বাচ্চাদের সর্দি-কাশি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়।
ছোট বাচ্চাদের মধ্যে সর্দি-কাশি সাধারণ। কাশি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কাশি যদি অতিরিক্ত মাত্রায় না হয় তাহলে বাড়িতে বসেই ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে কাশি সরানো সম্ভব।
কোন উপায়ে আপনার বাচ্চার সর্দি-কাশি দূর করবেন এটা নিয়ে অবিভাবকদের নানা দুশ্চিন্তা। অনেকে ঘরোয়া চিকিৎসাতে বাচ্চাদের সর্দি-কাশির চিকিৎসা করাতে ভয় পান।
বাচ্চারা সর্দি-কাশিতে ভোগে শুধুমাত্র দুর্বল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হওয়ার কারণে।
সাধারণত, বাচ্চাদের সর্দি-কাশি হলে নাক দিয়ে পানি পড়ে, হালকা গা গরম হয়, হাঁচি হয়, কফ বের হয়, খাবারে অরুচি আসে ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
কিন্তু বাচ্চার সর্দি-কাশি হলে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা অবলম্বন করলে সহজেই বাচ্চার সর্দি-কাশি দূর করা সম্ভব।
বাচ্চাদের সর্দি-কাশি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
আসুন এবার জেনে নিই বাচ্চাদের সর্দি-কাশি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে-
লেবুর সিরাপ:
শিশুদের সর্দিকাশি কমানোর উপায় হিসেবে লেবু ভালো প্রাকৃতিক ঔষধ।
লেবুতে প্রচুর ভিটামিন “সি” রয়েছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং সর্দি-কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
মধু:
সর্দি-কাশি সারাতে মধু খুবই উপকারী। মধু একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি যা গলা ব্যথা প্রশমিত করতে সহায়তা করে।
মধুতে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে।
তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মধু নিরাপদ নয়। মধু কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ ও শরীর থেকে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে।
সরিষার তেল:
বড়দের ক্ষেত্রে সরিষার তেল যেমন উপকারী বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তেমন উপকারী।
আগের কার দিনে বাচ্চার মাথার তালুতে সরিষার তেলে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দেওয়া হতো।
দুই কোয়া রসুন দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পায়ের পাতা, পিঠ, হাতের তালু ও বুকে ভালো করে মালিশ করুন। এতে ভালো কাজ হবে।
বাচ্চার মাথা উঁচু করে রাখুন:
ঘুমন্ত অবস্থায় বাচ্চার মাথা উঁচু করে রাখলে সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে আসবে না। সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে আসলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
বিশেষ করে বাচ্চা যখন ঘুমিয়ে থাকে। তাই আপনার শিশু যখন শুয়ে থাকবে তখন মাথা হালকা একটু উঁচু করে রাখার চেষ্টা করুন।
তবে এটি করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
চিকেন স্যুপ:
১ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের সর্দি-কাশি দূর করতে চিকেন স্যুপ অনেক কার্যকরী। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দ্রুত রোগ সারাতে সাহায্য করে।
সর্দিকাশি হলে ঘরে মুরগির সাথে শাকসবজি (গাজর, বিট, আদা, রসুন, গোলমরিচ, পালংশাক ইত্যাদি) দিয়ে স্যুপ বানিয়ে বাচ্চাদের দিনে ২-৩ বার খাওয়ান।
তবে ৬ মাসের আগে বাচ্চাদের স্যুপ দেবেন না।
কমলালেবু:
যে কোন বাচ্চার কাছে কমলালেবু একটি পছন্দের খাবার। কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন “সি” রক্তকোষের উৎপাদন বাড়ায় যা সর্দি-কাশির জীবাণুদের সাথে যুদ্ধ করে।
এছাড়াও এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
আদা:
বাচ্চাদের কাশি দূর করতে আদা অনেক কার্যকরী। এটা সাধারণ জ্বর কমাতে সহায়তা করে।
একটি পাত্রে ৬ কাপ পানি, আধা কাপ আদা নিয়ে ২০ মিনিট হালকা তাপে জ্বাল দিয়ে নিন।
তারপর ছেঁকে একটু মধু অথবা চিনি মিশিয়ে শিশুদের দিনে ১ বার পান করতে দিন।
মায়ের বুকের দুধ:
বলা হয়, “Breast milk is the best milk for children”. নবজাতকের জন্য এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিশেষকরে শিশু যখন অসুস্থ হয়।
এটা সম্পূর্ণ আলাদা সব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ যা বাচ্চাদের যেকোনো রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ৬ মাসের ছোট বাচ্চাদের সর্দিকাশি নিরাময়ে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পান করান।
এছাড়া পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে এমন ঘরে বাচ্চাকে রাখুন। বাচ্চাদের বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, শিশুর যথেষ্ট ঘুম হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। এবং বাচ্চাকে সব সময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।