গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে কোন ফলগুলো খাওয়া ভালো।
গর্ভবতী মায়ের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মা গর্ভকালীন সময়ে যে সকল খাবার গ্রহণ করে থাকে সেটাই তার গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার একমাত্র রসদ।
কোনো বাড়িতে গর্ভবতী মহিলা থাকলে প্রথমে প্রয়োজন গর্ভের বাচ্চার গঠন ও উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর ও শক্তি প্রদানকারী খাবার নিশ্চিত করা।
গর্ভবতী মায়েদের প্রতিবারের খাবারের তালিকায় বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য যেমন আমিষ জাতীয় খাবার রাখা উচিৎ। ঠিক তেমনি গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় ফল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর ডায়েট ভ্রূণ এর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো কোষ্টকাঠিন্যতা। নিচে এমন কিছু ফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যেগুলো গর্ভবতী মহিলাদের বা মায়েদের কোষ্টকাঠিন্যতা দূর করতে এবং গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
পেয়ারা:
পেয়ারা ভিটামিন “সি” এবং ভিটামিন “ই”, পলিফেনল, ক্যারটিনয়েড, ফোলেট সমৃদ্ধ। পেয়ারাতে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিউপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আদর্শ।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলারা পেয়ারা খেলে পেশী শিথিল থাকতে, হজমে সহায়তা করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য একটি আদর্শ ফল।
খেজুর:
গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক সপ্তাহ জুড়ে খেজুর খেলে বাচ্চা প্রসব কালীন শ্রমের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে।
এটি প্রসবকালীন শ্রমের সময় হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হবে।
কাঁঠাল:
চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর প্রায় সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়।
গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। দুগ্ধদানকারী মা যদি পাকা কাঁঠাল খায় তাহলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কমলালেবু:
কমলালেবু শরীরকে হাইড্রেটেড থাকতে সহায়তা করে। এছাড়া ফোলেটের একটি দুর্দান্ত উৎস কমলালেবু।
ফোলেট হল ভিটামিন “বি” যা গর্ভের বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের ত্রুটি অর্থাৎ নিউরাল টিউব ত্রুটি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এটি ভিটামিন “সি” এর দুর্দান্ত উৎস।
ভিটামিন “সি” গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের শোষণকে বাড়িয়ে তোলে।
লেবু:
দেখা গেছে যে, লেবুর পানি বা লেবু শরবত পান করা গর্ভাবস্থায় বমিভাব দূর করতে সহায়তা করে। লেবুতে ভিটামিন “সি” এর পরিমাণও বেশি থাকে যা, কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে পাচন্ত্রন্তকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
লেবু দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে ফেলতে পারে, তাই লেবু খাওয়ার পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কলা:
কলা পটাসিয়ামের আর একটি ভাল উৎস। এতে ভিটামিন বি-6, ভিটামিন “সি” এবং ফাইবার রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মহিলারা কোষ্ঠকাঠিন্য অনুভব করে।
ফাইবার সমৃদ্ধ কলা খাদ্য তালিকায় রাখার মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্টকাঠিন্যতা দূর হতে পারে।
রিসার্চ ট্রাস্টেড সোর্স দেখায় যে, কলাতে থাকা ভিটামিন বি-6 গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে বমিভাব এবং বমি দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
আপেল:
আপেল এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “সি” থাকে এমনকি পটাসিয়ামেরও একটি ভাল উৎস। গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া গর্ভের বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
থোরাক্স ট্রাস্টেড সোর্স জার্নালে প্রকাশিত একটি স্টাডি ট্রাস্টেড দেখা গেছে, যে সব গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় আপেল খাই সেই সব মায়ের বাচ্চাদের শৈশবে হাঁপানি ও অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
নাশপাতি:
নাশপাতিতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এছাড়া এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ফোলেট যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাশপাতিতে থাকা উচ্চ ফাইবার গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে পারবে।
এবং এতে থাকা পটাসিয়াম গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর হার্ট এর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
ডালিম:
ডালিম গর্ভবতী মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে আয়রনের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে ভিটামিন “কে”, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, প্রোটিন রয়েছে। হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভিটামিন “কে”, ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজন।
গবেষণা থেকে জানা যায় যে ডালিমের রস পান করালে প্ল্যাসেন্টায় (placenta) আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
প্ল্যাসেন্টা এমন একটি অঙ্গ যা গর্ভাবস্থায় আপনার জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে। এটি আপনার গর্ভের শিশুর জন্য অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
এছাড়া জামরুল, স্ট্রবেরী, আম, অভ্যাকাডো, তরমুজ ইত্যাদি গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় থাকা ভালো। প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে।
দুই লিটারের কম হলে হবে না। সবসময় হাসিখুশি থাকুন। গান শুনুন। ভালো ভালো বই পড়ুন। ব্রেইন খাটিয়ে কিছু করুন। সুস্থ্যসবল মা-ই পারে সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দিতে।
হেলথলাইন, টাইমস অফ ইন্ডিয়া