ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?

আর্থিক লেনদেনে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সময়ে অনলাইন কেনাকাটা খুব জনপ্রিয়। নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি এড়াতে ব্যবহার হচ্ছে অনলাইন মানি। ক্রেডিট কার্ড দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে।

ক্রেডিট কার্ড এমন একটি মেথড যার মাধ্যেমে আপনি একটি ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে পারেন। এই নির্ধারিত ধার করা টাকার পরিমানকে ক্রেডিট কার্ডের “ক্রেডিট লিমিট” বলা হয়। আপনার মাসিক ইনকাম এর ওপরে ভিত্তি করে ব্যাংক লিমিটটি দেয়।

যদি আপনার মাসিক ইনকাম ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে সাধারনত আপনি ১ লক্ষ টাকা লিমিটের ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন। ক্রেডিট লিমিট আপনি যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন সেই ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।

যেখানে পেমেন্ট মেথড়ে ক্রেডিট কার্ড অ্যাকসেপ্ট করা হয়ে থাকে সেখানে আপনি পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করে যত অ্যামাউন্টের পেমেন্ট করা হবে, মাসের শেষে সেই সব অ্যামাউন্ট বিল হিসেবে ইস্যু করা হয় ব্যাংক থেকে।

তারপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনাকে সেই বিলটি পরিশোধ করতে হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী টাইম লিমিট বিভিন্নরকম হতে পারে। আপনার বিল পরিশোধ করলেই আবার পরের মাসে আপনাকে ক্রেডিট লিমিট দেওয়া হবে।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাসমূহ

দ্রুত লেনদেন:

আপনি দামি কোনো জিনিস কিনতে চাইছেন কিন্তু একসাথে বেশি টাকা জোগাড় করতে সমস্যা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার করাতে সুবিধা হয়। এর মাধ্যমে পণ্যটি কিনে কয়েক মাস ধরে মূল্য পরিশোধ করার সুবিধা রয়েছে। এতে করে ঋণের বোঝা বেশি মনে হয় না। কিন্তু সমযের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করতে হবে তা না হলে জরিমানা দিতে হবে।

পুরস্কার পয়েন্ট:

মূল্য ফেরত পয়েন্ট, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করলে বাড়তি কিছু পুরস্কার হিসাবে পাওয়া যায়। এসব পুরস্কার পয়েন্ট চাইলে বাতিল করা যায় বা গ্রহন করা যায়।

ক্রেডিট স্কোর বাড়ানো:

যদি লেনদেনের ইতিহাস সুখকর না হয়, তবে ক্রেডিট স্কোর বাড়ানোর উপায় হল নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার। নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সময়মত বিল পরিশোধ করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর দ্রুত বাড়তে থাকবে।

অধিকতর নিরাপত্তা:

প্রতারণা, চুরি বা একই খরচ একাধিকবার হওয়া এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্রেডিট কার্ডে অনেক বেশী। যদি ক্রেডিট  কার্ড চুরি হয়, ওই কার্ড দিয়ে কোনো বিল পরিশোধ বা কেনাকাটা হলে আপনার কোনো দায়দায়িত্ব থাকবে না।

ঋণের সুবিধা:

কিছু ক্রেডিট কার্ড আছে যা, বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। মাসে একটা নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটা সুবিধা হলো বোঝা কমাতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়।

ব্যয়ের সঙ্গে আয়:

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে অনেক রকম অফার দেওয়া হয়। যেমন: ক্যাশ ব্যাক, ডিসকাউন্ট। দেশের বাইরে গেলে, অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়ে থাকে হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে। অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড় প্লেনের টিকিট কাটলে।

পরিবর্তনযোগ্য:

মনে করেন আপনি একটি অফারের ক্রেডিট কার্ড নিলেন কিন্তু কার্ডটি ব্যবহার করার পর ঋণের বোঝা বেশি মনে হচেছ। তখন আপনি এটি পরিবর্তন করে অন্য একটি অফারের কার্ড নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সামান্য বেশি টাকা লাগতে পারে কিন্তু তা লাভজনকই হয়।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধাসমূহ

অতি খরচ:

খরচের দিকে নজর রাখা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যায় কেনাকাটা করতে গিয়ে বেশী খরচ করছেন এই ভেবে যে পরবর্তীতে তো পরিশোধ করা যাবে কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন যে বাড়তি সুদও দিতে হবে।

বার্ষিক ফি ও অন্যান্য:

বার্ষিক একটা ফি আছে বেশীরভাগ ক্রেডিট কার্ডের। কিছু চাঁদা প্রযোজ্য হয় যেমন, দেরীতে পরিশোধের ফি,ওভারড্রাফট ফি, ব্যালান্স ট্রান্সফার ফি ইত্যাদি।

 ঋণের ফাঁদ:

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হলো ঋণ নেওয়ার একটি মাধ্যম। আপনি এখন কিছু  কিনছেন, পরে টাকা পরিশোধ করতেই হবে। কিন্তু একটা ঝুঁকি থাকে। সময়মতো পরিশোধ না করলে ঋণ বাড়তে থাকে।

লুকায়িত ব্যয়:

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় সুদের হার পরিশোধ করা নয়। মাসিক মূল্য সময়মতো পরিশোধ না করলে আপনাকে জরিমানা দিতে হবে। ক্রেডিট ব্যবহারের যে সীমা দেওয়া থাকে, সেটা অতিক্রম করলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। সময়জ্ঞান ভালো না হলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বিপজ্জনক।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা আছে। এটা আপনার উপর নির্ভর করে যে আপনি কিভাবে কার্ডটি ব্যবহার করবেন।