হাতির নাতি দুষ্টু শিয়ালের গল্প।

এক বনে বাস করতো মস্ত বড় এক হাতি। হাতিটি ছিল নিঃসঙ্গ। তার প্রজাতির আর কোনো প্রাণী না থাকায় নিজেকে খুব একাকী মনে করতো সে। সারাদিন একা একা ঘুরতে একটুও ভালো লাগতো না হাতির। তাই সিদ্ধান্ত নিলো স্বজাতির না হোক যে কোনো পশু থেকে ভালো মনের কাউকে বন্ধু বানাবে সে।

একদিন এক শিয়াল দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে হাতির কাছে আশ্রয় চাইলো। একটি বুড়ো কুমির তাকে তাড়া করছিলো। কুমিরটির অভিযোগ পড়ানোর নাম করে তার সবগুলো বাচ্চাকে খেয়ে ফেলেছে এই দুষ্ট শিয়াল।

কুমিরের কথাটা মিথ্যা বলে হাতিকে জানালো শিয়াল। এটাও জানালো নদীতে পানি পান করতে গেলে বন্য পশুদের ওপর আক্রমণ করে এই হিংস্র কুমির। শিয়ালের কথা বিশ্বাস করে কুমিরকে তাড়া করলো হাতি। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বাঁচে বেচারি কুমির। এবার নিজেকে বেশ নিরীহ ও বন্ধুসুলভ প্রমাণ করতে চাইলো শিয়াল। হাতির খুব খাতিরদারি করলো সে।

এক সময় মন গলে যায় হাতির। শিয়ালকে নাতি বলে সম্পর্ক জুড়ে নেয় সে। হাতি আর শিয়ালে এখন বেজায় দোস্তি। হাতির পিঠে চড়ে সারা বন ঘুরে বেড়ায় হাতির নাতি খেতাব পাওয়া শিয়াল। যে নদী থেকে শিয়াল কাঁকড়া ধরে খায় সে নদীর তীরে হেঁটে হেঁটে কলাগাছ সাবাড় করে হাতি। হেসে খেলে ভালোই কাটছিলো তাদের জীবন।

একদিন শিয়ালটি মুরগি খাওয়ার লোভে এ বন ছেড়ে দূরের এক বনে গিয়ে হাজির হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো মুরগির দেখা পেলো না সে। মন খারাপ করে নিজের বনে ফেরার পথ ধরলো শিয়াল।

হঠাৎ হা-লু-ম গর্জন শুনে পেছনে তাকাতেই শিয়ালের আত্মা খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়। আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা পাঁচটি বাঘই তার একেবারে কাছে এসে পড়েছে। এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড় মটকাবে। মহাবিপদে পড়েও সাহস করে মুখ খুললো শিয়াল- মামারা, আমি আসলে খিদের তাড়নায় আপনাদের বনে এসেছিলাম খাবারের খোঁজে, কিন্তু কিছুই পেলাম না। আমার প্রতি রাগ নেবেন না।

দলের মধ্য থেকে এক বাঘ রসিকতার সুরে শিয়ালকে বললো, পণ্ডিত ভাগ্নে, আমরাও খিদের তাড়নায় তোমাদের বনের দিকেই যাচ্ছিলাম। ভালোই হলো পথিমধ্যে তোমাকে পেয়ে গেলাম। এবার কথা না বাড়িয়ে আমাদের খাবারে পরিণত হও।

শিয়াল এবার ভয়ে মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যেতে যেতে সামলে নিলো নিজেকে। আমি হ্যাংলা রোগা ও ছোট্ট একটি প্রাণী। আমার এই হাড্ডিসার শরীরটা দিয়ে আপনাদের পাঁচজনের মধ্যহ্নভোজ সম্পন্ন হবে না। তারচেয়ে ভালো আপনারা আমার সাথে চলুন, আমি আপনাদের পুরো মাস বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো।

শিয়ালের কথায় অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকালো বাঘদের একজন। অন্য একটি বাঘ হুঙ্কার ছাড়লো, আমাদের সাথে মস্করা করার পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না, বুঝলে ভাগ্নে হে।

শিয়াল দুহাত জড়ো করে কাচুমাচু করে বললো, আমি সত্যি বলছি। কোনো রকম চালাকি নয়। আপনারা চলুন আমার সাথে।

বুড়োগোছের বাঘটি এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও শিয়ালের কথায় খেঁকিয়ে উঠলো সে, আর বলল শোন চালাক শিয়াল, তোমার যদি সত্যি কোনো খাবার থেকে থাকে তাহলে তুমি এ বনে এনে হাজির করো।

তোমাকে পিছন থেকে ফলো করার জন্য আমাদের মধ্য থেকে একজনকে পাঠাচ্ছি। চালাকি করছো তো ঘাড় মটকে রক্ত খাবে।

শিয়াল কিছুটা স্বস্তি পেলো। উড়ে যাওয়া আত্মাটা যেন ফিরে এলো তার শরীরে। বাঘের গ্রাস থেকে মুক্তি পেলেও হাতির কাছে পৌঁছার সময় একটি বাঘ তার পিছু নিয়ে এখন লুকিয়ে আছে ঝোপের আড়ালে। তাই বাঘের সাথে প্রতারণা করার কোনো সুযোগ নেই তার। হাতিকে ফাঁদে ফেলাই এখন শিয়ালের একমাত্র মুক্তির উপায়।

এরপর হাতিকে ডেকে শিয়াল বললো, নানাভাই নদী পাড়ের কলাগাছতো সব খেয়ে শেষ করে ফেললেন। তাই আপনার জন্য পাশের বনে বিশাল কলার বাগান আবিষ্কার করে এলাম। এখন তাড়াতাড়ি চলুন আমার সাথে।

কলার বাগানের কথা শুনে হাতির আর তর সইলো না। শিয়ালকে পিঠে নিয়ে ছুটে চললো পাশের বনের উদ্দেশে। ও বনে ঢুকতেই পাশের বনে ওঁৎ পেতে থাকা বাঘেরা বেরিয়ে এলো। সুযোগ বুঝেই হাতির পিঠ থেকে নেমে ঝোঁপের আড়ালে চলে গেলো শিয়াল।

হঙ্কার দিয়ে একটি বাঘ তেড়ে এলো হাতির দিকে। হাতি তার লম্বা শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে বাঘটি দূরে ছুঁড়ে মারলো। বাকি বাঘদেরও একই দশা করলো হাতি। বাঘেরা যখন কুপোকাত তখন ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো দুষ্ট শিয়াল।

হাতি তার দিকে সন্দেহের চোখে তাকালে সে হাতিকে বললো, দেখো নানা, তুমি আমাকে আবিশ্বাস করো না। এখানে সকাল বেলা কলার বাগান ছিলো অথবা আমরা পথ হারিয়ে এখানে এসে পড়েছি।

দুষ্ট শিয়ালের চালাকি বুঝতে পারলো হাতি। শিয়ালকে সাফ বলেদিলো সে, তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার আশেপাশে কখনো যেন তোমায় না দেখি। যদি সামনে পড় তাহলে পায়ের তলে পিষে মারবো।

ভয়ে শিয়াল পালিয়ে বাঁচলো। সেই থেকে ঝোপ ছেড়ে শিয়াল মাটির গর্তে বসবাস করা শুরু করলো।