কচুর লতি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো, রক্তস্বল্পতা দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কচুর লতি বা Stolon of taro খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। কচুর লতিতে প্রচুর ফাইবার, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-বি রয়েছে।
কচুর আঁশ দেহ থেকে বর্জ্য বের করে দেয়, খাবার হজমে সাহায্য করে।
চিংড়ি মাছ ও নারকেল কোরা দিয়ে রান্না করা কচুর লতি আপনি একবার খেলে বার বার খেতে চাইবেন।
কচুর লতির আঁঠালো, creamy টেক্সচার এর সাথে ইলিশ মাছের কেমিস্ট্রিও দারুন। অনেকে ছুরি, ফাঁইস্যা, লইট্টা বা চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে কচুর লতি রান্না করে খেয়ে থাকেন। এটিও খেতে ভালো লাগে।
এছাড়াও কচুর লতি চচ্চড়ি, কচুর লতির ভুনা, কচুর লতির ইলিশ, কচুর লতির কোরমা, সরিষা বাটায় কচুর লতি আরও কত রকমের খাবার যে রান্না করা যায় তার শেষ নেই।
মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম চাষকৃত সবজি কোনটি? Taro বা কচু হলো সর্বপ্রথম চাষকৃত সবজি যেটি হাজার হাজার বছর আগে চাষ হয়েছিল। কচুর লতি সাধারণত জলাভূমিতে জন্মে।
কচুর লতির স্বাস্থ্য উপকারিতা
কচুর লতির আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। নিচে কচুর লতির স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
আয়রনের চাহিদা পূরণে:
কচুর সাথে আয়রনের ভালোবাসা যেনো সেই জন্ম থেকেই। একেবারে স্থায়ী ঘর বেঁধেছে কচুর মধ্যে। কচুর লতিতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
একটা কথা আমরা অনেকেই জানি যে, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা সহজে আয়রন বা লৌহ পাওয়ার জন্য বেশি করে কচু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সুস্বাদু কচুর লতি আয়রনের চাহিদা পূরণে দারুন একটি আইটেম। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি পাচ্ছে- এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি ভীষণ উপকারী।
ফাইবার থাকায় হজমে ভালো:
কচুর লতির স্বাস্থ্যসুবিধার কথা বলতে গিয়ে যেটি বলতে দেরি করলে ভুল হবে সেটা হলো ফাইবার বা আঁশ। কচু শব্দটার সাথে ফাইবার বা আঁশ অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত।
এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এর ডায়েটারি ফাইবার হজম সিস্টেমে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়েটরি ফাইবার গ্রহণ আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এটি ডায়রিয়া, ক্র্যাম্পিং, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব, অতিরিক্ত গ্যাস প্রতিরোধ করে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
রক্তে সুগার বাড়ায় না:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন খাবারগুলি আশীর্বাদস্বরূপ? এর উত্তরে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, যে খাবারে চিনিও কম আবার প্রচুর আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ।
লতিতে চিনির পরিমাণ খুবই কম, এদিকে আবার প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে সুগার বা শর্করা বাড়ায় না।
ওজন কমায়:
প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকায় পেট ভরিয়ে রাখে। বার বার খাওয়ার প্রবণতা কমে। যাঁরা দ্রুত ওজন কমাতে চান তাঁরা কচুর লতি খেতে পারেন।
মুখি বা কচুর চেয়ে লতিতে শর্করার পরিমাণ কম। ফলে যারা শর্করা পরিহার করে চলেন তাঁরা কচুর লতি খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
কচুর লতিতে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
নিয়মিত কচুর লতি খেলে দেহে ভিটামিন “সি” এর মাত্রা বজায় থাকে এবং আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
ত্বক, চুল ও হাড় ভালো রাখে:
আয়োডিন একটি খনিজ যা কচুর লতিতে পাওয়া যায়। থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে শরীরের আয়োডিন দরকার।
এই হরমোনগুলি শরীরের বিপাক এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।
গর্ভাবস্থা এবং শৈশবকালে হাড় এবং মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশের জন্য শরীরে থাইরয়েড হরমোনও প্রয়োজন। আয়োডিন দাঁত, হাড় মজবুত করে এবং ত্বক আর চুল ভালো রাখে।
এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে:
কচুর লতিতে আছে প্রচুর আয়রন। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন কচুর লতি তাঁদের জন্য ভালো পথ্য হতে পারে।
এছাড়া এতে থাকা আয়োডিন ও ভিটামিন “বি” মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন “বি” ভীষণ জরুরি। এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেই।
সতর্কতাঃ
- কচুতে অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর লতির তরকারি রান্নার সময় কিছুটা লেবুর রস বা ভিনেগার বা তেঁতুল গোলা মিশিয়ে নিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না।
- যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেশারের) ভুগছেন তারা কচুর লতি খাওয়ার সময় চিংড়ি ও শুঁটকি বর্জন করুন।
- যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সূত্রঃ wiki, USDA