কোন মশলাগুলো ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, লবঙ্গ, পুদিনা পাতা, লাল মরিচ, মেথি কত ধরণের মশলা। উপকারিতার দিক থেকে সবগুলি মশলা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।। মশলা ছাড়া বাঙালির রান্না চলেই না।

সবসময় আমরা শুধু রান্নার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য রান্নায় মশলা ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবেছি এসব ভেষজ মশলা রান্নার স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী।

কিছু কিছু মসলা আছে যেগুলো খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর এবং ভেষজ ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ইতিহাস জুড়ে এসব ভেষজ মশলা ব্যবহার অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

রন্ধন সম্পর্কীয় ব্যবহারের অনেকে আগে থেকে এসব মসলা ঔষধি বৈশিষ্ট্য এর কারণে পরিচিত। এসব মশলার শক্তিশালী স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

দারুচিনির শক্তিশালী অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রভাব রয়েছে:

দারুচিনির সুমিষ্ট ঘ্রানের জন্য এটি খুবই জনপ্রিয় একটি মশলা। সুমিষ্ট ঘ্রানের পাশাপাশি এর অসাধারণ ঔষধী গুনাগুনও রয়েছে।

দারুচিনিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা প্রদাহের সাথে লড়াই করতে, রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

এই শক্তিশালী মসলাটি সরাসরি রক্তের শর্করার মাত্রা হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দারুচিনি রক্তের শর্করাকে ১০-২৯% কমিয়ে আনতে পারে।

পুদিনা পেট ভালো রাখে এবং বমিভাব কমায়:

পুদিনা ঔষধ এবং অ্যারোমাথেরাপিতে ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুদিনা তেল অন্ত্রের সিন্ড্রোমে ব্যথা কমাতে পারে।

কোলনের পেশীগুলি শিথিল করে, যা অন্ত্রের গতিবিধির সময় ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।

কিছু অধ্যয়নে দেখা গেছে যে অ্যারোমাথেরাপিতে পুদিনা বমি বমি দূর করতে সহায়তা করতে পারে।

হলুদ ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে:

আয়ুর্বেদে, প্রাচীন প্রাকৃতিক নিরাময় হিসাবে বহু শতাব্দী ধরে হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে ঔষধি গুণাবলীসহ কয়েকটি যৌগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারকিউমিন।

কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ-বিরোধী, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে, আলঝেইমার (স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া) রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, হার্টের রোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে

তুলসী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে :

তুলসিকে ভারতে একটি পবিত্র ভেষজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি রক্তে কিছু প্রতিরোধক কোষ বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এছাড়া কাশি কমাতে, ক্যান্সার নিরাময়ে, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী।

লাল মরিচ ক্ষুধা হ্রাস করে এবং ক্যান্সার বিরোধী:

লাল মরিচে থাকা সক্রিয় উপাদান ক্যাপসাইসিন, যা ক্ষুধা হ্রাস কমাতে এবং চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, খাবারে ১ গ্রাম লাল মরিচ যোগ করার ফলে ক্ষুধা হ্রাস পায়।

কিছু প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে লাল মরিচ ফুসফুস ক্যান্সার, যকৃত ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

আদা বমি বমি ভাব নিরাময় করে:

আদা একটি জনপ্রিয় মশলা যা বিভিন্ন ঔষধের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আদা বমি বমি ভাব নিরাময় করতে পারে। আদাতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আদা কার্যকর। সাধারণ জ্বর, সর্দি কমাতে মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা খুবই কার্যকরী।

বিশেষজ্ঞদের মতে আদা কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করতে পারে। কারণ আদায় আছে বিশেষ গুণ, যা অন্ত্রের গতিবিধি সচল করে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাব দূর করতে পারে।

মেথি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে:

মেথি সাধারণত আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত, বিশেষত টেস্টোস্টেরন হলো পুরুষের যৌন হরমোন। মেথি পুরুষের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

এটি পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

অনেক মানব গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ গ্রাম মেথির নির্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে পারে, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।

রসুন হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:

প্রাচীন ইতিহাস জুড়ে, রসুনের ব্যবহারের কারণ এর ঔষধি বৈশিষ্ট্য এর জন্য। নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং সর্দি, জ্বর সহজে আপনাকে কাবু করতে পারবে না।

রসুন হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি LDL খারাপ কোলেস্টেরল প্রায় ১০-১৫% হ্রাস করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এটি রক্তচাপ হ্রাসকারী ওষুধের মতোই কার্যকর ছিল।

রেফারেন্স: