ত্বক ভালো রাখতে এই খাবারগুলি খান। দামি প্রসাধনী ছাড়ুন।
আপনার প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে আপনি মন-প্রাণ উজাড় করে দিচ্ছেন। ত্বকের যত্নের রুটিনে আপনি নিবেদিতপ্রাণ হয়ে এটিকে পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর, ও উজ্জ্বল রাখতে দিন রাত এক করে দিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে। দামি দামি প্রসাধনী ব্যবহার করছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আপনার সব পরিশ্রম পন্ড। এবার ঠান্ডা মাথায় শুধু একটু ভাবতে হবে।
যখন ত্বকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি আসে তখন নির্দিষ্ট পুষ্টিগুলির ব্যাপারে মনোনিবেশ করা উচিত। যা আপনার ত্বককে সুরক্ষা, নিরাময় এবং ময়শ্চারাইজ করতে সহায়তা করে।
ত্বক ভালো রাখতে নানান রকমের প্রসাধনীতে বাজার এখন সয়লাব। চটকদার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। এগুলোর পিছনে ছুটে কোনো লাভ নেই।
Beauty ইন্ডাস্ট্রি বা সৌন্দর্য শিল্পটি আপনাকে বিশ্বাস করাতে চায় যে ঝলমলে ত্বক সমস্ত ব্যয়বহুল পদ্ধতি বা ক্রিম নির্ভর।
তারা এখানে আপনাকে একটা বিষয় লুকিয়ে যায়। সেটা হলো খাবারের পুষ্টি সম্পর্কিত। প্রসাধনীর চেয়েও ত্বকের জন্য বেশি জরুরী হলো ভেতর থেকে পুষ্টি লাভ।
ত্বক যদি ভেতর থেকে পুষ্টি না পায় তাহলে অনেক রকম প্রসাধনী ব্যবহার করার পরেও ত্বককে নির্জীব দেখাবে।
চকচকে, অধিক যৌবনদীপ্ত ত্বক পেতে প্রাকৃতিকভাবে সহায়তা করে এমন কয়েকটি খাবার দেওয়া হলো।
পাশাপাশি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কিছু খাবার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
আসুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু খাবারের কথা যেগুলো ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টির যোগান দেয়।
ফল-মূল:
নিয়মিত ফলমূল খেলে ত্বক ভালো থাকে। বিশেষ করে ভিটামিন “এ” ও ভিটামিন “সি” যুক্ত ফল ফলাদি ত্বকের সজীবতার জন্য জরুরী।
আমলকি, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, নানান রকম বেরি জাতীয় ফল ত্বককে ভালো রাখে এবং সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুতে গাজরের তুলনায় বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণে কয়েক গুন বেশি।
এটি প্রোভিটামিন “এ” হিসাবে কাজ করে যার অর্থ এটি আমাদের দেহে ভিটামিন “এ” তে রূপান্তরিত হয়।
বিটা ক্যারোটিন যেমন গাজর, পালংশাক এবং মিষ্টি আলু থেকে পাওয়া যায়। মিষ্টি আলুতে ৭৬৯% (DV) বিটা ক্যারোটিন।
এটি প্রাকৃতিক সানব্লক হিসাবে কাজ করে যা, রোদে পোড়া, মৃত কোষ এবং ত্বকের শুস্কতা এবং কুঁচকানো ভাব দূরকে করে ত্বককে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে।
সব থেকে মজার বিষয় হল, প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আমাদের ত্বককে কমলা রঙ দিতে পারে।
ব্রকলি:
ব্রকলি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন “সি”, “ই” এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে।
ভিটামিন “সি” ও “ই” ত্বকে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন “ই” সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির ক্ষতি থেকে ত্বককে কিছুটা হলেও রক্ষা করে।
বাদাম:
যদি প্রশ্ন করা হয় ত্বকের জন্য সেরা খাবার কোনটি? উত্তরঃ ত্বকের জন্য সেরা খাবার হলো বাদাম। না ভুল হয়নি।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেজগুলি কেবল প্রোটিনে পূর্ণ নয়, এগুলিতে প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ভিটামিন “ই” রয়েছে যা ত্বক পরিষ্কার, মসৃণ এবং যৌবনদীপ্ত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাদাম ভিটামিন “ই” এর একটি অন্যতম উৎস। দৈনন্দিন অনেক খাবারে বাদাম যোগ করে খেতে পারেন প্রতিদিন।
ডার্ক চকলেট:
