যেসব খাবার উচ্চ পলিফেনল সমৃদ্ধ।

পলিফেনল এমন এক ধরণের উদ্ভিদ যৌগ যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য বেনিফিট সরবরাহ করে। নিয়মিতভাবে ডায়েটের মাধ্যমে পলিফেনল গ্রহণ হজম এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি হার্টের রোগ, টাইপ-2 ডায়াবেটিস এবং এমনকি কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে।

পলিফেনল প্রাকৃতিকভাবে ফলমূল, শাক-সবজি, ভেষজ, মশলা, চা, ডার্ক চকোলেট থেকে পাওয়া যায়। পলিফেনল আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ৮,০০০ এরও বেশি ধরণের পলিফেনল রয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফেনলিক অ্যাসিড, পলিফেনলিক অ্যামাইডস।

কিছু খাবার আছে যেগুলি অন্য খাবারের তুলনায় পলিফেনল এর মাত্রা বেশি। নিচে এমন কয়েকটি খাবার দেওয়া হলো –

নাশপাতি:

নাশপাতি পলিফেনল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর একটি দুর্দান্ত উৎস। খোসাসহ নাশপাতি খেতে ভুলবেন না, কারণ খোসার ভিতরের অংশের থেকে খোসাতে ছয়গুণ বেশি পলিফেনল রয়েছে। কিছু সমীক্ষায় দেখা যায় যে নাশপাতি মতো ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ ফল স্তন এবং জরায়ু ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দিতে পারে।

লবঙ্গ:

২০১০ সালের একটি স্টাডি ট্রাস্টেড সোর্স অনুসারে লবঙ্গ পলিফেনল সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম লবঙ্গের মধ্যে ১৫,১৮৮ মিলিগ্রাম পলিফেনল রয়েছে। টেস্ট টিউবের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, লবঙ্গ টিউমারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। এবং ক্যান্সারের সেল (cell) গুলি মারতে সাহায্য করে।

কোকো পাউডার:

পলিফেনল এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমরা প্রাকৃতিকভাবে ফল, শাক-সবজি, চা, চকোলেট জাতীয় খাবার থেকে পাই। পলিফেনল হজমের সমস্যা দূর করতে, ওজন ঠিক রাখতে, কার্ডিওভাসকুলার রোগের উন্নতি করতে করতে, কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। কোকো পাউডার পলিফেনলের অন্যতম উৎস।

ডার্ক চকোলেট:

ডার্ক চকোলেট পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানলস এবং কেটেকিনস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্রি র‌্যাডিকেল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে। যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়া অনেকাংশে কমে যায়।

জাম:

জাম পলিফেনোলে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম জামে ১,৭০০ মিলিগ্রাম পলিফেনলস রয়েছে। জাম ডায়াবেটিস, মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা, বদহজম, ক্যান্সারসহ আরো অনেক রোগ থেকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আপেল:

আপেলে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল নামক উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান উপাদান। আর এই উপাদানটি আমাদের শরীরের DNA এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।

মটরশুটি:

পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস হল মটরশুটি। এটি কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। পাশাপাশি মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুটিতে ৫৯ মিলিগ্রাম পলিফেনল থাকে।

বাদাম:

বাদামে প্রোটিন এর পাশাপাশি উচ্চ পলিফেনল সামগ্রীও রয়েছে। একটি ২০১২ সালের স্টাডি ট্রাস্টেড সোর্স অনুসারে কাঁচা এবং ভাজা উভয় বাদামে পলিফেনল রয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। বাদামে পলিফেনল সহ আরও কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে যা, ফ্রি র‌্যাডিকেলকে অকার্যকর করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

গ্রিন টি:

সব ধরনের চা পলিফেনলস (polyphenols) সমৃদ্ধ কিন্তু গ্রীন টিতে পলিফেনল পরিমানে বেশি থাকে। পলিফেনল শরীরের প্রদাহ কমাতে ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। গ্রিন টিতে অনেক ক্যাটেচিন(catechin) আছে যার আরেক নাম EGCG যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। গ্রিন টিতে থাকা উপাদান আমাদের শরীরে ফ্রী রেডিকেল তৈরি হতে দেয় না।

শাকসবজি:

অনেক শাক সবজি রয়েছে যেগুলি পলিফেনল সমৃদ্ধ, তবে পরিমানে কম থাকে। উচ্চ পরিমাণে পলিফেনলযুক্ত শাকসবজিগুলির মধ্যে রয়েছে: পেঁয়াজ, পালংশাক।

গোলাপ চা:

গোলাপ চাতে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পলিফেনল সমৃদ্ধ ডায়েট নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার, হার্টের রোগ এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি মস্তিষ্ককে অনেক ধরণের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলাপ চাতে গ্রিন টি এর সমান বা তার বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকলাপ রয়েছে।

রেফারেন্স: