রাজা ও হুলো বিড়ালের গল্প।

এক ছিল রাজা আর রানী। রানী সবসময় সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আর রাজা ছিলেন ভোজনরসিক মানুষ।

একদিন এক চাপরাশি এসে বলল, হুজুর, রসুইঘরে ইঁদুরের বড়ো উৎপাত। এর একটা বিহিত করা দরকার। রাজা হুকুম দিয়ে বললেন, ইঁদুরের বিশেষজ্ঞ ডাকা হোক।

রাজ্যের নামকরা ইঁদুর বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসা হলো। তিনি রাজদরবার ঘুরে ঘুরে দেখলেন। ইঁদুরের উৎপাত দেখে বিশেষজ্ঞ বললেন, ইঁদুরগুলো ভারি বজ্জাত। ওদের একমাত্র চিকিৎসা হলো বিষটোপ। রাতে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেবে। সকালে দেখবে ওরা ঘুমিয়ে আছে।

বিষটোপ! এতে শুধু ইঁদুরই মরবে না, মানুষেরও বিপদ হতে পারে। রাজা বললেন। তিনি এই প্রস্তাব বাতিল করে দিলেন।

এরপর আনা হলো বড় বিশেষজ্ঞকে। তিনিও রাজদরবার ঘুরে দেখলেন এবং বললেন, একটি হুলো বিড়াল এনে রসুইঘরের পাহারায় বসানো যেতে পারে। রাজার পছন্দ হলো তার প্রস্তাব। ব্যস, আনা হলো একটি হুলো বিড়াল। রসুইঘরের দায়িত্ব দেওয়া হলো বিড়ালকে।

বিড়াল মজার খাবারের গন্ধ পেয়ে খুশিতে আটখানা। সে একচোট খেয়ে নিল। এত বেশি পরিমাণ খেলো যে, শরীরটা ঝিমুচ্ছে তার। ইঁদুরেরা উঁকি দিয়ে দেখল, বিড়াল ঝিমুচ্ছে। তারা রসুইঘরে ঢুকে ঝটপট খেয়ে নিল আগে।

চাপরাশি এসে দেখে বিড়াল ঝিমুচ্ছে আর ইঁদুরেরা খেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সে বিড়ালকে বলল, বাহ তুমিও খাও আবার ইঁদুরদেরও খাওয়াও, বাহ। তা তোমাকে রেখে লাভ কী বলো?

বিড়াল ক্ষমা চেয়ে বলল, আর এমনটি হবে না। আমি সতর্ক পাহাড়া দেব।

কিন্তু অবস্থার খুব একটা উন্নতি হলো না। অলস বিড়াল যখন তখন ঝিমোয়। আর এই ফাঁকে ইঁদুরেরা খাবার খেয়ে চলে যায়।

ইঁদুরের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিড়াল রাজাকে অনুনয় করে বলল, এই বজ্জাত ইঁদুরদের ধরার জন্য দয়া করে একটা ফাঁদের ব্যবস্থা করুন।

বিড়ালের অনুরোধে ফাঁদ আনা হলো। ফাঁদের ভেতরে রাখা হলো মজার মজার খাবার।

ফাঁদ দেখে ইঁদুরেরা হাসে। ওরা বিড়ালকে শুনিয়ে বলে, এর ভেতরের খাবারগুলো নিশ্চই খুব মজাদার হবে। কিন্তু এর ভেতরে কেমন করে যেতে হয় তা যদি কেউ দেখিয়ে দিত। তাহলে মজার খাবারগুলো খেয়ে আসতে পারতাম।

এসব শুনে বিড়াল মনে মনে হাসে আর বলে, এটা তোমাদের জন্যই আনা হয়েছে। সবুর করো। কিভাবে ঢুকতে হয় আমি এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি। এই বলে বিড়াল খুব বাহাদুরি দেখিয়ে যেই ফাঁদের ভেতরে ঢুকল আর তখনই খট করে ফাঁদের মুখ গেল আটকে।

ইঁদুরেরা হাসতে হাসতে খেয়ে দেয়ে চিকচিক করে চলে গেল। বিড়াল অসহায় ভাবে তাকিয়ে সব দেখল।

চাপরাশি এসে খুশিতে চিৎকার করে ডাকাডাকি করতে লাগল। বলল দেখে যাও, বড় ইঁদুর আটকা পড়েছে ফাঁদে।

বিড়াল তখন করুণ সুরে বলল, ইঁদুর নয়গো ইঁদুর নয়। আমি বিড়াল। আমাকে বাঁচাও।

চাপরাশি চুপি দিয়ে বিড়ালকে ফাঁদের ভেতরে দেখে বলল, এটা ইঁদুরের জন্য। তুমি এখানে কী করছ?

বিড়াল বলল, আগে আমাকে বের করো, পরে বলছি।

বিড়ালের ব্যর্থতায় রাজা রাগ করলেন এবং বললেন, রসুইঘরের জন্য দশজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হোক।

রসুইঘর পাহারা দিতে দশজন কর্মচারী নিয়োগের কথা রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল। বিষয়টি সাধারণ জনতা মেনে নিতে পারল না।

উজির এসে বললেন, রাজা মশাই জনগণ বিদ্রোহ শুরু করেছে। এমনিতে সাধারণ জনগণের অবস্থা ভাল নেই। তার উপর সামান্য বিষয়ে এতগুলো কর্মচারী নিয়োগ করে বেতনভাতা দিয়ে কোষাগার খালি করার মানে হয় না।

রাজার অলসতার আর বোকামির বিষয়টি জানতে পেরে জনগণ তুমুল আন্দোলন শুরু করে দিল। তারা বলল, রাজা সামান্য রসুইঘরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন না, তো এত বড় রাজ্য পরিচালনা করবেন কী করে?

সচেতন জনগণ ব্যর্থ ও খাদক রাজার পরিবর্তে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করল। নতুন রাজার শাসনে রাজ্যে ফিরে এলো শান্তি।