চকোলেট কেবল ভালোবাসা দিবসের জন্য নয়-ডার্ক চকোলেট নিয়মিত খেলে এটি আপনার ত্বককে ভাল কিছু দিতে পারে। ডার্ক চকলেট খান, ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ান।
আসলে, এর রহস্যটা কি? রহস্যটা হলো- যে কোকো bean বা ফল থেকে চকলেট তৈরি করা হয়।
এই কোকো পাউডার ফ্ল্যাভ্যানলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিতে সমৃদ্ধ, যা ত্বককে হাইড্রেট করতে পারে, এটি ইউভি (UV) রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
মাছ:
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য দুর্দান্ত একটি খাবার। ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে কোমল এবং ময়শ্চারাইজ করে তোলে।
এছাড়া ত্বকের লালচেভাব এবং ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির থেকে রক্ষা করতে পারে।
মাছ ত্বকের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ভিটামিন “ই” এর উৎস। ভিটামিন “ই” আমাদের ত্বককে ফ্রি র্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে।
তবে অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা মাছ না নেয়ে সেদ্ধ, গ্রিল করা অথবা সেঁকা তেলে ভাজা মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
গ্রিন টি:
প্রথমেই বলে নিতে চাই গ্রিন টি ত্বকের সূর্যের ক্ষতির হাত থেকে এবং বার্ধক্য থেকে রক্ষা করতে পারে।
গ্রিন টিতে পাওয়া শক্তিশালী যৌগ ক্যাটচীন আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এটি ত্বক ফর্সা করতেও কার্যকরী।
এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা ত্বকে বলিরেখা, কালচে দাগ পড়তে দেয় না। যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
গাজর:
প্রতিদিন একটি করে গাজর আপনার ত্বকে রাখবে সজীব ও উজ্জ্বল। গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে যা শরীরে গিয়ে ভিটামিন “এ” তে পরিণত হয়।
গাজর ত্বকের টিস্যু গুলোকে সতেজ করে এবং ক্ষতিকর সূর্য রশ্মির থেকে ত্বকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। কাঁচা অথবা রান্না করে দুভাবেই গাজর খেতে পারেন প্রতিদিন।
পানি:
প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি বা পানি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে ত্বকের ৯০% সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পানি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান ঘামের মাধ্যমে বের করে দেয়।
পর্যাপ্ত পানি পেলে ত্বকের কোষে পানি পৌঁছায় এবং ত্বক সজীব দেখায়। পরিমিত পানি খেলে ব্রণের উপদ্রবও কমে।
পানি আমাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের মহৌষধ হিসাবে কাজকরে। যেকোনো ফলের জুসও খেতে পারেন। তবে সেটা অবশ্যই খাঁটি জুস হতে হবে।
কুমড়ার বীজ:
অনেকেই হয়তো জানেন না যে কুমড়া রান্না করার আগে আমরা যেই বীজগুলো ফেলে দেই সেগুলো অত্যন্ত উপকারী এবং ত্বকের জন্য ভালো।
মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক ত্বকের কোষ গুলোকে সজীব করে এবং ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়।
তাই নিয়মিত কুমড়ার বীজ খেতে পারলে ত্বক থাকবে সজীব ও প্রাণবন্ত। কুমড়ার বীজ কড়াইয়ে হালকা ভাজি করে খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
যে খাবারগুলো কম খাবেন বা না খেলে আরো ভালো :
ত্বকের বাহ্যিক সৌন্দর্য নির্ভর করে ভেতরের সুস্থ্যতার উপর। ত্বক ভেতর থেকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল না হলে প্রচুর প্রসাধনী ব্যবহার করেও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায় না।
তাই যেই খাবার গুলো ত্বকের বন্ধু সেগুলো নিয়মিত খান এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
তাহলে আপনার ত্বক কোনো রকমের প্রসাধন ছাড়াই হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও লাবন্যময়।