ব্রাহ্মী শাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, আলসার প্রতিরোধী ও হাঁপানি রোগের জন্য ভালো।

এই পৃথিবীতে অনেক ধরণের খাবার আছে যেগুলো খেতে তিতা হলেও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। যেমন আমলকি, হরতকি বা করলা এগুলো অনেক উপকারী। ঠিক তেমনি ব্রাহ্মী শাক (Bacopa Monnieri)। এই শাকটি খেতে খুবই তিতা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রূপে ব্যবহৃত হয় ব্রাহ্মী।

এই শাকে অনেক ঔষধি গুনাগুণ আছে। স্বরভঙ্গ, বসন্তরোগে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, শিশুদের কফ ও কাশিতে এই শাক খাওয়ানো হয়ে থাকে। ব্রাহ্মী শাকে নিকোটিন, ডেসাপোনিন গ্লাইকোসাইডস এবং হারপেষ্টিনের মতো ফাইটোকেমিক্যালস রয়েছে। এই ফাইটোকেমিক্যালগুলি এমন যৌগ যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

এই শাকটিতে প্রচুর স্বাস্থ্যকর যৌগ রয়েছে, এজন্য এটি অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, লিভার-বর্ধক, অ্যান্টি-আলস্রোজেনিক, অ্যান্টি-পাইরেটিক, কার্মিনেটিভ, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ব্রাহ্মী শাকের উপকারিতা

নিচে ব্রাহ্মী শাকের উপকারিতা দেওয়া হলো –

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে:

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ব্রাহ্মী শাক মস্তিষ্কের টনিক হিসাবে কাজ করে যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই শাকে বেকোসাইড রয়েছে, একটি প্রাকৃতিক যৌগ যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, অর্থাৎ মস্তিষ্ক থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে বার্তা পৌঁছাতে সহায়তা করে।

ব্রাহ্মী শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মস্তিষ্কের একটি উপাদান হিপ্পোক্যাম্পাস নিউরনগুলিকে সুরক্ষা দেয় যা মেমরির ক্ষতি প্রতিরোধ করে। নিয়মিত এই শাকটি খেলে মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু হ্রাস পাই এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়।

সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্যাপোনিনস এবং অ্যালকালয়েডের মতো সক্রিয় উপাদান রয়েছে ব্রাহ্মী শাকে, যা ব্যাকটিরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এগুলি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে বাধা দেয়। সুতরাং, এটি মানুষের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ভূমিকা রয়েছে:

ব্রাক্ষী শাকে অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এর উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রীর কারণে। এতে উপস্থিত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ইনসুলিন উৎপাদক এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই শাক শক্তির উৎস হিসাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পেশী এবং শরীরকে সহায়তা করে।

আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে পেটের আলসার হয়। ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলি পেটের অভ্যন্তরে আক্রমণ করে এবং আলসারের অবস্থা আরও খারাপ করে। ব্রাহ্মী শাকে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আলসার থেকে রক্ষা করে।

লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি:

অতিমাত্রায় অ্যালকোহল ও ঔষধ সেবনের ফলে লিভারের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। লিভারের ক্ষতির সময় লিভারের এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পাই। ব্রাক্ষী শাক খেলে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং লিভারের এনজাইম স্তরকে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করে:

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ব্রাহ্মী শাক উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হ্রাস করতে সহায়তা করে। এটি দেহে খারাপ কোলেস্টেরল তৈরি করে এমন এনজাইমকে বাধা দেয়।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

ব্রাহ্মী শাকে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই যৌগগুলি টিউমার বৃদ্ধি এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে বাঁধা দেয়।

হাঁপানি রোগের জন্য ভালো:

মাস্ট সেল (এক ধরনের কোষ) এই কোষগুলি হাঁপানি রোগ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এই কোষগুলি ফুসফুসের শ্বাসনালীর সংকোচনের সৃষ্টি করে এবং শ্লেষ্মার নিঃসরণ করে, যা হাঁপানি রোগের লক্ষণ। ব্রাহ্মী শাকে হাঁপানি রোগে ঔষধের মতো কাজ করে।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: