পপকর্ন উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ যা ওজন কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে ও ক্যান্সার প্রতিরোধী।

ভুট্টা থেকে তৈরি ভুট্টার খই বা পপকর্ন। এটি খুবই মুখরোচক একটি স্নাক্স। ছোট বড় সকলেই খুব পছন্দ করে পপকর্ন খেতে।

সিনেমা দেখা, ঘরোয়া আড্ডা বা পার্কে একান্তে কিছুটা সময় কাটানোর অন্যতম সঙ্গী পপকর্ন। পপকর্ন আস্তে আস্তে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে।

পপকর্ণ যে শুধু সুস্বাদু তাই নয়, দারুণ উপকারীও বটে। আজকাল তো রাস্তার মোড়ে মোড়ে পপকর্ন চোখে পড়ে। এছাড়াও শপিং মলের সামনে, পার্কের পাশে পপকর্ন স্টল দেখা যায়।

চকলেট পপকর্ন, ক্যারামেল পপকর্ন, মাসালা ফ্লেভার ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাদের পপকর্ণ পাওয়া যায়। এসব পপকর্ন মুখরোচক হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। যাঁদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে বা হার্টের কোনও সমস্যা আছে তাঁদের এই ধরণের পপকর্ন না খাওয়াই ভালো।

লবণ ছাড়া সাদা পপকর্ন স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক বেশ উপকারী। এতে আয়রন, ভিটামিন বি-1, ভিটামিন বি-6, ভিটামিন বি-3, ফসফরাস, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এছাড়া পপকর্ণে আন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী।

পপকর্ন বিশ্বের অন্যতম পুরনো একটি খাবার, যা সর্বপ্রথম মেক্সিকোতে তৈরি হয়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার শরীরের পাচক রস নির্গত করে দেহের হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার পপকর্ন।

পপকর্ন পুষ্টি উপাদান

পপকর্নে ৩৮৭ ক্যালোরি, ১৩ গ্রাম প্রোটিন, ৭৮ গ্রাম কার্বহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিউপাদান রয়েছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো –

  • ভিটামিন বি-1 (থায়ামিন): ৭% (RDI)
  • আয়রন: ১৮% (RDI)
  • ভিটামিন বি-3 (নায়াসিন): ১২% (RDI)
  • ভিটামিন বি-6 (পাইরিডক্সিন): ৮% (RDI)
  • ম্যাগনেসিয়াম: ৩৬%(RDI)
  • ফসফরাস: ৩৬% (RDI)
  • পটাশিয়াম: ৯% (RDI)
  • জিঙ্ক: ২১%(RDI)
  • কপার: ১৩%(RDI)
  • ম্যাঙ্গানিজ: ৫৬%(RDI)

পপকর্নের উপকারীতা

পপকর্ন বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর এবং জনপ্রিয় একটি স্ন্যাক। এটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারীতাও রয়েছে। নিচে পপকর্নের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো আলোচনা করা হলো –

ওজন কমায়:

পপকর্নে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং ক্যালোরি থাকে কম। প্রতি কাপ পপকর্নে ৩১ ক্যালোরি রয়েছে। একটি গবেষণা পপকর্ন এবং আলুর চিপস খাওয়ার পরে কত সময় ধরে পেট ভরে থাকে তার পরীক্ষা করে। দেখা গেছে পপকর্ন বেশি কার্যকর ছিল। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হওয়ার কারণে অল্পতে পেট ভরে যায় এবং অনেকক্ষণ খুদা লাগে না। ফলে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ:

পপকর্নে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি। গবেষণা অনুসারে, ডায়েটরি ফাইবার হার্টের রোগ, স্থূলত্ব এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের মতো অনেক রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।ফাইবার ওজন হ্রাস করতে এবং হজম স্বাস্থ্যের জন্য সহায়তা করতে পারে। মহিলাদের জন্য ফাইবারের প্রস্তাবিত দৈনিক গ্রহণের পরিমাণ ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের জন্য ৩৮ গ্রাম। ১০০ গ্রাম পপকর্নে ১৫ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা আপনার প্রতিদিনের ফাইবারের প্রয়োজনীয়তার অনেকটা মেটাতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে:

পপকর্ন ১০০% প্রাকৃতিক পুরো শস্য থেকে তৈরি হয়। পুরো শস্য হিসাবে এটিতে ফাইবার রয়েছে যা হজমে উন্নতি করতে সহায়তা করে। উচ্চ আঁশযুক্ত মলকে নরম করে অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূরে রাখে।

ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে কোষকে রক্ষা করে:

এতে পলিফেনল নামক এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দ্বারা ক্ষতি হওয়া থেকে আমাদের কোষগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। স্ক্র্যান্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে করা একটি সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, পপকর্নে খুব বেশি পরিমাণে পলিফেনল রয়েছে। পলিফেনল ভাল রক্ত সঞ্চালন, উন্নত হজম স্বাস্থ্য এবং অনেক রোগের হ্রাস ঝুঁকি করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধী:

পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট খুব উচ্চ পরিমানে রয়েছে পপকর্ণে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

পপকর্ন কিভাবে ঘরে তৈরি করবেন?

পপকর্ন উপকারী। তবে অবশ্যই তা ঘরে তৈরি করতে হবে। বাইরের ফ্লেভার্ড পপকর্ন, অতিরিক্ত লবণ, চিনিযুক্ত কিংবা বাটার দেয়া পপকর্ন শরীরের জন্য মোটেই উপকারী নয়। এগুলোতে থাকে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং বাড়তি ক্যালরি। তাই বাড়িতেই পপকর্ণ তৈরি করে নিন। এক্ষেত্রে প্রেসার কুকার গরম করে তারমধ্যে তেল, সামান্য লবণ দিয়ে তারপর বাজার থেকে কিনে আনা ভুট্টা দিয়ে প্রেসার কুকারের ঢাকনা আটকে দিন। ৫ মিনিটেই তৈরি হয়ে যাবে পপকর্ন।

সতর্কতা:

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সূত্র: হেলথলাইন