অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে কি কি ক্ষতি হয়?

লবণ, সোডিয়াম ক্লোরাইড হিসাবেও পরিচিত। স্নায়ু প্রবণতা পরিচালনা, পেশী শিথিল করা, জল এবং খনিজগুলির যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখতে মানবদেহের জন্য অল্প পরিমাণে সোডিয়াম প্রয়োজন। এটি অনুমান করা হয় যে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আমাদের দেহের প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম অর্থাৎ লবণ প্রয়োজন। তবে ডায়েটে খুব বেশি সোডিয়াম উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এছাড়া এটি ক্যালসিয়ামের ক্ষতিও করতে পারে।

লবণ প্রায় ৪০% সোডিয়াম এবং ৬০% ক্লোরাইড দিয়ে তৈরি। প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুডেও অনেক লবণ ব্যবহার করা হয়। এই খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো বলে মতামত গবেষকদের। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া শরীরের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটি রক্তচাপ বাড়ানো, হাড়কে দুর্বল করে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।

salt sffect

অতিরিক্ত লবণ কোষের তরলের পরিমাণ এবং রক্ত প্রবাহে রক্তের পরিমাণ উভয় বৃদ্ধি করে। রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার অর্থ হৃৎপিণ্ডের জন্য আরও কাজ করা এবং রক্তনালীগুলিতে বেশি চাপ। সময়ের সাথে সাথে অতিরিক্ত কাজ এবং চাপ রক্তনালীগুলিকে শক্ত করে তোলে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হয়।

কিছু প্রমাণ রয়েছে যে অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে না দিয়ে হার্ট এবং কিডনিগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এবং এটি হাড়ের জন্যও খারাপ হতে পারে।এবার জেনে নেওয়া যাক, অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে কি কি ক্ষতি হয়-

রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে:

লবণ খাওয়ার পরিমাণে যদি নিয়ন্ত্রণ আনা না যায়, তা হলে ব্লাডপ্রেশার মারাত্মক ভাবে বাড়তে শুরু করে। এমনটি হলে বাড়ে হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কাও। লবণ মানেই সোডিয়াম আর এই খনিজটির মাত্রা রক্তে যত বাড়ে, তত পটাশিয়ামের পরিমাণ কমতে শুরু করে।

যে কারণে ব্লাড ভেসেলের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। যে কারণে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।

salt too

তীব্র তৃষ্ণা:

নোনতা খাবার খাওয়ার ফলে আপনার মুখ শুকিয়ে যাবে বা খুব তৃষ্ণার্ত পাবে। অতিরিক্তি তরল গ্রহণের ফলস্বরূপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হবে। অন্যদিকে, উচ্চ পরিমাণে লবণ খাওয়ার পরে তরল গ্রহণ বা পানি পান করতে ব্যর্থ হলে আপনার দেহের সোডিয়ামের স্তরগুলি নিরাপদ স্তরের উপরে উঠতে পারে।

যার ফলে হাইপারনেট্রেমিয়া নামে পরিচিত একটি অবস্থা তৈরি হতে পারে। যদি হাইপারনেট্রেমিয়া চিকিৎসা না করা হয় তবে খিঁচুনি, কোমায় চলে যাওয়া এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে:

হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়বে না কমবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে রক্তচাপের ওপর। ব্লাডপ্রেশার যদি বাড়তে থাকে, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে আর এমনটি হলে স্বাভাবিক ভাবেই করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

সেই সঙ্গে বাড়ে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও। আসলে রক্তচাপ বাড়তে থাকলে হার্টে ঠিকমতো অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে হার্টের পেশিরা শক্ত হতে শুরু করে। যে কারণে হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

salt too much eat

মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমবে:

বেশি মাত্রায় লবণ খেলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ব্রেণ ফাংশন ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং কমবে মনোযোগও। আর এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দৈনন্দিন জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।

পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:

বেশ কয়েকটি গবেষণায় উচ্চ লবণের ডায়েটকে পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকির সাথে সংযুক্ত ছিল। ২৬৮,০০০ এরও বেশি অংশগ্রহীতা সহ একটি পর্যালোচনা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন যারা ১ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন ৩ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৬৮% পর্যন্ত হতে পারে। তাই এমন মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে রোজের ডেয়েটে লবণের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমান।

কিডনি খারাপ হতে শুরু করে:

শরীরে ইলোকট্রোলাইটসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে লবণ কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কিন্তু তাই বলে বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ যত বেশি করে লবণ আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে তত বেশি কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রক্তচাপও, যা যে কোনও মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

অস্টিওপোরোসিস:

শরীরে লবণের মাত্রা যত বাড়বে, তত পানির পিপাসা পাবে। আর পানি বেশি করে খেলে প্রস্রাবও বেশি করে হবে। ফলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে শুরু করবে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে। আর এমনটা হলেই ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল হয়ে গিয়ে দেখা দেবে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ।

হাত ও পায়ে ফোলাভাব:

আপনি খেয়াল করতে পারেন যে অনেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফুলে ফেঁপে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত লবণ খেলে কখনো কখনো হাত ও পায়ে পানি জমে। যার ফলে হাত ও পায়ে ফোলাভাব তৈরি হয়। যা কিডনি রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব ঝুঁকির কারণ হয়ে থাকে। লবণ খান কিন্তু বেশি মাত্রায় খাবেন না। তাহলেই দেখবেন সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন।

রেফারেন্স: