চাষীর দাঁত ফোকলা বউ।

এক গ্ৰামে বাস করত এক চাষী। তার ছিল দুই বউ। বড় বউয়ের সামনের দুইটা দাঁত ছিল না। কিন্তু সে ছিল খুবই সরল সোজা। আর অন্যদিকে ছোট বউ ছিল খুবই সুন্দরী। চাষী ছোট বউকে সব সময় বেশি ভালবাসতো।

আর বড় বউ দেখতে ভাল না বলে তার সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার করত। তাকে দিয়ে ঘরের সব কাজ করাতো। ছোট বউ সারাদিন সাজগোজ করত ও শুয়ে বসে দিন কাটিয়ে দিত। এভাবেই দুই বউকে নিয়ে চাষীর দিন কাটছিল।

একদিন চাষী শহর থেকে বীজ কিনে ফেরার পথে ছোট বউয়ের জন্য দামী শাড়ী ও অলংকার নিয়ে আসে আর বড় বউয়ের জন্য সস্তা শাড়ী ও ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে আসে।

বাড়ীতে এসে চাষী ছোট বউকে ডেকে বলে ও ছোট বউ দেখ তোমার জন্য কত কি নিয়ে এসেছি। সব দেখে সে আনন্দে নেচে ওঠে।

অন্যদিকে বড় বউকে ডেকে সস্তা শাড়ীটি দেয় আর বলে ব্যাগের ভেতর এক কেজি মুরগির মাংস আছে জমিয়ে রান্না করতো আমি আর ছোট বউ এক সঙ্গে বসে খাবো।

এই বলে চাষী পুকুর এ ডুব দিতে চলে যায়। বড় বউ একা একা সেই মাংস রান্না করতে লাগে।  একটু পর সে গোসল না করে  ফিরে আসে। আর বড় বউকে বলে বাইরে কালো মেঘ করেছে তুমি গরু গুলো জমি থেকে নিয়ে এসো।

তখন বড় বউ বলে আমার এখনো মাংস রান্না শেষ হয়নি।চাষী বলে তুমি যাও আমি বাকি রান্না শেষ করছি। চাষী রান্না করে আর সে রান্নায় ঝাল লবন সব কিছু পরিমাণ মতো দেয়। সে খেয়ে বলে মাংস রান্না আসলেই খুব সুন্দর হয়েছে। এই বলে চাষী পুকুরে ডুব দিতে চলে যায়।

এ সময় চাষীর ছোট বউ মাংসের ভেতর বেশি করে ঝাল লঙ্কা মিশিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ পর বড় বউ ও চাষী ফিরে আসে। চাষী খেতে বসে বড় বউ পাশে বসে বাতাস করতে লাগে।

চাষী তখন ছোট বউকে খেতে ডাকে। ছোট বউ বলে সে এখন খাবে না। এই কথা শুনে চাষী নিজেই খেতে শুরু করে। এক গাল ভাত গালে দিতেই তার খুব ঝাল লাগে।

সে বলে মাংসে কিভাবে এত ঝাল হল কারণ ঝালতো সে নিজের হাতে দিয়েছে।চাষী তখন  বড় বউয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে এটা কিভাবে হল। বড় বউ তখন উত্তর দেয় মাংস রান্নার সময় সে বাড়িতে ছিল না তাহলে সে কিভাবে জানবে।

তারপর চাষী ছোট বউয়ের কাছে শুনে কিন্তু ছোট বউ তার কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারে না। চাষী তখন নিজে থেকে বুঝতে পারে এটা ছোট বউয়ের কাজ আর রাগ হয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে চলে যায়।

সেদিন বিকেলবেলা বড় বউ ঘরে না থাকার সুযোগে ছোট বউ একটি তেলের ড্রাম নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে আর ইচ্ছে করে তেল মেঝেতে ঢেলে দেয়, যাতে বড় বউ ঘরে প্রবেশ করতেই সে পরে যায় আর তার পা ভেঙে যায়।

এই বলে সে নিজে হি হি করে হাসতে লাগে।এর মধ্যে চাষী এল সে ছোট বউকে ডাকতে লাগলো। ছোট বউ ছুটতেই সে পা পিছলে পরে গেল আর তার সামনের দিকের দাঁত গুলো ভেঙে গেল। এই দেখে সে খুব কাঁদতে লাগলো কারণ তাকে বড় বউয়ের মত দেখতে লাগছে।

পরের দিন সকাল বেলা বড় বউ জমিতে গরু চড়াতে যাওয়ার সময় বাড়ী থেকে সে কিছু গুড় আর মুড়ি নিয়ে গেল। জমিতে গরু চড়ানোর সময় তার খুব খিদে লাগলো।

সে একটি গাছের নিচে বসে সেগুলো খেতে লাগলো আর খেতে খেতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো। একটি ইঁদুর খাবার এর ঘ্রান পেয়ে সেখানে আসলো। আর চাষীর বউয়ের মুখে লাগানো খাবার গুলো খেয়ে নিল।

খাবার খেতে গিয়ে ইঁদুরটি দেখলো বউটির মুখের সামনের দুটি দাঁত নেই। এই দেখে ইঁদুরটি তার গর্ত থেকে দুটি দাঁত এনে বউয়ের মুখে লাগিয়ে দিল। কিন্তু চাষীর বড় বউ এ ঘটনাটি টের ও পেল না। সে বাড়ি চলে গেল।

বাড়ী এসে সে তার কাজ করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর ছোট বউ লক্ষ করলো বড় বউয়ের মুখে সবগুলো দাঁতই আছে। তখন সে বড় বউয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলো এটা কিভাবে হল। বড় বউ তখন বুঝতে পারলো এটা সেই গর্তে থাকা ইঁদুরের কাজ। তখন সে পুরো ঘটনাটি ছোট বউকে খুলে বললো।

পর দিন ছোট বউ নিজেই গরু চড়াতে গেল। আর সে ও বড় বউয়ের মত একি কাজটি করলো। ঠিক আগের বারের মত ইঁদুর ও বেরিয়ে এল আর তার মুখ থেকে খাবার গুলো খেল। খাবার খেতে খেতে ইঁদুরটি দেখলো তার মুখেও দাঁত নেই।

তখন ইঁদুরটি তার গর্ত থেকে একটি দাঁত এনে বউয়ের মুখে লাগিয়ে দিল। ইঁদুরটি যেই আরেকটি দাঁত আনতে গেল তখন ছোট বউ চিৎকার করে বলে উঠল আমার জন্য ভাল ভাল দাঁত নিয়ে আয়। ইঁদুরটি কথা গুলো শুনে ভয় পেল আর গর্তে ঢুকে গেল।

তাই দেখে ছোট বউ বুঝতে পারলো ইঁদুরটি আর কোনো দাঁত আনবে না। তখন সে চিৎকার করে গাছের নিচে বসে কাঁদতে লাগলো।