জলপান আলু বা শাকআলু পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, হার্ট সুস্থ্য রাখে ও ক্যান্সার প্রতিরোধী।

খুবই অপরিচিত একটি সবজি জলপান আলু বা শাকআলু। এটা অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও স্বাস্থ্য উপকারিতা কিন্তু কোন অংশে কম নয়। জলপান আলু খোসা বাদামী রঙের এবং ভিতরে সাদা।

ভিতরের সাদা অংশটা দেখতে আপেলের মতো এবং স্বাদটা হালকা মিষ্টি। খেতে হালকা বাদামের স্বাদযুক্ত ও পানির পরিমাণ বেশি। বাইরের দিক থেকে জলপান আলু দেখতে বীটের মতো।

ইংরেজিতে jicama, Jícama এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Pachyrhizus erosus. জলপান আলু দক্ষিণ আমেরিকান এবং এশিয়ান খাবারগুলিতে ব্যবহৃত হয়। একে আপেল, এশিয়ান পিয়ার, ক্রাঙ্কি আলু বা শালগমের সাথে তুলনা করা হয়।

ইংরেজিতে jicama ছাড়াও জলপান আলু চাইনিজ আলু Chinese potato, Mexican potato, Mexican yam, Mexican yam bean, Mexican water chestnut, Mexican turnip, Leafcup নামে পরিচিত।

জলপান আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম এবং এতে ফাইবার বেশি থাকে। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।

জলপান আলুর পুষ্টিগুণ

এই আলুতে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান, সেইসাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফাইবার। নিচে জলপান আলুর গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ গুলো দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি: ৪৯
  • কার্বস: ১২ গ্রাম
  • ফাইবার: ৬.৪ গ্রাম
  • ভিটামিন-C: ৪৪%
  • ফোলেট: ৪%
  • আয়রন: ৪%
  • পটাসিয়াম: ৬%

জলপান আলু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

এই আলুতে স্বল্প পরিমাণে ভিটামিন “ই”, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি-6, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস রয়েছে। নিচে জলপান আলুর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতে ও ব্যায়ামের জন্য ভালো:

জলপান আলুতে পটাসিয়াম রয়েছে যা রক্তনালীগুলি শিথিল করে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে এবং হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

জলপান আলু নাইট্রেটের প্রাকৃতিক উৎস। শাক সবজি থেকে নাইট্রেট গ্রহণ ব্যায়ামের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করে।

স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জলপান আলুর রস খাওয়ার ফলে রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমেছে।

হজমের জন্য ভালো:

১৩০ গ্রাম জলপান আলুতে ৬.৪ গ্রাম ফাইবার রয়েছে, যা আপনার প্রতিদিনের ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করতে পারে। এতে ইনুলিন (inulin) নামক এক ধরণের ফাইবার থাকে। অধ্যয়নগুলি দেখায় যে, ইনুলিন ৩১% পর্যন্ত অন্ত্রের গতিবিধি বৃদ্ধি করতে পারে।

এছাড়াও জলপান আলুতে পানির পরিমাণ বেশি তাই এটি কোষ্ঠকাঠিন্যতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:

জলপান আলুতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত।

এছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা LDL খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে হ্রাস করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি লিভারকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল তৈরি থেকে প্রতিরোধ করে।

২৩ টি সমীক্ষার পর্যালোচনাতে দেখা গেছে যে, ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ ফলে “খারাপ” LDL কোলেস্টেরল উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়ার জন্য ভাল:

এই আলুতে ইনুলিন বেশি থাকে, এটি প্রিবিওটিক ফাইবার। প্রিবায়োটিক এমন একটি পদার্থ যা দেহের ব্যাকটিরিয়া দ্বারা ব্যবহৃত হয়।

ফলে আমাদের অন্ত্রে “ভাল” ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পাই এবং অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পায়। স্বাস্থ্যকর অন্ত্র অনেক ধরণের রোগ যেমন: স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে:

জলপান আলুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই”, সেলেনিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা কোষের ক্ষতি থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। জলপান আলু ডায়েটরি ফাইবারের একটি ভাল উৎস। ডায়েট্রি ফাইবার কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতিদিন ২৭ গ্রামের বেশি ডায়েটার ফাইবার গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫০% কম ছিল।

ওজন হ্রাস করতে পারে:

এই সবজিতে ইনুলিন ফাইবার রয়েছে, যা ওজন হ্রাস করতে পারে। এছাড়া জলপান আলুতে পানির পরিমাণ বেশি।

তাই অল্প খেলেই পেট ভরে যায় এবং বেশি সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান তারা জলপান আলু ডায়েটে যোগ করতে পারেন।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ান্ত্রনে:

জলপান আলুতে গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক কম রয়েছে এবং ফাইবার বেশি থাকে। জলপান আলু খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাই না।

এর অর্থ হল স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের অংশ হিসাবে জলপান আলু খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রায় স্পাইক প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

২০১৫ সালের একটি প্রাণী সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জলপান আলুর নির্যাস গ্রহণ করার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই জলপান আলু খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: