রক্ত বৃদ্ধি করে কোন খাবার গুলি।
প্রায় সব বয়সী মানুষ রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা কমে গেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এ সময় শরীরে রক্ত বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। সুস্থ্য জীবনযাপনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। কিছু খাবার খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মান ঠিক রাখা যায়।
কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে রক্ত বৃদ্ধি পায়। নিচে এমন কিছু খাবার দেওয়া হলো –
ডালিম
আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের জুস খান।
ডুমুর
ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
কলার মোচা
রক্তের মূল উপাদান হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে কলার মোচার তুলনা হয় না। দেহে রক্তের পরিমান ঠিক রাখতে বা রক্তশূন্যতা ভোগা রোগীদের জন্য কলার মোচা খুব উপকারী।
কিসমিস
কিসমিস আয়রনের একটি ভাল উৎস। যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। দেড় কাপ কিসমিসে ১.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। এটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের প্রতিদিন যে পরিমাণ আয়রন দরকার হয় তার প্রায় ৭ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ১৬% পূরণ করে। লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে এবং দেহের কোষগুলিতে অক্সিজেন বহন করতে সহায়তা করে।
মাংস
সব ধরণের মাংসতে হেম আয়রন থাকে। বিশেষ করে লাল মাংস হেম আয়রনের সেরা উৎস। হাঁস-মুরগির মাংসতে হেম আয়রণ পরিমাণ কম থাকে। শাকের সাথে মাংস হাঁস-মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে আয়রনের শোষণ শোষণ বাড়ে। ফলে রক্ত স্বল্পতা দূর হয়।
কলিজা বা লিভার
অনেকেই কলিজা বা লিভার খেতে পছন্দ করেননা। কিন্তু রক্তশূন্যতায় ভুগছেন যারা তাদের নিয়মিত খাবার তালিকায় কলিজা বা লিভার রাখা উচিত। কলিজায় প্রচুর পরিমাণের আয়রন এবং ফোলেট সমৃদ্ধ। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলিজা বা লিভার রাখা উচিত।
তালমিছরি
যাদের রক্তসল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য তালমিছরি খুবই উপকারী। কারণ তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য তাল মিছরি খুব বেশি উপকারী। আয়রন রক্তের লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মুসুর ডাল
এক কাপ মুসুর ডালে ৩৭% আয়রন থাকে যা আমাদের প্রতি দিনের প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে। প্রচুর আয়রন থাকাই এটা রক্ত সল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
জিরা
একটু অবাক হলেও সত্য জিরা আয়রন সমৃদ্ধ। প্রতি ১ চা চামচ জিরাতে ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। বাচ্চাদের বৃদ্ধির জন্য এবং মহিলাদের মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় হারিয়ে যাওয়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিট
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়। আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন মাত্রায় বেড়ে যায় বিটের রসে। ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশুন্যতা দূর হয়
পালং শাক
পালংশাকে ২১% আইরন রয়েছে যা লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করে রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই আইরন আমাদের চুল পড়ার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
কচুশাক
মানব শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা পূরণ করার জন্য কচু শাকের কোন বিকল্প নেই। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে অর্থাৎ যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন তারা সহজলভ্য এই শাকটি বেছে নিতে পারে।
কচু
কচুতে আছে আয়রন, যা রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। যাদের রক্ত স্বল্পতা আছে তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। পাশাপাশি কচু গর্ভবতী মায়ের রক্ত সল্পতা দূর করতে পারে।
খেজুরের গুড়
বন্ধুরা আমরা সবাই জানি, আইরন (লৌহ) – আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এর অভাবে আমরা রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকি। খেজুরের গুড়ে প্রচুর আইরন থাকায় এটি আমাদের রক্তশুন্যতা দূর করে। সাধারণতঃ বাচ্চাদের ও মায়েদের শরীরে আইরনের ঘাটতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই আইরনের ঘাটতি পূরণে খেজুরের গুড় তাদের জন্য আদর্শ পথ্য।
ভিটামিন সি জাতীয় ফল
আমাদের দেহে রক্তকোষ তৈরিতে ভিটামিন “সি” জাতীয় যে কোন ফল এর উপকারিতা অনেক বেশি। সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল যেমন লেবু এবং কমলা ভিটামিন “সি”-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন “সি” সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের গতিও বাড়ে। স্ট্রবেরি, আপেল তরমুজ পেয়ারা এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
ডিম
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ডিম খুব উপকারী। ডিমের কুসুমের মধ্যে রয়েছে আয়রন। এটি শরীরে লোহিত রক্তের কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
শিমজাতীয় বীজ
নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রে মাংসের মতো শিমের বীজ আয়রনের প্রয়োজন চাহিদা মেটায়। শিম ও মটরশুঁটির বীজ, কালাই কিংবা ছোলায় রয়েছে আয়রন। বিভিন্ন ধরনের ডালও রয়েছে এ তালিকায়।
বাদাম এবং বীজ
অনেক ধরণের বাদাম এবং বীজ আয়রনের ভাল উৎস। এসব বাদাম ও বীজ খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। যখন খাওয়ার জন্য বাদাম এবং বীজ বেছে নেওয়া হয়, তখন কাঁচা বাদাম বেছে নিন। যেমনঃ কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনা বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ো বীজ এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।
দুধ
দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উপকারী।
পাটশাক
এই শাকে প্রচুর পরিমান আয়রন থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। যাদের রক্ত স্বল্পতার সমস্যা আছে তারা পাটশাক খেতে পারেন।
মেথি শাক
১ কাপ মেথি শাকে ২১.০৭ এমসিজি ফোলেট থাকে। এই শাক কিশোরী মেয়েদের গর্ভবতী মায়েদের রক্ত গঠনের জন্য খুব ভাল একটি খাবার। আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, লাল রক্তকণিকার উপাদান যা ফুসফুস থেকে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করে। সুতরাং আপনার যদি আয়রনের ঘাটতি থাকে তবে অবশ্যই মেথি শাক খান।