চিকেন স্যুপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ও ওজন কমায়।

স্যুপ খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি খাবার। আর তা যদি হয় চিকেনের তাহলে তো কথাই নেই। শরীরকে সুস্থ্য রাখতে স্যুপ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একাধিক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই খাবারটি খেলে একদিকে যেমন পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি ভিতর থেকে দেহ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে অনেক রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

শুধু তাই নয়, মেলে আরও অনেক উপকারও। সর্দি-কাশি ও জ্বরের রোগীর প্রোটিন সরবরাহ করার ক্ষেত্রে চিকেন স্যুপ খুবই উপকারী। ভাইরাল ফ্লুর বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে এই স্যুপ।

রোগীকে সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে এই খাবার। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলেরই চিকেন স্যুপ খাওয়া কার্যকরী।

চিকেন স্যুপ প্রায় সকল বয়সের মানুষের বেশ পছন্দের। বিকালের নাস্তায় বা রাতের মেনুতে স্যুপ থাকলে মন্দ হয় না। এছাড়াও সিজন পরিবর্তনের সময় আমরা সকলেই কমবেশি জ্বরে আক্রান্ত হই৷ এসময় মুখে রুচি কমে যায়। দ্রুত আরোগ্য লাভ এবং পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে চিকেন স্যুপ খুবই উপকারী।

চিকেন স্যুপের উপকারিতা

আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, চিকেন স্যুপ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে –

হার্ট ভালো রাখে:

চিকেনে উপস্থিত উপকারি ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের ভেতর থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানকে বরে করে দেয়। সেই সঙ্গে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। এবার বুঝেছেন তো হার্টের রোগীদের কেন চিকেন স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে:

গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগির মাংসের মধ্যে থাকা প্রোটিন নামক উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। চিকেন স্যুপে উপস্থিত এ উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই ধমনী এবং শিরার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। সেই সঙ্গে রক্তের প্রবাহ এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে রক্তচাপ কমতে শুরু করে। তাই যারা এই সমস্যায় ভুগছেন এমন লোকদের জন্য চিকেন স্যুপ উপকারী।

স্ট্রেস কমায়:

মুরগির মাংসে থাকা ট্রাইপটোফ নামক উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মনও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। আসলে সেরাটোনিন হল এক ধরনের ফিল গুড হরমোন। এই কারণেই তো এই হরমেনাটির ক্ষরণ বেশি মাত্রায় হতে থাকলে মন আনন্দে ভরে যায়।

শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে:

স্যুপে যেসব স্বাভাবিক উপাদান ব্যবহার করা হয় যেমন— মুরগির মাংস, সবজি, কর্ন এগুলো অনেক পুষ্টিগুণ-সমৃদ্ধ। তাই অসুস্থতায় স্যুপ শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর স্যুপ খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তাতে স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত অনেক উপাদান যোগ করা হয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় স্বাস্থ্যকর উপায়ে বানানো ঘরে তৈরি স্যুপ খেলে।

সহজে হজম হয়:

চিকেন স্যুপে অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যার কারণে হজম ক্ষমতা বাড়ে। অসুস্থতার সময় খাবার হজম করা দেহের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আর তাই এ সময় বেশি শক্ত ও গুরুপাক খাবার না খাওয়াই ভালো। এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত, যা সহজপাচ্য। আর স্যুপ এমন একটি খাবার, যা সহজে হজম হয়।

প্রদাহ কমায়:

নানা কারণে আমাদের শরীরের ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনটা হওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ ঠিক সময়ে যদি প্রদাহ কমানো না যায়, তাহলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নিয়মিত চিকেন স্যুপ খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায় কিন্তু। কারণ এতে থাকা রসুন, আদা, গোলমরিচ এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দূর করে:

স্যুপে উপস্থিত পেঁয়াজ, রসুন, আদা, এবং শাক সবজিতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। স্যুপে উপস্থিত পানি শরীরে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক থাকে।

পানির ঘাটতি পূরণ করে:

অসুস্থতায় দেহে বাড়তি পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই পানি খেতে চায় না। এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান হচ্ছে স্যুপ। পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি এটি শরীরের পানির অভাব পূরণেও সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:

চিকেন স্যুপ বানাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ মুরগির মাংস ছাড়াও ব্যবহার করা হয় পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গোলমরিচ এবং শাক সবজি যা নানা ভিটামিন এবং মিনারেলে পরিপূর্ণ থাকে। ফলে এই খাবারটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে একদিকে যেমন পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে এমন শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে রোগ ভোগের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

শ্বেতরক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়:

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, চিকেন স্যুপ খাওয়া মাত্র শরীরের অন্দরে শ্বেতরক্ত কণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে প্রদাহ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো অ্যাস্থেমা, গলায় ব্যথা এবং সর্দি-কাশির মতো সমস্যা হলে গরম গরম চিকেন স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

ওজন কমায়:

এই খাবারটি খেলে শরীরের অন্দরে প্রোটিনের পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট এবং উপকারি ফ্যাটের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। ফলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে। এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাওয়ার প্রবণতা কমে। সেই সঙ্গে কমে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও।

হাড়ের রোগ দূর করে:

চিকেনে যে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলি মজুত থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের মারাত্মক উন্নতি ঘটায়। ফলে বুড়ো বয়সে গিয়ে অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: