মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যেসব খাবার।

শিশুর যথাযথ বিকাশ সাধনের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। একারণে শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল করতে হবে, কারণ স্তন্যপান করানো সকল নারীর স্তনে যে পর্যাপ্ত দুধ থাকবে এমনটা নাও হতে পারে।

বুকে দুধের ঘাটতি দেখে অনেক মা তা বাচ্চাকে বাজারে থেকে বিভিন্ন প্যাকেট দুধ বা ফর্মুলা কিনে খাওয়ান। কিন্তু কোনো ফর্মুলাই মায়ের দুধের মতো ভালো খাবার হতে পারে না। তাই শিশু পর্যাপ্ত দুধ না পেলে কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে স্তনের দুধ বৃদ্ধি করা যায় সেই চেষ্টা করুন।

এমন কিছু খাবার রয়েছে যা দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। দুগ্ধদানকারী মায়ের বুকে দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

মেথি বীজ:

মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় হচ্ছে মেথি। শিশুর বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনও বিকল্প নেয়। তাই মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা যায় যে, বুকের দুধ বৃদ্ধিতে মেথি একটি নিরাপদ প্রাকৃতিক বিকল্প। নতুন ৭৭ জন মায়েদের উপর ১৪ দিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেথি বীজের চা পান করায় বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা বাচ্চাদের ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।

ফল ও শাকসবজি:

বেশি করে তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়া মায়ের বুকে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। বেবি অ্যান্ড কোম্পানির সিএনএম ডিএনপি মার্গারেট বাক্সটন জানান, “কৃষিজাত খাবারে প্রচুর পানি থাকে, তাই আপনি এসব খাবার খেয়ে পানি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। এছাড়া ফল ও শাকসবজি এমন পুষ্টি সরবরাহ করে যা দুধ উৎপাদন করতে শরীরের প্রয়োজন হয়।

রসুন:

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩ কোয়া রসুন খেতে পারেন। এটি আপনার বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। যদি আপনি কাঁচা রসুন খেতে না পারেন তাহলে রান্নায় রসুন ব্যবহার করুন।

গরুর দুধ:

গরুর দুধে ফোলিক এসিড, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। এটি কেবল দুধের উৎপাদনেই সহায়তা করে তা নয়, এর সাথে শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ সুষমভাবে পুষ্টিকর করে তোলে। বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে এক গ্লাস করে দুধ পান করা উচিত।

লাউ:

লাউ স্তন্যদানকারী মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। লাউ এমন একটা সবজি যেটাতে রয়েছে ৯৬% পানি। স্তন্যদান করার ক্ষেত্রে পানি হলো প্রধান উপাদান। সেক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে লাউ তুলনাহীন। এছাড়াও লাউতে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল যা দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি পেট ঠান্ডা করে অ্যাসিডিটি কমিয়ে দেয়। তাই খাবারে নিয়মিত লাউ রাখুন।

মৌরি:

মৌরি বীজ, মৌরি স্যূপ ও মৌরি চা- যেভাবেই খান না কেন, এই হার্বটি মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। মৌরিতে গ্যালাক্টোজেনিক বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে, এর অর্থ এটি বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মৌরি প্রোল্যাকটিনের রক্তের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে – এটি এমন একটি হরমোন যা শরীরকে বুকের দুধ তৈরি করতে সংকেত দেয়। এজন্য বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য মৌরি কার্যকরী।

ওটমিল:

ওটমিল স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারী একটি খাবার। এটি আয়রনের একটি ভালো উৎস। আধা কাপ ওটমিলের মধ্যে প্রায় ২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। এই খনিজটি মায়ের বুকের দুধের সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

পানি:

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের প্রচুর পানি পান করা উচিত। কারণ স্তন্যপানে মায়ের শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। স্তন্যপানকালে চিনিযুক্ত শরবত অথবা কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো উচিত। এসময় অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে। বাচ্চাকে প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এক গ্লাস পানি পান করা উচিত।

তুলসি:

তুলসি মায়ের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এটি পাচনতন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। তুলসি চায়ের মাধ্যমে গ্রহণ করলে এটি আপনাকে আরাম এবং স্বস্তি দেবে।

কাজুবাদাম:

প্রতিদিন কাজুবাদাম খাওয়ার সবচাইতে ভালো উপায় হলো সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠেই সেই বাদাম খেয়ে ফেলা। কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। যেগুলো দুগ্ধ উৎপাদনের হরমোনকে উদ্দীপ্ত করতে সাহায্য করে।

ডিম:

ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন “এ”, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ যা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। একই সাথে ডিম মাতৃদুগ্ধের উন্নতি সাধিত করে থাকে। প্রতিদিন একটি করে ডিম জাদুর মতো কাজ করে থাকে।