পাইলস রোগীদের কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত নয়।
শাকসবজি কম খাওয়া, অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া। নিয়মিত ব্যায়াম না করা। ফ্যাটি ও হাই প্লোটিনযুক্ত খাবার যেমন: মাংস, চিজ, মাখন, ভাঁজাপোড়া, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি বেশি খাওয়া। এই সব কারণে পাইলস হতে পারে।
পাইলস (hemorrhoid) বা অর্শ্বরোগ মলদ্বারে হয়। পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারে এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তনালীগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। মলদ্বারের নিচের অংশ বা মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে যায়।
পাইলসে ব্যথা, রক্তপাত এবং চুলকানি হয়। সৌভাগ্যক্রমে, কিছু খাবার আছে যেগুলো ব্যথা, রক্তপাত এবং চুলকানি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।
এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। পাইলস রোগীদের কি খাওয়া উচিত এমন কয়েকটি খাবার নিচে দেওয়া হলো:
শাকসবজি:
প্রচুর সবুজ শাকসবজি গ্রহণ হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাই পাইলসের রোগীদের শাক শাকসবজির খাওয়ার কোন বিকল্প হয় না।
কঁচু শাক, লাউ, লাল শাক, পালংশাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, টমেটো এই সব শাক শাকসবজি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে।
শাকসবজিতে (Vegetables) থাকা ফাইবার মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অন্ত্রের গতি বিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি পাইলস প্রতিরোধের জন্য দুর্দান্ত।
রুট বা মূল জাতীয় সবজি:
রুট জাতীয় সবজি যেমন- মিষ্টি আলু, শালগম, বিট, কঁচু, কঁচুর মুখি, গাজর এগুলোতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে। রুট জাতীয় বা মূল জাতীয় সবজি (Root vegetables) কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করার সাথে সাথে এটি পাইলসের লক্ষণগুলো কমাতে পারে।
শসা এবং তরমুজ:
শসা এবং তরমুজ পাইলসের রোগীদের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি কারণ হল ডিহাইড্রেশন, শসা (cucumber) এবং তরমুজ (watermelon) শরীরে পানির ভারসাম্যকে ঠিক রাখতে এবং এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
বীজ জাতীয় খাদ্য:
পাইলস প্রতিরোধ করার চেষ্টা করার মানে হল ডায়েটে পর্যাপ্ত ফাইবার রাখা। আমরা খাবার থেকে দুই ধরণের ফাইবার পেতে পারি- দ্রবণীয় এবং অ-দ্রবণীয়।
দ্রবণীয় ফাইবার পাচনতন্ত্রের মধ্যে জেল তৈরি করে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি করে এবং অদ্রবণীয় ফাইবার মলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
বীজ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে শিম, মসুর ডাল, সয়াবিন, বিভিন্ন ধরণের শিমের বীজ, চিনাবাদাম এবং ছোলা রয়েছে।
আস্ত শস্যদানা:
আস্ত শস্যদানা গুলি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। আস্ত শস্যদানা অদ্রবণীয় ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি আপনার হজম স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, পাইলসের ব্যথা এবং অস্বস্তি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
নাশপাতি:
নাশপাতি দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা হজম স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি মাঝারি নাশপাতি (pear) প্রায় ৬ গ্রাম ফাইবার রয়েছে, যা প্রতিদিনের ফাইবারের ২২% পূরণ করতে পারে।
ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। যা পাইলসের জন্য খুবই জরুরী।
আপেল:
নাশপাতির মতো, আপেলেও একটি চিত্তাকর্ষক পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। একটি মাঝারি আপেলে ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে।
এতে পেকটিন রয়েছে, এটি একটি দ্রবণীয় ফাইবার যা পাচনতন্ত্রে জেল-এর মতো তৈরি করে। ফলে মল ত্যাগ করতে সহজ হয়।
কলা:
কলাতে প্যাকটিন এবং প্রতিরোধী স্টার্চ উভয়ই রয়েছে। একটি মাঝারি আকারের কলা ৩ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে।
এর প্যাকটিন ফাইবার পাচনতন্ত্রে জেল তৈরি করার সময়, এর প্রতিরোধী স্টার্চটি বন্ধুত্বপূর্ণ অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়া বৃদ্ধি করে যা পাইলসের জন্য ভালো।
বেশি বেশি পানি পান করুন:
নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা মানে মল নরম রাখা এবং মল সহজেই ত্যাগ করতে পারা। দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন। যদি আপনার পাইলসের কষ্ট কমাতে চান তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
যে খাবারগুলো পাইলসের রোগীদের এড়িয়ে চলা উচিত
দুগ্ধজাত পণ্য, সাদা আটা, লাল মাংস, তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার, কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।
পাইলসের যেকোনো জটিলতায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করুন।
পাইলসের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।