গর্ভবস্থায় চীনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা।
স্কুলের গেটের বাইরে, রাস্তার পাশে ফুটপাতে, পার্কে বসে বা সকালের বা বিকেলের নাস্তায়, আমাদের কাছে যে বাদামটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হলো চীনাবাদাম।
বাদামী রঙের খোলসের ভেতর থেকে ছোট ছোট বাদাম বের করে খাওয়া যেন আমাদের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য।
সময় কাটানোর জন্য খাওয়া এই ছোট্ট খাবারটিতে রয়েছে অনেক অনেক পুষ্টিগুণ।
চীনাবাদাম স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পাশাপাশি, প্রোটিন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন “বি”, ক্যালরি এবং ফাইবারে ভরপুর।
বাদামে এত এত পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও এতে কার্বোহাইড্রেট কম যা আমাদের স্থুলকায় করে না।
চীনাবাদামের বৈজ্ঞানিক ভাষায় “Arachis hypogeal” আর ইংরেজীতে peanuts. এর উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকায়।
চিনাবাদামে বাদাম শব্দের উপস্থিতি থাকলেও এটি অন্যান্য বাদামের মত গাছে ধরে না। তাই হয়তো এদের ইংরেজিতে গ্রাউন্ডনাটও (groundnut) বলা হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণ বিবেচনায় এই বাদামের জুড়ি মেলা ভার। এই বাদাম গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য বাদাম খুবই উপকারী একটি খাদ্য উপাদান।
গবেষণায় দেখা গেছে, মা ও গর্ভের শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিনাবাদাম কার্যকর।
আসুন এবার জেনে নিই, গর্ভবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়া কতটা উপকারের-
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
বাদাম দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চীনাবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো।
ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর:
এতে আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “বি”, ভিটামিন “ই”, ফাইবার, প্রোটিন, পলিউনস্যাচুরেটেড।
গর্ভধারণের পর যারা মাছ, মাংস খেতে পারেন না, তাদের শারীরিক পুষ্টির যোগানদাতা হিসেবে চীনাবাদাম বেশ কার্যকর।
চীনাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে:
চীনাবাদাম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে যার অর্থ রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না।
বরং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে কারণ এতে শর্করা তুলনামূলকভাবে কম তবে প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবার বেশি।
গবেষণায় দেখা যায় যে চীনাবাদাম গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
ত্বকের সুরক্ষায়:
গর্ভধারণের পর অনেক নারী মুখে ব্রণ, ত্বকের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া সহ নানারকম সমস্যায় ভোগেন। ত্বকের এই সমস্যায় চিনাবাদাম খুব উপকারী।
ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এটি। সেক্ষেত্রে, বাদাম দুধ ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক মসৃণ হয়।
এছাড়াও গর্ভধারণের সময়ে পেটে ফাটা দাগ হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এই সমস্যা দূর করতে ত্বকে প্রতিদিন চিনাবাদাম তেল লাগাতে পারেন।
বাচ্চার মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে:
চীনাবাদামে থাকা ভিটামিন “বি”-9 ও ফলেট শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে।
এছাড়া মায়ের ডিম্বাশয়ের নানা জটিলতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এই পুষ্টি উপাদানগুলো। ফলে গর্ভে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় না।
চীনাবাদামকে “মস্তিষ্কের খাদ্য” হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এবং দাঁত ও হাড় মজবুত করে:
গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
এছাড়াও চিনাবাদামে আছে ম্যাগনেশিয়াম, যা কেন্দ্রীয় স্নাযুতন্ত্রের কাজ সচল রাখতে সাহায্য করে। এবং শিশুর ওজন বাড়াতেও ম্যাগনেশিয়াম সাহায্য করে থাকে।
ত্বক, চুল ও মাংসপেশী গঠনে:
চীনাবাদামে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন আছে। তাই শিশুর মাংসপেশী গঠনে সাহায্য করে এটি। শিশুর ওজন বাড়াতেও এটি সাহায্য করে থাকে।
এছাড়াও বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “ই” আছে। ভিটামিন “ই” ত্বক ও চুলের সুস্থতায় খুবই উপকারী।
গর্ভবতী মা যদি নিয়মিত বাদাম খান তাহলে শিশুর ত্বক ও চুল ভালো হয়।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে:
চীনাবাদামের বেশিরভাগ ফ্যাট হল মনস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার একজন ব্যক্তির রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে ভালো করতে পারে। এর ফলে, হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে:
চীনাবাদাম মধ্যে ফোলেট সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ফোলেট সুস্থ্য লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে এবং গর্ভাবস্থায় খুব ভালো।
তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় চীনাবাদাম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
তবে চিনাবাদাম খেলে যাদের এ্যালার্জি বা অন্য সমস্যা হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখা ভালো, গর্ভবতী মা ও শিশুর সুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শই শেষ কথা।