মাটির নিচের সবজি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা।

রুট শাকসবজি অর্থাৎ মূল জাতীয় সবজি যা আমরা মাটির নিচের সবজি হিসাব জানি। দীর্ঘকাল ধরে স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সুস্বাদু অংশ হিসাবে মাটির নিচের সবজির অবস্থান।

মাটির নিচের সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আলু, মিষ্টি আলু, শালগম, বিট ইত্যাদি। এছাড়া পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ এগুলো সবই মাটির নিচের।

ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবার, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই সবজিগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি।

মাটির নিচের সবজিগুলো রান্না করার চেয়ে সিদ্ধ খাওয়া ভাল। ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকেই মাটির নিচের সবজি খান না।

নিচে মাটির নিচের সবজি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

পেঁয়াজ

পেঁয়াজ এটা আমাদের কাছে মসলা হিসাবে পরিচিত। কিন্তু এটি আসলে একটি মূল জাতীয় সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন “সি” এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এমন যৌগ যা আমাদের দেহের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের চিনির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেঁয়াজে শক্তিশালী এন্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই মূলের সবজি উচ্চ পরিমাণে গ্রহণের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু মূল জাতীয় সবজির মধ্যে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যগত সুবিধা বেশি।

এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন “সি”, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন “এ” এবং বিটা ক্যারোটিন, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং অ্যান্থোসায়ানিনস সহ ৮টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস।

তিনটি গবেষণার একটি পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১২ গ্রাম সাদা মিষ্টি আলুর রস খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের উন্নতি ঘটে।

এই আলুতে থাকা ভিটামিন “এ” দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।

শালগম

শালগমে ভিটামিন “সি”, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়াম এর দুর্দান্ত উৎস হিসাবে একটি চিত্তাকর্ষক পুষ্টিকর প্রোফাইল রয়েছে।

ডায়েটে ভিটামিন “সি” যুক্ত করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ভিটামিন “সি” শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।

এছাড়া ক্রুসিফেরাস শাক সবজি যেমন- শালগম করা পেটের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

আদা

মসলার মধ্যে অন্যতম ভেষজ গুন সম্পন্ন মসলা হলো আদা। যেকোনো রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতে আদা অন্যতম। এতে জিঞ্জারোল (gingerol) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আদা বমি বমি ভাব এবং সকালের অসুস্থতা হ্রাস করতে কার্যকর ছিল।

এছাড়া আদা ব্যথা এবং প্রদাহ হ্রাস করতে পারে যেমন- গবেষণায় দেখা গেছে যে আদা ঋতুস্রাবের ব্যথা উপশম করতে এবং অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

বিট

বিট হল অন্যতম পুষ্টিকর মূল জাতীয় সবজির মধ্যে একটি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে।

বীট নাইট্রেট এর একটি ভালো উৎস যা রক্তনালীগুলি প্রশমিত করতে, রক্তচাপকে কমিয়ে দিতে এবং হার্টের রোগের উন্নতি করতে সহায়তা করতে পারে।

আছাড়া বিট খেলে ব্যায়ামের পারফরম্যান্সের উন্নতি হয় এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

রসুন

রসুন তার ঔষধি বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য সুপরিচিত। এতে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-6 এবং ভিটামিন “সি” সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে রসুন রক্তচাপ এবং মোট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

এছাড়া এথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীগুলি শক্ত করা), হার্ট অ্যাটাক, করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং হাইপারটেনশন সহ বিভিন্ন রোগে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

অনেকে রসুনকে ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, পেটের ক্যান্সার, রেকটাল ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্যও ব্যবহার করে।

মুলা

মুলা ছোট হতে পারে তবে পুষ্টির প্রোফাইল মোটেই ছোট নয়। এই সবজিটিতে উপস্থিত ফলেট, ফাইবার, রাইবোফ্লবেন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে।

মুলাতে কার্বস এবং ক্যালোরি কম রয়েছে তবে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন “সি” রয়েছে।

মুলার এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা জীবাণুদের সাথে লড়াই করার উপযুক্ত করে তোলে।

গাজর

মূল জাতীয় সবজির মধ্যে গাজরও সবচেয়ে পুষ্টিকর। এতে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন “এ”, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।

তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়াও আছে আরও অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় যে বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার এবং পেটের ক্যান্সার সহ কিছু ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

কচু

কচু অনেকেই খেতে চান না। কিন্তু এর পুষ্টিগুণ অনেক। এতে রয়েছে ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম ও ফাইবার। যা শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষ সাহায্য করে।

হলুদ

হলুদকে প্রাকৃতিক ঔষুধের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔষুধ হিসাবে বিবেচিত করা যায় তার ভেষজ গুনের জন্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্ট-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক গুনাগুন।

হলুদে কার্কিউমিন নামে একটি যৌগ রয়েছে যা রক্ত ​​জমাট বাঁধা রোধ করতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এবং টেস্ট-টিউব এবং প্রাণীর অধ্যয়ন উভয় ক্ষেত্রে প্রদাহ হ্রাস করতে পারে

আলু

বর্তমানে বিশ্বের ১৬০ টি দেশে ২,০০০ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়। আলু ফাইবার, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন বি-6, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর একটি ভাল উৎস।

আলু রান্না করার পর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এতে প্রতিরোধী স্টার্চ উচ্চমাত্রায় থাকে। এটি এক প্রকার স্টার্চ যা আপনার হজমশক্তির মধ্য দিয়ে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

এমন কী ডায়াবেটিস হলেই আলু, গাজর, কচু, বিট বাদ দিয়ে দেন অনেকেই। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার চাহিদা মেটাতে এসব সবজি খাওয়া উচিত।

তাই আলু-গাজর এসব খাওয়া যায় ডায়াবেটিস হলেও। কিন্তু সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমানমত।

রেফারেন্স: