লালশাক রক্তশুন্যতা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
আমরা সবুজ শাক বা পালং-শাকের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা সম্পর্কে অনেকেই জানি। কিন্তু লাল শাক বা Red spinach সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি।
কিন্তু লালশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। লালশাকে ফাইবার বেশি এবং হজমে সহায়তা করে।
কোলন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিরাময়ের পাশাপাশি ওজন হ্রাস করার জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক।
বাংলায় লালশাক, ইংরেজিতে Red spinach. বৈজ্ঞানিক নাম: Red amaranth. লালশাকের পাতা এবং তার কান্ডে একটি লাল তরল থাকে, যা আমরা কান্ড এবং পাতাগুলিতে যে লাল রঙ দেখি তার জন্য দায়ী।
ছোট-বড় সকলের খুবই প্রিয় শাক হলো লালশাক। লালশাক রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ফলে যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়।
লালশাক ভিটামিন “এ” এবং সি-তে ভরপুর। লালশাক নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লালশাক যথেষ্ট উপকারী। আঁশজাতীয় অংশ পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকের পুষ্টিগুণ:
ক্যালসিয়াম ৩৭৪ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ৫.৩৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১১.৯৪ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।
লালশাকের উপকারিতা বা স্বাস্থ্যসুবিধা
লাল শাকে ক্যালসিয়াম এবং নিয়াসিন রয়েছে। দামে কম, সহজলভ্য এই শাকটি আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন। নিচে লালশাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে:
লাল শাকে থাকা ফাইবার উপাদানগুলি আপনার হজম সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফাইবার কোলন পরিষ্কার করে আপনার অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং কোলন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করে।
ক্যান্সারকে নিরাময় করে:
লাল শাকে অ্যামিনো অ্যাসিড, আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন “ই”, পটাসিয়াম, ভিটামিন “সি” এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নির্মূল করতে একত্রে কাজ করে।
উদ্ভিদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ক্যান্সারের সূত্রপাত প্রতিরোধেও প্রধান ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত লাল শাক খান। নিজেকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করুন।
ডায়াবেটিস ও ওজন হ্রাসে সহায়তা:
লাল শাক বা Red spinach-এ থাকা প্রোটিনের উপাদানগুলি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
প্রোটিন একটি হরমোন নিঃসৃত করে যা ক্ষুধা নিবারণকারী হিসাবে কাজ করে। এদিকে ফাইবার সামগ্রীও আপনার ক্ষুধা উপশম করতে সহায়তা করে।
এই শাক ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস সমিতির গাইড বইয়েও বেশি বেশি লালশাক খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উচ্চ আয়রন সমৃদ্ধ:
লাল শাক রক্তাল্পতা দূর করে। লাল শাকগুলিতে আয়রনের একটি উচ্চ পরিমাণ থাকে যা আপনার সিস্টেমে রক্ত প্রবাহের বিকাশের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
নিয়মিত সেবন লাল শাক হিমোগ্লোবিনের স্তরকে উন্নত করতে এবং আপনার রক্তকে বিশুদ্ধ করতে পারে, ফলস্বরূপ আপনার রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিকভাবে উন্নত করে।
আপনি যদি রক্তাল্পতাজনিত হন তবে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে লাল শাক যুক্ত করুন।
কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে:
বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, নিয়মিত লাল শাক খাওয়া কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে, মূলত এটি উচ্চ আঁশযুক্ত উপাদানের কারণে।
সুতরাং অধিক আঁশযুক্ত এই অংশটি পাতার সাথে খেলে আপনার সিস্টেমের টক্সিনগুলি বের করে দিতে সহায়তা করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে:
ভিটামিন এবং পুষ্টির একটি উচ্চ উৎস হওয়ায় আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে লাল শাক প্রধান ভূমিকা পালন করে।
অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “কে”, আয়রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং দেহকে রোগজনিত ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস থেকে রক্ষা করে।
কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:
অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে, প্রতিদিনের মেনুতে লাল শাক বেশ ভাল একটি খাদ্য। কারণ এই শাকে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।
লাল শাক মলকে নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে এবং বেদনাদায়ক পাইলস হ্রাস করতে সহায়তা করে।
চুল পড়া কমে:
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লালশাক অনেক উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে পুষ্টি যুগিয়ে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড় গঠনে বেশ উপকারী।
তাই দাঁতের সুস্থ্যতা, হাড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।
সতর্কতাঃ
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
সূত্রঃ stylesatlife.com, boldsky.com