কচু হার্টের জন্য ভালো, ক্যান্সার প্রতিরোধী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কচু একটি ব্যতিক্রম ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার। ভিটামিন, খনিজ, ইলেক্ট্রোলাইটস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো অসংখ্য পুষ্টিতে ভরা। গ্রামাঞ্চলে এখানে–সেখানে অনেকটাই অযত্নে বেড়ে ওঠা কচু। সাধারণত এটাকে আমরা মান কিছু হিসাবে জানি। এই কচু গাছ অনেক বড় হয়ে থাকে। আর পাতা এতো বড় হয় যে বৃষ্টির দিনে এ পাতা ছাতা হিসাবে কাজ করে।

ইংরেজিতে Arum Root বা Taro Root হিন্দিতে Arbi এবং বৈজ্ঞানিক নাম Arum maculatum. কচু নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, হজম প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর রাখতে পারি, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি।

কচুতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন এগুলো মানব শরীরের জন্য অনেক দরকারি উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি-6, ভিটামিন “ই”, পটাশিয়াম, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। কচু দিয়ে মাছের ঝোল বা কচু বাটা খুবই মজাদার পদ।

আর একটা কথাতো বলাই হলো না কচু দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল। এর স্বাদের কথা আর নাই বললাম। কচু আলু ভাজি করার মতো করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিনি বা গুড় দিয়ে ভেজে খাওয়া যায়। এটা বাচ্চারাও কিন্তু খুব পছন্দ করবে। কচু এভাবে রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

কচু স্বাস্থ্যের জন্য কেন এতোটা উপকারী

কচু ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চের একটি দুর্দান্ত উৎস। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়া কচুতে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং পলিফেনল রয়েছে যা ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ক্ষতি এবং ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। তাই কচু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এতোটা উপকারী।

কচুর পুষ্টি উপাদান

১৩২ গ্রাম রান্না করা কচুতে ১৮৭ ক্যালোরি রয়েছে। এছাড়া কচুতে অনেক ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো –

  • ফাইবার: ৬.৭ গ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ: ৩০% (DV)
  • ভিটামিন বি-6: ২২%
  • ভিটামিন “ই”: ১৯%
  • পটাশিয়াম: ১৮%
  • কপার: ১৩%
  • ভিটামিন “সি”: ১১%
  • ফসফরাস: ১০%
  • ম্যাগনেসিয়াম: ১০%

কচু খাওয়ার উপকারিতা

কচু খেতে কিন্তু বেশ সুস্বাদু। খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। নিচে কচুর উপকারিতা দেওয়া হলো –

রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে:

কচুতে দুই ধরণের শর্করা (ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ) রয়েছে যা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য উপকারী। ফাইবার এমন একটি শর্করা যা আমরা হজম করতে পারি না। যেহেতু এটি হজম হয় না, তাই রক্তের সুগারের উপর এর কোন প্রভাব নেই। খাবার খাওয়ার পরে ফাইবার, রক্তে শর্করার দ্রুত বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ ফাইবারযুক্ত ডায়েট যেমন- প্রতিদিন ৪২ গ্রাম গ্রহণ ফাইবার করলে টাইপ-2 ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রক্তের শর্করার পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিগ্রাম/dl হ্রাস পাই। এছাড়া কচুতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চও আমরা হজম করতে পারি না, ফলে এটিও রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে না।

হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে:

ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ আমাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করতে পারে। কচু ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ এর দুর্দান্ত উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি পরিমাণে ফাইবার গ্রহণের ফলে আমাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাই। অন্য আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার ফলে, হার্টের রোগের কারণে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ১৭% হ্রাস পেয়েছিল। এবং কঁচুতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ কোলেস্টেরলকে হ্রাস করে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

এন্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

এতে পলিফেনল রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। কচুতে থাকা প্রধান পলিফেনল হল কোরেসেটিন (quercetin), যা পেঁয়াজ, আপেল এবং চায়েও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। কোরেসেটিন ক্যান্সার কোষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে ধীর করতে পারে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও যা আপনার দেহকে অতিরিক্ত ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

কচু হল ফাইবারের উৎস, প্রতি কাপে ১৩২ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাই তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ফ্যাট কম থাকে। এর কারণ ফাইবার আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে পরিপূর্ণ রাখে এবং উচ্চ মাত্রায় খাওয়া প্রতিরোধ করে। সারা দিনের ক্যালোরি গ্রহণ হ্রাস করে।

হজমের জন্য ভালো:

কচুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ থাকে, এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমাদের শরীর ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ হজম করে না। তাই ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ অন্ত্রের মধ্যে থেকে যায়। যখন ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ কোলনে পৌঁছে যায় তখন এগুলো অন্ত্রে ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলির বৃদ্ধি করে। কিছু গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, ফাইবার এবং প্রতিরোধী স্টার্চ গ্রহণ করলে প্রদাহজনক পেটের রোগ এবং কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

রক্ত স্বল্পতা দূর করতে:

কচুতে আছে আয়রন, যা রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। যাদের রক্ত স্বল্পতা আছে তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। পাশাপাশি কচু গর্ভবতী মায়ের রক্ত সল্পতা দূর করতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য দুর্দান্ত:

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কচু দুর্দান্ত। কারণ এটি পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এতে ফোলেটও রয়েছে। যা ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ সর্দি এবং ফ্লুর মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সাহায্য করে। কচুর মূল হল ভিটামিন “সি”-এর একটি অবিশ্বাস্য উৎস। নিয়মিত কচুর মূল খেলে দেহে ভিটামিন “সি” এর মাত্রা বজায় থাকে এবং আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।

সতর্কতা

কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট উপস্থিতি থাকায় খাবার পর মাঝে মাঝে গলা চুলকায় বা কাটার সময় হাত চুলকায়। তাই রান্না করার সময় হাতে গ্লোভস পরে নিলে ভালো হয়। এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন, netmeds, lybrate