জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড খেলে শরীরে কি কি ক্ষতি হয়।

চাউমিন, এগরোল, বার্গার, পিজ্জা আরও কত কী। নামগুলো শুনলেই জিভে জল আসে। বর্তমান সময়ে জাঙ্কফুড বা ফাস্ট ফুডের চাহিদা ব্যাপক।

জাঙ্কফুড আমাদের সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীরা বেশি আসক্ত হচ্ছে এই খাবারের প্রতি।

একটু সময় পেলেই আমরা ফাস্টফুডের দোকান গুলোতে ছুটে যাই ফাস্টফুডের একটু স্বাদ নিতে।

জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড খেতে বেশ সুস্বাদু, একবার খেলে বার বার খেতে মন চায়। কিন্তু সুস্বাদু হলেও এটি আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আমাদের লিভার থেকে ত্বক, প্রায় সব ধরনের অসুস্থ্যতার পিছনে ফাস্টফুড দায়ী। বিশেষ করে আমাদের মস্তিস্কের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব অনেক বেশি।

ফাস্টফুড খেয়ে বর্তমান সময়ের মানুষগুলো অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাচ্ছে। অক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারটেনশন ও শ্বাসকষ্টসহ নানা অসংক্রামণ ব্যাধিতে।

জাঙ্কফুডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সাধারণ ফ্যাটের সাথে শর্করা, কৃত্রিম স্বাদ ও প্রজারভেটিভ থাকে। যা খেলে শরীরে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

উদাহরণস্বরূপ, সবজি ও আচার-মশলা দেওয়া একটা চীজবার্গারের মধ্যে ৫.৮৮ গ্রাম শর্করা, ১৩.২২ গ্রাম ফ্যাট ও ৬২৮ গ্রাম সোডিয়াম থাকে।

এছাড়া একক্যান কোলা ১০ চামচ চিনির সমতুল্য, যা সারাদিনের প্রাপ্তির তুলনায় অনেক বেশী।

গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত পরিমানে ফাস্টফুড খেলে আমাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তখন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন দিতে হয়।

এছাড়া আমাদের কিডনিও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই ফাস্টফুডের ফলে।

জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুডের ক্ষতিকর প্রভাব:

এবার জেনে নেওয়া যাক, জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড খেলে আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি হয় –

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়:

ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খেলে কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।

এসব খাবার শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া এসব খাবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নষ্ট করে দেয়। এজন্য রাস্তার ধারের বিভিন্ন জাঙ্কফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি:

ফাস্টফুড খেলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ত্বকের সতেজতা কমে যাওয়া। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে মুখ শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে পড়ে।

এছাড়া অন্যান্য ত্বকের সমস্যার মধ্যে ব্রণ, এলার্জি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড যেমন বার্গার, পিজ্জা, পটেটো চিপস খাওয়ার ফলে ব্রণ হতে পারে।

স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বেশি থাকে:

ফাস্টফুডকে অনেক বেশি সুস্বাদু ও আকৃষ্ট করতে ফুড তৈরীকারক ফাস্টফুডে প্রচুর পরিমান স্যাচুরেইটেড ফ্যাট মিশিয়ে থাকে।

যা খাওয়ার ফলে আমাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

হার্ট রোগের ঝুঁকি বাড়ায়:

ফাস্টফুডে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। এই ট্রান্স ফ্যাট শরীরে LDL খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

ফলে হার্টের রোগসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই এসব খাবার পরিত্যাগ করতে হবে।

বিশেষ করে শিশুদের এসব বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরী।

টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়:

বেশিরভাগ ফাস্টফুডে অল্প ফাইবারযুক্ত শর্করা থাকে। যখন হজম সিস্টেম এই খাবারগুলি ভেঙে দেয়, তখন কার্ব রক্ত ​​প্রবাহে গ্লুকোজ হিসাবে প্রকাশিত হয়। ফলে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।

ইনসুলিন সারা শরীর জুড়ে গ্লুকোজ নিয়ে যায়। তবে ঘন ঘন উচ্চ পরিমাণে শর্করা খাওয়ায় আপনার রক্তে শর্করায় বারবার স্পাইক তৈরি করতে পারে।

প্রতিনিয়ত গ্লুকোজের মাত্রা ওঠানামা করার কারণে অগ্নাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং ধীরে ধীরে ইনসুলিনের নিঃসরণের পরিমাণও হ্রাস পেতে থাকে।

এটি আপনার ইনসুলিন প্রতিরোধের, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়।

দেহের ওজন বেড়ে যায়:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত ৪০ বছরে স্থূলকায় মানুষের হার প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত জাঙ্কফুড গ্রহণে স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এক রিপোর্ট অনুসারে, পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে শতকরা প্রায় ১৭ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ শতাংশ স্থূলকায়।

ফাস্ট ফুডে পরিমানের অধিক কার্বোহাইড্রেড এবং চর্বি থাকায় তা শরীরে মেদ বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত চর্বি দেহে জমতে থাকে।

ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীর তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে।

রক্তচাপ এর মাত্রা বৃদ্ধি পাই:

ফাস্ট ফুডে প্রচুর সোডিয়াম (নুন) থাকে। সোডিয়ামের উচ্চমাত্রার ডায়েট যাদের রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য বিপজ্জনক।

সোডিয়াম রক্তচাপকে উন্নত করতে পারে এবং হার্ট এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে চাপ দেয়।

শিশুর বিকাশে বাধা:

বেশির ভাগ শহরের শিশুরা ফাস্টফুডে বেশি আসক্ত। ফাস্টফুডে ভিটামিন ও আয়রনের অভাব থাকে।

ফলে এ রকম খাবার মস্তিস্কের বিকাশে কোনও সাহায্য করে না বরং সেই প্রক্রিয়াকে থমকে দেয়। এটি শিশুদের মস্তিস্কে নতুন নিউরন তৈরীতে বাধা প্রদান করে থাকে।

শ্বসনতন্ত্রের উপর প্রভাব পরে:

ফাস্ট-ফুড খাবার থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি স্থূলত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

স্থূলতা হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট সহ শ্বাসজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন আপনার হার্ট এবং ফুসফুসকে চাপ দিতে পারে।

এছাড়া সামান্য পরিশ্রমেও যেমন হাঁটাচলা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা নামা বা ব্যয়াম করার সময় শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শিশুরা সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার ফাস্ট ফুড খায় তাদের হাঁপানির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়:

ফাস্টফুড এর প্রধান সমস্যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

ফাস্টফুড নিয়মিত খেলে আর কোন সমস্যা থাকুক আর না থাকুক, কোলেস্টেরলের মাত্রা যেকোন সময় বৃদ্ধি পেতে পারে।

আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে ফাস্টফুড বন্ধ করাই শ্রেয়। নইলে এই কোলেস্টেরলের কারণে হতে পারে হার্টের সমস্যা সহ আরও অনেক ধরণের অসুখ।

রেফারেন্স: