কলার খোসা ত্বকের যত্নে, চুলের স্বাস্থ্যে ও অনেক সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
কলার পুষ্টিগুণের কথা আমরা সবাই জানি। এতে ফাইবার, পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন “সি” এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
কিন্তু কলার খোসা (Banana Peels) কি কোনো কাজে লাগে? এটা সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই ধারণা নাই।
কলা খাওয়ার পর খোসা ফেলে না দিয়ে আমরা নানা কাজে লাগাতে পারি। কলা যেমন উপকারী, এর খোসার উপকারিতাও কিন্তু কম নয়। তবে রাসায়নিকমুক্ত কলা হলে তা উপকারের বদলে ক্ষতিকর হবে।
কলার খোসা যেসব কাজে লাগে
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কলার খোসা ফেলে না দিয়ে যেসব কাজে ব্যবহার করা যায়-
দাঁত ঝকঝকে সাদা করে:
প্রাকৃতিক উপায়ে সাদা ঝকঝকে দাঁতের জন্য কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই দাঁত হলদেটে হয়ে যায়। কলার খোসা কিছুক্ষণ দাঁত এ ঘষুন।
দাঁতে ব্যথা কমাতেও কলার খোসা ভালো কাজ করে।
২০১৫ সালের একটি গবেষণার মতে, কলার খোসাগুলি A. actinomycetemcomitans এবং P. gingivalis- এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকলাপ রয়েছে।
মশা বা পোকামাকড়ের কামড়ের চুলকানি কমায়:
মশা বা পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে ত্বকে এক ধরনে জ্বলুনি বা চুলকানি হয়। কলার খোসার ভেতরের দিকটা আক্রান্ত স্থানে ঘষুন।
দেখবেন জ্বলুনি বা চুলকানি একদম কমে গিয়েছে।
ব্রণ দূর করে:
ছোট ছোট ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে কলার খোসা। কলার খোসার ভেতরের অংশটি দিয়ে ব্রণের ওপর ঘষতে থাকুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন ব্রণ কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছে।
মুখের দাগ দূর করে:
কলার খোসা ব্যবহার করে সহজেই মুখের দাগ দূর করা যায়। মধুর সঙ্গে কলার খোসা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষলে এই দাগ সহজেই দূর হয়।
দাদের ওষুধ:
কলার খোসা দাদের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। দাদের কারণে শরীরের কোনো স্থান চুলকালে সেই স্থানে কলার খোসা ঘষে দিলে চুলকানি বন্ধ হবে এবং দ্রুত দাদ সেরে যাবে।
ত্বকের যত্নে:
ত্বকের যত্নের জন্য কলার খোসার কোন তুলনা হয় না। ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং বলিরেখা কমাতে মুখে কলার খোসা ঘষুন।
এছাড়া চোখের ফোলাভাব কমাতে, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে, ব্রণ দাগের কমাতে সাহায্য করে কলার খোসা।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, কলার খোসায় বেশ কয়েকটি উপাদান রয়েছে যেমন ফেনোলিক, যার শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার দেয়।
২০১১ সালের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস অনুসারে, কলার খোসায় ক্যারোটিনয়েডস এবং পলিফেনলসের মতো বেশ কিছু জৈব যৌগ রয়েছে।
ত্বক মসৃণ করে:
মুখ যদি শুষ্ক আর খসখসে হয়, তাহলে কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম হয়ে গেছে।
খোসপাঁচড়া দূর করে:
খোসপাঁচড়া হলে সেই জায়গায় কলার খোসা মেখে রাখুন। উপকার পাবেন।
গহনা পরিষ্কার করে:
কলার খোসা দিয়ে চামড়ার জুতা, কাপড়, রুপার গয়না পরিষ্কার করতে পারেন। তাতে অলংকার টেকসই হয় ও মসৃণতা বাড়ে।
জুতা পরিষ্কার করতে প্রথমে জুতায় ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে নিন।
এবার পাকা কলার খোসার ভেতরের অংশটা দিয়ে জুতো ওপরে ঘষুন অন্তত ৫ মিনিট। দেখবেন চকচকে হয়ে উঠতে শুরু করেছে জুতা।
চুলের জন্য:
গবেষকরা চুলের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে কলার খোসা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
তারা বলে যে এটি আপনার চুল নরম এবং উজ্জ্বল করবে। কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলকে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য:
কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঔষধের মতো কাজ করে।
রোদে পোড়া দাগ কমায়, সামান্য পুড়ে গেলে কলার খোসা বা পাকা কলা লাগালে জ্বালা যন্ত্রনা একটু কমে। কলার খোসা মাথাব্যথা ব্যথা কমাতে ও সাহায্য করে।
মাটির উর্বরতা বাড়ায়:
খুব ভালো সার হিসেবে কাজ করে কলার খোসা। বাগানে জৈব সার হিসাবে কলার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে গোলাপ ফুল গাছে কলার খোসা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
যেভাবে চা পচিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে গাছ পুষ্টি পায়, সেভাবেই ব্যবহার করুন কলার খোসা পচানো পানি।
একটি পাত্রে কলার খোসা দুদিন পানি দিয়ে রেখে দিন। দুদিন পর পানি থেকে খোসাটা ফেলে দিয়ে পানিটা বাগানের গাছে দিন।