কিউই ফল ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ, হার্টের জন্য ও হজমের জন্য উপকারী।

কিউই Kiwifruit বা চাইনিজ গোলজবেরি হল চীনা ফল। একজন স্কুল শিক্ষক ১৯০৪ সালে চীন থেকে বীজ নিয়ে নিউজিল্যান্ডে চাষ শুরু হয়।

নিউজিল্যান্ডেররা তাদের জাতীয় পাখির নামানুসারে এটিকে “কিউই” বলে ডাকত।

উচ্চ ভিটামিন “সি” থাকার কারণে কিউই একটি স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।

এই ফলটিতে ভিটামিন “সি” এর পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিগুণেও রয়েছে। কিউই রক্তচাপ কমাতে, ক্ষত নিরাময় করতে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এর বৈজ্ঞানিক নাম- Actinidia deliciosa। কিউই সুন্দর রঙের জন্য মানুষের মধ্যে বেশি প্রসিদ্ধ। কিউইতে ভিটামিন “সি” ছাড়াও ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “কে” এবং প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফোলেট রয়েছে।

kiwi fruit

এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

কিউই ফলের পুষ্টি উপাদান

কিউই ফলের বাইরের রঙ গোল্ডেন ব্রাউন এবং ভেতর সবুজ। এর একটি চিত্তাকর্ষক পুষ্টি প্রোফাইল রয়েছে। এখানে ১০০-গ্রাম কিউই ফলের পুষ্টি উপাদান দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি: ৬৪
  • কার্বোহাইড্রেট: ১৪ গ্রাম
  • ফাইবার: ৩ গ্রাম
  • ভিটামিন “সি”: ৮৩% (DV)
  • ফোলেট: ৭% (DV)
  • ভিটামিন “ই”: ৯% (DV)
  • ভিটামিন “কে”: ৩৪% (DV)
  • পটাসিয়াম: ৪% (DV)
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৪% (DV)

kiwifruit

কিউই ফলে ভিটামিন “সি” ব্যতিক্রমীভাবে বেশি। ভিটামিন “সি” শরীরের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে কোষকে রক্ষা করে।

এটি ইমিউন ফাংশনের সাথেও জড়িত এবং আপনার শরীরের কোলাজেন এবং নিউরোট্রান্সমিটার তৈরির জন্য এটি প্রয়োজন।

কিউই ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিউই কতটা উপকারী-

ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পাওয়ার হাউজ:

কিউই ফল ভিটামিন “এ”, “বি”৬, “বি”১২, “ই”, এবং পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা শরীরের রক্ত ​​সঞ্চালন, স্ট্রেস কমানো, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, মজবুত হাড় এবং দাঁত গঠন করে।

প্রতি ১০০ গ্রাম কিউই ফলে ৩১২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে যা ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে এবং ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ও পেশী সঞ্চালনে সহয়তা করে।

ভিটামিন “সি” এর উচ্চ উৎস:

কিউই ভিটামিন “সি”-তে ব্যতিক্রমীভাবে বেশি।

২০১২ সালের একটি গবেষণায় ১৫ জন পুরুষের মধ্যে যাদের ভিটামিন “সি”-এর মাত্রা কম ছিল প্রতিদিন দুটি কিউই খাওয়ার ফলে ভিটামিন “সি” এর অভাব দূর হয়েছিল।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুটি কিউই খাওয়ার ফলে ভিটামিন “সি”-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

এবং যাদের মধ্যে ভিটামিন “সি”-এর মাত্রা কম ছিল তাদের মধ্যে নিউট্রোফিল নামক ইমিউন কোষের কার্যকারিতাও উন্নত হয়।

নিউট্রোফিল হল শ্বেত রক্তকণিকা যা রোগজীবাণু এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কিউইয়ের মতো ভিটামিন “সি” সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সর্বোত্তম প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

Fresh Kiwi

ত্বকের জন্য উপকারী:

কিউই প্রাকৃতিকভাবে ক্ষারীয়। এটি রক্তের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক রাখে। যা আপনাকে প্রাণবন্ত ও শক্তিতে ভরপুর করে তুলতে এবং ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

এর মধ্যকার ভিটামিন “সি” এবং “ই” ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। ভিটামিন “সি” কোলাজেন উৎপাদনে অবদান রাখে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং হাইড্রেশন বাড়াতে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঘুমবর্ধক:

ঘুমে সমস্যা হচ্ছে? কিউই ফলে অনেক ওষধি গুণাগুণ রয়েছে, কিউই ঘুম সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় বেশ উপকারী।

২০১১ সালের একটি গবেষণায় ঘুমের সমস্যাযুক্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ঘুমের মানের উপর কিউই ফলের প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল।

গবেষকরা দেখেছেন যে কিউই খাওয়ার ফলে ঘুমের উন্নতি হয়েছে।

হজম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:

কিউইতে অদ্রবণীয় এবং দ্রবণীয় উভয় ধরনের ফাইবার থাকে। গবেষণায় দেখা যায় যে কিউইতে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দ্রবণীয় এবং দুই-তৃতীয়াংশ অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে।

কিউইতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, হার্টের স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত ৭৯ জনের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৪ জন দুটি কিউই খেলে মল ফ্রিকোয়েন্সি উন্নত করতে সাহায্য করে।

kiwi in a bowl

ক্যান্সার প্রতিরোধ:

ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট উল্লেখ করেছে যে শরীরে উচ্চ মাত্রার ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ডিএনএর ক্ষতি করতে পারে যার ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।

কিউই ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা শরীর থেকে ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণ করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও, ট্রাস্টেড সোর্স গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার খান – বিশেষ করে যারা ফল এবং সিরিয়াল থেকে ফাইবার গ্রহণ করেন তাদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো:

কিউই ফল ভিটামিন “সি” ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

অধ্যয়নগুলি দেখায় যে কিউই খেলে উচ্চ রক্তচাপ সহ হৃদরোগের ঝুঁকির কারণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

একটি সমীক্ষায় উচ্চ স্বাভাবিক রক্তচাপ সহ ১১৮ জনের মধ্যে কিউই বা আপেল খাওয়ার প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।

যারা ৮ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিনটি কিউই খেয়েছিলেন তাদের রক্তচাপ কম ছিল যারা প্রতিদিন একটি আপেল খেয়েছিলেন তাদের তুলনায়।

ধূমপানকারী ১০২ জন পুরুষের উপর ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা 8 সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিনটি কিউই খান।

যারা 8 সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তিনটি কিউই খেয়েছিলেন তাদের রক্তচাপ এবং প্লেটলেট (platelet) একত্রিতকরণ হ্রাস পেয়েছে।

প্লেটলেট হাইপারঅ্যাকটিভিটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কারণ প্লেটলেট রক্তনালীর দেয়ালে লেগে থেকে ফলক তৈরি করে। এটি এথেরোস্ক্লেরোসিস (atherosclerosis) নামে পরিচিত।

যারা ধূমপান করেন তাদের প্লাক তৈরির ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই কিউই খাওয়ার ফলে প্লেটলেট জমা হওয়ার ভয় থাকে না এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকিও কম থাকে।

এছাড়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, কিউই মোট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে এবং এইচডিএল (ভাল) কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ করে:

শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন “সি” ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কিউই ফল খেতে পারেন।

এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ঠাণ্ডা বা জ্বর প্রতিরোধ করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:

কিউই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ক্ষেত্রে দারুণ উপকারী।

২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতিদিন ৩টি কিউই ফল খেতে পারলে এতে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থগুলি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে।

সেই সাথে নিম্ন রক্তচাপ, স্ট্রোকহার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।