যেসব অভ্যাস হার্ট এর জন্য ক্ষতিকর।

যদি আমাদের দেহ একটি যন্ত্র হয়, তাহলে সেই যন্ত্রের প্রধান অংশ হলো হার্ট। আর হার্ট ভালো রাখার এবং যত্ন নেওয়ার দায়িত্বও আমাদের। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হার্টের রোগের কারণে মারা যাচ্ছে।

হার্টের রোগ তখন হয় যখন হার্ট এবং রক্তনালীগুলি তাদের মতো কাজ করে না যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর ইত্যাদি অবস্থা হতে পারে।

হার্টের সমস্যাগুলি ধমনীতে প্লাক (ফ্যাট, কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পদার্থ) তৈরির কারণে ঘটে।

এইগুলি আমাদের হার্টে রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি রক্তের প্রবাহকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে। শেষ পর্যন্ত এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

আমাদের অনেক অভ্যাসের কারণে আমরা হার্টের রোগে আক্রান্ত হই। এই অভ্যাসগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে হার্টের রোগ এড়ানো সম্ভব। নিচে এই অভ্যাসগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ধূমপান করা:

সিগারেট, পাইপ থেকে ধূমপান হৃৎপিণ্ড এবং ধমনীর জন্য যেমন খারাপ তেমনি এটি ফুসফুসের জন্যও খারাপ। ধোঁয়াকে দ্বিতীয় বিষ মনে করা হয়।

সেটা আপানাকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই আপনি যদি ধূমপান করেন তাহলে ধূমপান করা ছেড়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

সক্রিয় না থাকা:

ব্যায়াম এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হার্টের রোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা বা ব্যায়াম আমাদের সুস্থ্য রাখতে পারে এবং হার্টের রোগ কমাতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন ১৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে সকল ব্যক্তিরা ব্যায়াম করে তাদের মধ্যে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল।

পর্যাপ্ত ঘুম না পড়া:

বেশি দিন বাচঁতে হলে একটানা দীর্ঘদিন কম না ঘুমিয়ে দৈনিক টানা কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। কোষের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং সুন্দর দেহ গঠনের জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের সুস্থ্যতার পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। ঘুমের ঘাটতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং হার্টের অন্যান্য অবস্থার জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ফাইবার যুক্ত খাবার কম খাওয়া:

যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া।

বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিমমটরশুঁটি, সকল ধরণের শাক সবজি, ডাল জাতীয় শস্য এবং ফলমূল।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়। এছাড়াও হোলগ্রেইন আটার রুটি এবং বাদামী চাল খাবারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

অতিরিক্ত ওজন:

অতিরিক্ত ওজন হার্টের রোগের এবং ডায়াবেটিসের কারণ। বিশেষ করে কোমর

পুরুষের কোমর যদি ৩৭ ইঞ্চি আর নারীর কোমর ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চির বেশি হয় তাহলে ওজন কমাতে হবে। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে না চলা:

ডায়েটে ফল, শাকসবজি, আস্ত শস্য, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (মটরশুটি, বাদাম, মাছ এবং হাঁস-মুরগির মাংস) এবং মশলা যোগ করুন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, লবণ, দ্রুত হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট (সাদা রুটি, সাদা ভাত, আলু এবং একই জাতীয়) লাল মাংস এবং সোডা বা অন্যান্য চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয়গুলি আপনার ডায়েট থেকে বাদ দিয়ে দিন।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করা:

আপনি যদি অ্যালকোহল পান করে থাকেন তাহলে অ্যালকোহল পান সীমাবদ্ধ করুন।

বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং স্থূলত্ব হতে পারে এগুলি সবই আপনার হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

পুরুষদের জন্য দিনে দু’বারের বেশি এবং মহিলাদের জন্য একবারের বেশি মদ্যপান স্বাভাবিক হার্টের ছন্দকে বাধা দিতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

বসে থাকা:

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সক্রিয় লোকের তুলনায় যারা যথেষ্ট পরিমাণে চলাফেরা করেন না এবং যারা প্রতিদিন পাঁচ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে বসে থাকেন তাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি রয়েছে।

যদি আপনার কাজের জন্য সারাদিন একটি ডেস্কে বসে থাকা প্রয়োজন হয়, তাহলে কিছু সময়ের জন্য উঠুন।

প্রতি ঘন্টায় ১ বার উঠে পাঁচ মিনিট হাঁটুন। এই সামান্য হাঁটা আপনার ধমনীগুলি নমনীয় এবং রক্তকে সঠিকভাবে প্রবাহিত রাখতে সহায়তা করবে।

অনেক বেশি স্ট্রেস:

স্ট্রেস শরীরকে অ্যাড্রেনালিন ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করে, যার কারণে সাময়িকভাবে আপনার হার্টের হার বৃদ্ধি পায় এবং রক্তচাপ বাড়তে পারে।

সময়ের সাথে সাথে, অত্যধিক স্ট্রেস হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস:

লবণ বেশি খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা সহ নানা অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে।

লবণ খেলে যে কিডনির ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়, ওবেসিটি বা স্থূলতার জন্যও অনেকটাই দায়ী। হার্টের রোগ বিশেষ করে যারা ইস্কিমিয়ায় ভোগেন এমন মানুষদের জন্য অতিরিক্ত লবণ ক্ষতি করে।

অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে হার্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে জর্জিয়াতে সবথেকে বেশি মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপের ন্যায় পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়াতে এর ফলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।

রেফারেন্স: