উচ্চ জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা।

জিঙ্ক সেই পুষ্টিগুলির মধ্যে একটি যা আমাদের দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।

জিঙ্ক সাধারণত মাংস, বাদাম, গোটা দানা, ছোলা ইত্যাদি সহ উদ্ভিদজ এবং প্রাণীজ খাবারগুলিতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুসারে, জিঙ্ক (zinc) উল্লেখযোগ্য একটি এনজাইম ব্লক করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে।

পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জিঙ্কে ইমিউনো-পুষ্টির বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

শরীরে জিঙ্কের অভাব অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস, দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্ষুধা হ্রাস এবং গন্ধ এবং স্বাদের অনুভূতি হ্রাস সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার:

যেহেতু শরীর নিজে থেকে জিঙ্ক উৎপাদন করতে পারে না, তাই ডায়েটে যতটা সম্ভব জিঙ্কযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা ভালো। জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

মাংস:

মাংস জিঙ্কের একটি দুর্দান্ত উৎস। লাল মাংস জিঙ্ক (Zinc)-এর একটি বিশেষ উৎস।

জিঙ্ক গরুর মাংস (beef), ভেড়া এবং শুয়োরের মাংস (pork)-সহ বিভিন্ন ধরণের মাংসে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

তবে প্রচুর পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া বিশেষত প্রক্রিয়াজাত মাংস হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

এজন্য শাকসবজি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে বেশি রাখতে হবে ও প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিমাণ কমাতে হবে।

ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য:

ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য সাধারণত একটি খোলসের মধ্যের বীজ। সাধারণ ভোজ্য ডাল জাতীয় খাদ্যশস্য গুলির মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, মটর, ছোলা, মটরশুটি, সয়াবিন। এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।

আসলে, ১০০ গ্রাম রান্না করা মসুরের ডালে প্রায় ১২% জিঙ্ক থাকে। নিরামিষভোজী লোকেদের জন্য এই খাবারগুলি জিঙ্ক এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

বাদাম:

চিনাবাদাম কাজুবাদাম এবং আমন্ড জাতীয় বাদাম খাওয়া জিংক গ্রহণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যদি আপনি বাদাম থেকে উচ্চ পরিমানে জিংক পেতে চান তবে কাজুবাদাম খেতে পারেন।

বিভিন্ন ধরণের বীজ:

বীজগুলি ডায়েটে একটি স্বাস্থ্যকর সংযোজন এবং জিঙ্ক গ্রহণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।

উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জিঙ্কযুক্ত অন্যান্য বীজের মধ্যে কুমড়ো বীজ, তিলের বীজ এবং তিসির বীজ (flaxseeds) রয়েছে।

দুগ্ধজাত খাবার:

পনির এবং দুধের মতো দুগ্ধজাত খাবারগুলি জিঙ্ক সহ একাধিক পুষ্টি সরবরাহ করে। দুধ এবং পনির উভয়ই জিঙ্কের উল্লেখযোগ্য উৎস, কারণ এগুলিতে উচ্চ পরিমাণে জিঙ্ক থাকে।

খোলসওয়ালা মাছ:

খোলসওয়ালা মাছ (shellfish) মাছ বলতে বুঝায় – চিংড়ি, কাঁকড়া। এগুলো প্রোটিন, ভিটামিন B-12, স্বাস্থ্যকর চর্বি (ওমেগা-৩) এবং খনিজ জিঙ্ক (Zn) সমৃদ্ধ। 

নিয়মিত শেলফিশ খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ওজন হ্রাসে সহায়তা করতে এবং মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

ডিম:

ডিমে পরিমিত পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং আপনাকে আপনার প্রতিদিনের জিঙ্কের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ১টি বড় ডিমে ০.৬ মিলিগ্রাম জিঙ্কের (Zn) থাকে।

শাকসবজি:

সাধারণভাবে, ফল এবং শাকসবজি থেকেও জিঙ্ক পাওয়া যায়। তবে কিছু শাকসবজিতে যথেষ্ট পরিমাণ জিঙ্ক রয়েছে যা দৈনন্দিন জিঙ্কের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

যেমন মিষ্টি আলু বা নরমাল আলু উভয়ের মধ্যেই জিঙ্ক রয়েছে। একটি বড় আলুতে প্রায় ১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে।

ডার্ক চকলেট:

ডার্ক চকোলেটে যথেষ্ট পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৭০-৮৫ শতাংশ কোকো পাউডার সহ একটি ১০০ গ্রাম বার ডার্ক চকোলেট ৩.৩৪ মিলিগ্রাম জিঙ্ক সরবরাহ করে।

তবে ১০০গ্রাম ডার্ক চকোলেটে ৬০০ ক্যালোরিও রয়েছে।

সতর্কতা

আমরা অনেকেই ওষুধের দোকান থেকে জিংক ট্যাবলেটের পাতা কিনে এনে পানিতে গুলিয়ে খেয়ে থাকি।

তবে এই ওষুধটি দুধ, অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য, ক্যালসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিডের সাথে গ্রহণ করবেন না।

রেফারেন্স: