পেঁপের জুস শরীর ঠান্ডা রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও তারুণ্য ধরে রাখে।

প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ ফলের সতেজতা এবং মিষ্টি স্বাদ অমৃতের শীতল ফোঁটা গ্রীষ্মের দিনের সমস্ত ক্লান্তি নিরাময় করে পেঁপে জুস। এটি প্রকৃতির ওষুধ যা প্রায় সকল স্বাস্থ্য সমস্যার নিরাময় করতে পারে।

এটি একটি অবিশ্বাস্য ফল যা চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বেশি জনপ্রিয়। এই ফলটির পাশাপাশি আর জুসও জনপ্রিয়।

গ্রীষ্মের তাপে শীতলতার পরশ বুলাতে আমরা কোল্ড ড্রিংক এর পরিবর্তে পাকা পেঁপের জুস খেতে পারি।

পেঁপের জুস ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস।

সুমিষ্ট এই জুসটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ যা প্রদাহ হ্রাস করতে পারে, রোগের সাথে লড়াই করতে পারে এবং তরুণ দেখাতে সহায়তা করে।

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মাংস সিদ্ধ করার জন্য পেঁপে ব্যবহার করে আসছে।

পেঁপের রসের উপকারিতা

নিচে পেঁপের রসের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পানিশূন্যতা দূর করে:

এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।

পাঁকা পেঁপেতে ৮৮% পানি রয়েছে। তাই পেঁপে জুস খেলে শরীরের পানিশুন্যতা দূর হয় এবং শরীর সুস্থ্য ও সতেজ থাকে।

তাই গ্রীষ্মের তাপে শীতলতার পরশ বুলাতে আমরা কোল্ড ড্রিংক এর আর পরিবর্তে পাকা পেঁপের জুস খেতে পারি।

দেহকে শীতল করে:

গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতি যখন রুক্ষ হয়ে ওঠে তখন শীতলতার পরশ বুলিয়ে দিতে প্রকৃতিতে আবির্ভাব হয় তরমুজ, বাঙ্গির পাশাপাশি সহজলভ্য ফল পেঁপে। পেঁপে একটি প্রাকৃতিক শীতলকারক।

গরমে শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে পেঁপে জুস। এটি কেবল শরীরকে হাইড্রেট করে না, অতিরিক্ত ঘামের কারণে নষ্ট হওয়া পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইট পূরণে সহায়তা করে।

ওজন কমাতে:

যদি আপনি ওজন হ্রাস করতে চান তাহলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপের জুস অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। ফাইবার সমৃদ্ধ পেঁপেতে ক্যালরির পরিমাণ কম কিন্তু ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ খুব বেশি।

পেঁপের জুস যার ফলে নিয়মিত পেঁপে খেলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। তার উপর পেঁপেতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্যালরি বার্ন করে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। 

এজন্য আমাদের শরীরের ওজন কমাতে পেঁপের জুস খুবই কার্যকরী।

রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে:

ভাইরাস ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের শরীরের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১ গ্লাস পেঁপের জুস আপনার শরীরের রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।

এতে থাকা উচ্চ ভিটামিন “সি” সামগ্রী আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন “সি” এর প্রয়োজনীয়তার ২০০% পূরণ করতে পারে।

দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করে:

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিনের ডায়েটে কাঁচা বা পাকা পেঁপে অন্তর্ভুক্ত করুন।

কারণ পেঁপে ভিটামিন “এ” এর পাওয়ার হাউস। তাই পেঁপের জুস দৃষ্টিশক্তির সমস্যা আছে এমন শিশুদের জন্য সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বয়স্কদের মধ্যে বয়স সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয়ের অগ্রগতিও কমিয়ে দিতে পারে পেঁপের জুস।

পিরিওডের ব্যথা কমাতে:

পেঁপে পিরিওডের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। পেঁপে থেকে পাওয়া এনজাইম পাপাইন মাসিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক উপশম দেয়।

স্ট্রেস প্রতিরোধ করে:

অধ্যয়নগুলি থেকে জানা যায় যে স্ট্রেস এর পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ ভিটামিন “সি” এর ঘাটতি।

প্রতিদিন পেঁপের জুস পান করা স্ট্রেসকে কমিয়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে, হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে:

পেঁপের জুসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফাইটোনিট্রিয়েন্ট ফ্রি রেডিকেল এর ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

নিয়মিত পেঁপের জুস খেলে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে:

পেঁপের জুস ভিটামিন “এ” এর একটি ভালো উৎস।

ভিটামিন “এ” ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করে, ত্বককে তাৎক্ষণিক হাইড্রেট করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। এই জুসে থাকা পটাসিয়াম ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে।

পেঁপের রসের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগান এবং ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে:

পেঁপের রস একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার, এটি এনজাইমগুলির জন্য ধন্যবাদ।

চুলে কেরাটিনের মাত্রা বজায় রাখতে এবং খুশকি মুক্ত স্ক্যাল্পের জন্য পেঁপে সমপরিমাণ জলপাইয়ের তেলের সাথে মিশ্রিত করুন। তারপর চুলে লাগান।

বয়স কম দেখাতে সাহায্য করে:

আমরা সবাই সবসময় নবীন থাকতে চাই কিন্তু সেটা কারো পক্ষেই সম্ভব না। 

সময়ের সাথে সাথে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে এটাই স্বাভাবিক। চেহারায় ছাপ পড়ার এই প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ করা সম্ভব নিয়মিত পেঁপের জুস খাওয়ার অভ্যাস এর মাধ্যমে।

পেঁপেতে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই” এবং বিটা ক্যারোটিন এর মত এন্টিঅক্সিডেন রয়েছে যা ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বয়স বৃদ্ধির লক্ষণ গুলি রোধে সহায়তা করে। আমরা যেকোন ফলের জুস খেতে পারি।

রেফারেন্স:
এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: