়ে আছে, মায়ো ক্লিনিক অনুসারে। এ লক্ষণটি আপনার চিকিৎসক দ্বারা দ্রুত মূল্যায়ন করুন।

আপনার পেটের চারপাশে একটি ভর বা পিণ্ড। পিঠে কিডনি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

এটি ত্বকের নিচে শক্ত, ঘন হওয়া বা বুলিং বাম্পের মতো অনুভব করতে পারে। তবে কিডনি সমস্যাগুলি অনুভব করা শক্ত, বিশেষত প্রাথমিক পর্যায়ে।

কিডনি ক্যান্সারের সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ বা লক্ষণ থাকে না।

সময়ের সাথে সাথে লক্ষণ ও লক্ষণগুলির বিকাশ ঘটতে পারে যার মধ্যে রয়েছে: আপনার মূত্রে রক্ত, যা গোলাপী, লাল বা কোলা বর্ণযুক্ত হতে পারে। আপনার পিছনে বা পাশের ব্যথা যা দূরে যায় না।

কী করে বুঝবেন আপনার কিডনি টিউমার আছে?

খুব প্রাইমারি স্টেজে কিডনি টিউমার হলে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে কিডনির টিউমার ধরা পড়ে।

পেটের অন্য কোনও সমস্যার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হলে ধরা পড়ে কিডনির টিউমার। এরপর সিএটি স্ক্যান ও এমআরআই করে দেখা হয় কী ধরনের সিস্ট আছে, এই সিস্ট থেকে কতটা ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আল্ট্রাসাউন্ড ও বায়োপসি করে দেখা হয় টিউমার ক্যানসারাস নাকি নন-ক্যানসারাস।

টিউমার ম্যালিগন্যান্ট হলে অবশ্যই জানতে হবে টিউমারের সাইজ কত, কিডনির কার্যক্ষমতা কেমন আছে, রোগীর বয়স কত, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হার্টের সমস্যা আছে কি না

কিডনি টিউমারের লক্ষণ?

কিডনি টিউমার প্রথম অবস্থায় থাকলে কোনো রকম শারীরিক সমস্যার লক্ষণ দেখা যায় না।

অনেক দেরিতে কিডনির টিউমার বা কিডনি ক্যানসার ধরা পড়লে তার কিছু লক্ষণ দেখা যায় – শরীরের নীচের দিকে পেট থেকে পিছনের দিকে এক দিক দিয়ে একটা ব্যথা অনুভব হবে, পেট ফুলে ভারী ভাব।

এছাড়া প্রস্রাব থেকে রক্তপাত, অ্যানিমিয়ার প্রবণতা, হঠাৎ করে রোগা বা মোটা হয়ে যেতে পারেন, ঠান্ডা না লাগলেও হঠাৎ হঠাৎ জ্বর হতে পারে, খিদে কমে যাবে, পা ফুলে যাবে।

কিডনি টিউমারের ট্রিটমেন্ট কী হবে?

প্রথম অবস্থায় কিডনি টিউমার ধরা পড়লে বা কিডনি টিউমার নন-ক্যানসারাস হলে অবজারভেশনে রাখা হয়।

এছাড়া ‘পার্সিয়াল নেফ্রোকটমি’— এই পদ্ধতিতে সার্জারির দ্বারা কিডনি থেকে শুধুমাত্র টিউমার বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

অথবা, কখনও করা হয় ‘রেডিক্যাল নেফ্রোকটমি’ করে কিডনি ও টিউমার দু’টিই বাদ দেওয়া হয়। এই দুই সার্জারি হল ল্যাপ্রোস্কোপি।

কোনও রোগী যদি সার্জারির জন্য যোগ্য না হয় না অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য সার্জারি করা যাবে না বা টিউমার যদি খুব ছোটো হয় সে ক্ষেত্রে করা হয় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ)।

এটি এক ধরনের রে। খুব দেরিতে টিউমার ধরা পড়লে বা ক্যানসারাস টিউমার হলে টারগেটেড থেরাপি করা হয়। এটি এক ধরনের ওরাল ট্যাবলেট।

কিডনি টিউমার বা ক্যানসারের ক্ষেত্রে কেমো থেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি হয় না। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে কিডনি টিউমার সারিয়ে তোলা সম্ভব।

কিডনি টিউমার এড়াতে কী করা উচিত?

তামাক দ্রব্য বর্জন করা উচিত, ওজন, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রুটিন হেল্‌থ চেকআপও জরুরি।

প্রস্রাব থেকে রক্ত পড়া মানেই কি কিডনি টিউমার?

না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইউরিন দিয়ে ব্লিডিং মানেই ক্যানসার – এমনটা নাও হতে পারে। কিডনি স্টোন, প্রস্টেট সমস্যা, ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন, কিডনিতে নন-ক্যানসারাস সিস্ট হলেও ব্লিডিং হতে পারে।

তাই এই লক্ষণ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লক্ষণ জানিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি।