পাথরকুচি পাতা কিডনি রোগ, মূত্রনালির সংক্রমণ ও পেটফাপায় খুবই কার্যকরী।

অন্য সব উদ্ভিদ থেকে পাথরকুচি পাতাকে খুব সহজে আলাদা করা যাই, খুব সহজে চেনা যাই তার আশ্চর্য এক গুণাবলীর জন্য। সেটি কি? সেটি হলো পাতা থেকে নতুন গাছের জন্ম হয়।

পাথরকুচি পাতা ইংরেজিতে miracle leaf, air plant, ক্যাথেড্রাল বেলস, লাইফ প্ল্যান্ট এবং Goethe গাছের উদ্ভিদ হিসাবে পরিচিত যা স্থানীয়ভাবে মাদাগাস্কারে জন্মে।

এর বৈজ্ঞানিক নাম: Bryophyllum pinnatum. এটি Crassulaceae (ক্র্যাসুলাসি) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। গাছের অংশগুলি ঘন এবং মাংসল হয়। এটির ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।

পাথরকুচি ডায়াবেটিস, ডিউরিসিস, কিডনিতে পাথর দ্রবীভূতকরণ, শ্বাস নালীর সংক্রমণ, পাশাপাশি ক্ষত, ফোঁড়া এবং পোকার কামড়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।

পাথরকুচির কান্ড এবং পাতাগুলি থেকে তৈরি চা মাসিক ক্র্যাম্প, হাঁপানির জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সাইনাসের সমস্যাগুলির পাশাপাশি শক্তির স্তর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এটি মূত্রাশয় পরিষ্কার করতে এবং অন্ত্রগুলি থেকে ক্ষতিকারক টক্সিনগুলি থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করা হয়।

আয়ুর্বেদ এটিকে সংকোচক, বেদনানাশক, বায়ুনাশকারী এবং ডায়রিয়া ও বমি বমিভাবের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করে থাকে।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব ঔষধি গাছ প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে তার মধ্য পাথরকুচি অন্যতম। এটি দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো।

পাথরকুচি পাতার চারপাশে আছে ছোট ছোট গোল খাঁজ। এই খাঁজ থেকে নতুন চারার জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের বয়স হলে ওই গাছের খাঁজ থেকে চারা গজায়।

খুবই অবাক করার মতো একটি বিষয় হলো পাথরকুচি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারা পাওয়া যায়। কাঁকর মাটিতে সহজেই জন্মে। তবে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায়ও দ্রুত বাড়ে।

পাথরকুচি পাতার অবিশ্বাস্য ঔষধি গুণাগুণ:

এই উদ্ভিদে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ব্যথা, ফোড়া এবং ফোলাভাবের মতো প্রায় সকল অসুস্থতার জন্য এটি ভালো কাজ করে। নিচে পাথরকুচির ঔষধি গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো –

কিডনির পাথর অপসারণ:

কিডনি পাথর নিরাময়ে পাথরকুচি পাতার রস ভালো কাজ করে। কিডনি পাথর নিরাময়ে পাথরকুচি পাতার রস (৪০-৫০মিলি) দিনে দুবার খান। এর সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে হবে।

মূত্রথলির ব্যাধিগুলিতে উপকারী:

মূত্রনালীর সাথে সম্পর্কিত যেকোন ব্যাধিতে এর পাতার রস (৫ মিলি) খাওয়ান। এটি একটি খুব ভাল এবং কার্যকর নিরাময়।

পুরুষদের মধ্যে প্রস্রাব সম্পর্কিত ব্যাধি হলে ৪০ থেকে ৬০ মিলি পাথরকুচি পাতার রস দিনে দুবার খান এবং এর সাথে ও সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

ফোড়াতে সহায়ক:

পাথরকুচি পাতা হালকা গরম করুন এবং সেগুলি পিষে নিন। তারপর সেই পেস্ট ফোড়ার উপর ভালভাবে লাগিয়ে নিন। এটি ফোড়া লালভাব এবং ফোলাভাব নিরাময় করে।

পাইলসের রোগে:

কিছুদিন পরিমাণ মতো পাথরকুচি পাতার রসের সাথে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে সেবন করলে পাইলস নিরাময় হয়।

বিষ পোকার কামড়ে:

বিষাক্ত পোকা কামড়ালে পাথরকুচি পাতার রস আগুনে গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা- যন্ত্রণা নিরাময় হয়।

ত্বকের যত্নে:

পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সাথে সাথেই এর মধ্যে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে।

যারা ত্বক সম্বন্ধে সচেতন, তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

সর্দি:

সর্দি পুরানো হয়ে গেছে, সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ উপকারী। পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করে তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে।

তিন চা-চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন হয়। তা থেকে দুই চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে দুবার খেলে পুরানো সর্দি সেরে যাবে এবং সর্বদা কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

মৃগী :

মৃগী রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের উপশম হবে।

এছাড়া টাটকা পাতা পরিমাণ মতো হালকা তাপে গরম করে কাটা বা থেঁতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়। পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ healthbenefitstimes.com,