পেঁপের পাতা ডেঙ্গু জ্বর কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

কি? পেঁপের পাতা! এতো কিছু রেখে কিনা শেষমেশ পেঁপের পাতা। হুম পেঁপের পাতা, সত্যই অবাক হতে হয় পেঁপের পাতার এতো গুণ। এই পাতার উপাকারি দিক বিবেচনা করে আয়ুর্বেদ এটিকে কয়েকটি প্রাণঘাতী রোগ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হিসাবে বিবেচনা করে।

পেঁপের পাতা কিভাবে খাবো?

জুস করার জন্য সবার আগে ৫-১০ টাটকা পেঁপের পাতা নিন। এগুলি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এরপরে পাতাগুলি ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে পাতলা কাপড় বা ছাকনি ব্যবহার করে ছেকে নিন। তারপর এটা ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। ৫ চা চামচ পাতার রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খান।

আজ, বিশ্বের সবচেয়ে বহুল পরিমাণে চাষ করা ফসলের মধ্যে পেঁপে রয়েছে। এর ফল, বীজ এবং পাতাগুলি প্রায়শই বিভিন্ন রন্ধনসম্পর্কীয় এবং লোকজ ঔষধে ব্যবহৃত হয়। পেঁপে পাতার চা, এক্সট্র্যাক্টস, ট্যাবলেট এবং রস হিসাবে পেঁপে পাতা অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন।

স্বাদে তিতা হলেও এই পাতাই রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল গুণাগুণ এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “সি” এবং বিটা ক্যারোটিন। পেঁপের বীজে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।

পেঁপের পাতা উপকারিতা

নিচে পেঁপের পাতা উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত লক্ষণগুলি কমাতে পারে:

পেঁপে পাতার অন্যতম ঔষধি সুবিধা হল ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় কার্যকরী। ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত ভাইরাস যা সংক্রামিত হলে জ্বর, অবসন্নতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং ত্বকে ফুসকরির মতো লক্ষণ দেখা দেয়। গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তে প্লেটলেট স্তর কমে যায়। রক্তে প্লেটলেট স্তর কমে গেলে মারাত্মক হয়।

বর্তমানে ডেঙ্গুর নিরাময়ের কোনও প্রতিকার না থাকলেও এর লক্ষণগুলি পরিচালনা করার জন্য বেশ কয়েকটি চিকিৎসা রয়েছে তার মধ্যে একটি পেঁপে পাতা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কয়েক শতাধিক ব্যক্তিদের মধ্যে পেঁপে পাতার রস রক্তের প্লেটলেট স্তরকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছিল।

হজমের জন্য ভালো:

পেঁপে পাতার চা এবং রস হজম লক্ষণগুলি যেমন গ্যাস, ফোলাভাব এবং অম্বল দূর করতে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। পেঁপে পাতায় ফাইবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর হজম ফাংশন ঠিক রাখে। পেপেইন পেঁপে পাতার অনন্য যৌগ। পেপেইন বড় প্রোটিনগুলি ভেঙে ছোট করে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত করে।

এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে:

পেঁপে পাতা ত্বকের ফুসকুড়ি, পেশী ব্যথা এবং জয়েন্ট ব্যথা সহ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক প্রদাহ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই পাতায় বিভিন্ন পুষ্টি এবং উদ্ভিদ যৌগ যেমন-পেপেইন, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ভিটামিন “ই” রয়েছে যা প্রদাহ-প্রতিরোধী হিসাবে কাজ করে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পেঁপে পাতার রস বাতজনিত প্রদাহ এবং ফোলা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য পেঁপে পাতাকে ঐতিহ্যবাহী ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। টেস্ট-টিউব স্টাডিতে দেখা গেছে প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার একটি শক্তিশালী দক্ষতা রয়েছে।

পেঁপে পাতা ছাড়াও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে:

রক্তে বাড়তে থাকা সুগারে নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন? আর চিন্তা না করে পেঁপে পাতার রস খেয়ে নিন। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ উন্নত করার জন্য প্রাকৃতিক থেরাপি হিসাবে পেঁপের পাত ঔষধে ব্যবহার করা হয়।

পেঁপে পাতায় শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রক্তে শর্করার প্রভাব হ্রাস কমায়। তবে এটা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

চুলের বৃদ্ধি করে:

শরীরে উচ্চ মাত্রার অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হলে চুল পড়ে যায়। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং পরবর্তীকালে চুলের বৃদ্ধি করতে পারে। পেঁপের পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সহ বেশ কয়েকটি যৌগ।

এছাড়া পেঁপের পাতায় অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বৃদ্ধি বাধা দিয়ে চুল এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

পিরিয়োডের সময়কার কষ্ট দূর করে:

এবার থেকে মাসের এই বিশেষ কয়েকটা দিনে নিয়ম করে পেঁপে পাতার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখেন ক্র্যাম্প এবং যন্ত্রণা দুইই কমবে। আসলে পেঁপে পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ একদিকে যেমন দেহের ভেতরে প্রদাহ কমিয়ে যন্ত্রণার প্রকোপ কমায়।

অন্যদিকে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দূর করে অন্যান্য নানাবিধ সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সতর্কতা:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, পেঁপে পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার প্রভাবে অনেকেরই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে, বিশেষত গর্ভবতী মহিলাদের। তাই তো পেঁপে পাতার রস খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই বিষয়টি মাথায় রাখথে ভুলবেন না যেন!

এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স:

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: