এক ধূর্ত শিয়ালের গল্প।

সে অনেক দিন আগেরকার কথা। এক জঙ্গলে একটি শিয়াল বাস করত। সে যেমন ছিল চালাক, তেমনি ছিল অহঙ্কারী। সে নিজেকে বনের সবচেয়ে ধূর্ত ও জ্ঞানী প্রাণী মনে করতো। বনের সবাইকে সে বোকা বানিয়ে মজা নিত।

একদিন এক কুকুর চুরি করে একটি মুরগি ধরে এনেছিল। শিয়াল সেটা লক্ষ্য করল। আর মনে মনে ভাবল, কীভাবে এটা কেড়ে নেয়া যায়? সে কুকুরটিকে খুব মিষ্টি গলায় ডাকতে লাগল।

ও কুকুর বন্ধু, কোথায় যাও?

মুরগিটাকে মুখ থেকে নামিয়ে কুকুর বলল, ওহে ভায়া আমি আমার সন্তানদের কাছে যাচ্ছি। ওদের জন্য একটা মুরগি ধরে এনেছি।

শিয়াল বলল, একি বলছো! তুমি জানো না কি হয়েছে?

কুকুর জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?

শিয়াল বলে, বুঝেছি। তুমি হয়তো জানো না। বাড়িতে গিয়ে দেখো তোমার সব বাচ্চাই মারা গেছে।

কি বলো এসব? এটা হতে পারে না। আমি একটু আগেই ওদের দেখে এসেছি। কুকুর বলল।

চালাক শিয়াল বলল, বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখো। তোমার বাচ্চা মারা গেছে তাতে আমার কি?

একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কুকুর মুরগিটাকে ফেলেই দৌড় দিল বাড়ির দিকে। আর চতুর শিয়াল আস্ত মুরগিটা একা একাই খেল।

বাড়ি গিয়ে বোকা হয়ে গেল কুকুর। সে দেখে তার বাচ্চারা উঠোনে খেলছে। সে বুঝতে পারে শিয়াল তার সঙ্গে চালাকি করেছে। যাই হোক সুযোগে সে চতুর শিয়ালকে শিক্ষা দেবে বলে প্রতিজ্ঞা করে।

কদিন পর ধূর্ত শিয়াল গভীর বনের মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ সে দেখতে পায় সরোবরের পাড়ে কতগুলো কুমির ছানা খেলা করছে। তার লোভ হলো। সে কুমিরের ছানাগুলোকে তার ভোজন হিসেবে পেতে চাইল। তাই সে কুমিরের সঙ্গে ভাব জমাতে এগিয়ে গেল।

শিয়াল বলল, আরে কুমির ভাই কেমন আছেন?

আর আছিরে ভাই। বাচ্চাদের নিয়ে আর পারছি না। ওদের রেখে শিকারে যেতে পারি না। যদি কেউ এসে ওদের খেয়ে নেয়, কুমির বলল।

শিয়াল এবার মুচকি হেসে বলল, অযথাই চিন্তা করছেন। যান তো। আমি আছি এখানে। দেখি কে খেতে আসে ওদের? আপনি নিশ্চিন্তে শিকারে যান।

কুমির মশাই ধূর্ত শিয়ালের চালাকি বুঝতে পারল না। সে শিয়ালকে রেখে শিকারে চলে যায়। এদিকে শিয়াল ইচ্ছেমতো এক এক করে সব বাচ্চা খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে।

কুমির ফিরে এসে দেখে বাচ্চাও নাই, শিয়ালও নাই।

মনে মনে কুমির প্রতিজ্ঞা করে সুযোগ বুঝে তোর ঘাড় মটকাবো আমি।

শিয়ালের চাটুকারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল সবাই। সবাই মিলে শিয়ালকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছে। ভুল ক্রমে শিয়াল একদিন বাঘের ডেরায় চলে গেল। গিয়ে দেখে বাঘের দুটি বাচ্চা খেলা করছে সেখানে।

সে বাচ্চাদের হত্যা করে খেতে শুরু করল। খাওয়া শেষ করার আগেই বাঘ চলে আসে গুহায়। এবার শিয়াল পড়ল বিপদে। পালাবে কীভাবে?

বাঘ গুহায় ঢুকে কোনো কিছু বোঝার আগেই শিয়াল দিল ভোঁ-দৌড়। বাঘও পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল। বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য শিয়াল এক গাছের কোটরে লুকাতে চাইল।

কিন্তু কুকুর বাঘকে দেখিয়ে দিল। তারপর শিয়াল দৌড়াতে দৌড়াতে যায় সরোবরের দিকে। সরোবর পার হতে যাবে ঠিক সেই সময় কুমির তার পা কামড়ে ধরল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল শিয়াল।

কোনো ক্রমে পা ছাড়িয়ে আবার ডাঙায় উঠল শিয়াল। ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমির। মহাবিপদে পড়ে গেল চালাক শিয়াল। বাঘের হাত থেকে আর রেহাই পেল না সে। ঘাড় মটকিয়ে রক্ত স্নান করল বাঘ মশাই।

কুকুর আর কুমিরের স্বপ্ন এত দিনে পূরণ হলো। আর সমস্বরে বলে উঠল, ধূর্ততা বিপদের কারণ হয়।